১৪৭ দলের হঠাৎ আবির্ভাব: ‘কিংস পার্টি’র খেলার ফাঁদে কি নতুন চাল?

 

ছবিঃ দেশ টিভির সৌজন্যে

বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে হঠাৎ এক রহস্যময় দৃশ্যপট—১৪৭টি অচেনা, অজানা রাজনৈতিক দলের একযোগে নিবন্ধনের আবেদন। দৃশ্যত এটা গণতন্ত্রের বিস্তার মনে হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা দেখছেন এক গভীর ষড়যন্ত্রের ছায়া। এটি কি সত্যিই বহুদলীয় রাজনীতির নতুন সম্ভাবনা, নাকি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রকল্প—যার লক্ষ্য ‘নিয়ন্ত্রিত বিরোধিতা’ তৈরি করে ভোটযুদ্ধকে নির্বিষ করে ফেলা?


You may also like: বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৮ পূর্ববর্তী ন্যাক্কারজনক কয়েকটি নির্বাচনের ইতিহাস

 

ঘটনাপ্রবাহ: কাকতালীয় না পরিকল্পিত?

নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়মিত হলেও একসঙ্গে ১৪৭টি দল নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়া নজিরবিহীন। এদের বেশিরভাগের নাম-পরিচয় অজানা, কোনো মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম নেই, এমনকি অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয় নয়।

 

এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে—

  • কেন এই আবির্ভাব এখন?
  • কারা এই দলগুলোর পেছনে?
  • আর কোন লক্ষ্য পূরণে তারা নির্বাচনের আগে মাঠে নামতে চায়?

 

‘কিংস পার্টি’: নির্বাচনের গোপন কার্ড?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আনিস আলমগীর ও মনজুরুল আলম পান্নার অনুসন্ধানী রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে একটি সম্ভাব্য 'কিংস পার্টি'–র দিকে।
‘কিংস পার্টি’ বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন এক রাজনৈতিক গঠন যা প্রকৃত বিরোধী দল নয়, বরং ক্ষমতাকেন্দ্রের আশীর্বাদপুষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বী—যারা নির্বাচনী মাঠে থাকে, কিন্তু ক্ষমতার ভারসাম্য বদলায় না।

 

এই দলেরা সাধারণত কিছু উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়:

  • ভোট বিভক্ত করা (Vote Split Strategy)
  • বিরোধী জোটকে দুর্বল করা
  • নির্বাচনকে প্রতিযোগিতার আবরণ দিয়ে একচেটিয়া ফল নিশ্চিত করা

তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিত বিবেচনা করলে দেখা যায়, সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে ঐক্যমত পোষণের কাজেও এরা ব্যবহৃত হচ্ছে।


You may also read: ১৫ জনের শাসন বনাম ১৮ কোটির অধিকার

 

ড. ইউনুস ও বিকল্প রাজনীতির মোহ

রিপোর্টে আরও ইঙ্গিত রয়েছে, ড. ইউনুসকে ঘিরে এক নতুন রাজনৈতিক ফ্রেম গঠিত হচ্ছে—যেখানে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে নাম না লিখিয়েও হয়ে উঠেছেন একটি বিকল্প নেতৃত্বের প্রতীক।

 

প্রশ্ন হলো:

  • তাঁর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাকে কি ব্যবহার করা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সমীকরণ পাল্টাতে?
  • তিনি কি নিজে এগিয়ে আসছেন, নাকি তাঁকে সামনে রেখে অন্যরাই ছক কষছে?

 

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা: নিরপেক্ষ না কৌশলী?

নতুন দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে—এটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।
নিবন্ধন মানে কেবল দল গঠন নয়, এটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও বৈধতা পাওয়ার পদ্ধতি
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে:

  • এই ১৪৭টি দলের মধ্যে কয়টি বাস্তবসম্মতভাবে মাঠে কাজ করছে?
  • নির্বাচন কমিশন কীভাবে যাচাই করবে কে প্রকৃত রাজনৈতিক দল, আর কে কাগুজে প্রতিদ্বন্দ্বী?

যদি যাচাই-বাছাইয়ে পক্ষপাত দেখা যায়, কিংবা এদের নিবন্ধন সহজ করতে নিবন্ধন নীতিমালা বদলানো হয়, তবে এটা নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের বিপর্যয় ডেকে আনবে।


You may also read:  নির্বাচনী অনিশ্চয়তায় পদত্যাগের হুমকি ইউনূসের

 

রাজনৈতিক ইঞ্জিনিয়ারিং: পুরনো ফর্মুলা, নতুন রূপ?

এমন ঘটনার পেছনে একে বলা যায় রাজনৈতিক ইঞ্জিনিয়ারিং—যেখানে নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রিত, প্রভাবিত এবং পূর্বনির্ধারিত রাখার প্রয়াস চলে:

  • ২০০৮ সালেও দেখা গিয়েছিল কিছু অপ্রচলিত দলকে হঠাৎ নির্বাচনমুখী হতে।
  • সাম্প্রতিক ইতিহাসে বহু রাষ্ট্রেই এমন "ছায়া দল" গঠনের উদাহরণ রয়েছে—যাদের কাজ শুধু ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতার নাটক সাজানো’

 

উপসংহার: গণতন্ত্র না গণনাটক?

১৪৭টি নতুন দলের নিবন্ধন আবেদন নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের সম্ভাবনার প্রতীক হতে পারতো, যদি সবকিছু স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও বাস্তবধর্মী হতো।
কিন্তু যখন প্রশ্ন উঠে—

  • দলগুলো কার পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত?
  • কেন তারা একযোগে আবির্ভূত?
  • এবং নির্বাচনের ঠিক আগে কেন এমন পদক্ষেপ—

তখন সন্দেহ ঘনীভূত হয়:
এই আবেদনের ঢেউ কি সত্যিই গণতন্ত্রের জোয়ার, নাকি নিপুণ এক ষড়যন্ত্রের স্রোত?


You may also read:  রাষ্ট্র যখন বন্দী হয় বেআইনি শাসকের হাতে

 

পাঠকদের প্রতি জিজ্ঞাসা

আপনার মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কী ভাবেন—এই নতুন দলগুলোর আবির্ভাব কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও বিকল্পের প্রতীক, না কি এ এক অভিনব রাজনৈতিক প্রতারণা?


#কিংস_পার্টি #বাংলাদেশ_নির্বাচন #নতুন_দল #ড_ইউনুস #রাজনৈতিক_ইঞ্জিনিয়ারিং #নির্বাচন_২০২৫ #নির্বাচন_কমিশন

 

Post a Comment

أحدث أقدم