নির্বাচনী অনিশ্চয়তায় পদত্যাগের হুমকি ইউনূসের, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে

 

ড. মোহাম্মদ ইউনুস

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন, তারিখ ২৩ মে ২০২৫ অবলম্বনেঃ

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। গত বছরের গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক সরকার পতনের পর নিযুক্ত এই অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী এখন সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক শক্তির চাপে কার্যত কোণঠাসা।

বিশ্লেষকদের মতে, দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইউনূসকে আপৎকালীন নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, বাস্তবতা এখন ভিন্ন এক চিত্র তুলে ধরছে। সরকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউনূস ইতোমধ্যে পদত্যাগের ঘোষণার জন্য ভাষণ প্রস্তুত করেছিলেন, যদিও উপদেষ্টাদের পরামর্শে তা স্থগিত রয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক

গত বছর গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদলের পর অনেকেই আশাবাদী ছিলেন দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। তবে প্রায় নয় মাস পার হলেও সেই নির্বাচন এখনও দৃষ্টিগোচর নয়। বরং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব নিয়ে ইউনূস ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইউনূস মনে করছেন রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনী তার নীতিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। তিনি এর আগে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দিলেও নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা দেননি।

রাজনৈতিক বিরোধিতা ও চাপ

প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রথমে ইউনূসের সরকারের প্রতি সমর্থন জানালেও, নীতিগত মতবিরোধের কারণে বর্তমানে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ইউনূসের সরকার চট্টগ্রাম বন্দর বেসরকারিকরণ, মিয়ানমারের সীমান্তে মানবিক করিডোর খোলা এবং রাজস্ব বিভাগ পুনর্বিন্যাসের মতো ইস্যুতে বিএনপির বিরোধিতার মুখে পড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনূসের বড় দুর্বলতা হলো তার নিজস্ব রাজনৈতিক ভিত্তির অভাব। রাজনীতির অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি উপদেষ্টাদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মুবারার হাসান বলেন, “তিনি দক্ষ প্রশাসক হতে পারেন, কিন্তু রাজনীতিতে দৃঢ় নেতৃত্বের যে গুণাবলি প্রয়োজন, তা তার মধ্যে অনুপস্থিত।”

নতুন দল ও ছাত্র আন্দোলন

২০২৪ সালের গণআন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররা এখন বিভক্ত। কেউ ইউনূসের পাশে থাকলেও, কেউ কেউ তাকে সমর্থন করছে না। অন্যদিকে, ইউনূসের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম "ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি" নামে একটি নতুন দল গঠন করেছেন, যেখানে ছাত্রদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে।

নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ইউনূসকে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ করেছেন। “তিনি হতাশ, কারণ যেসব প্রতিশ্রুতি তাকে দিয়ে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল, এখন তা মানা হচ্ছে না,” বলেন নাহিদ।

সামনের পথ কী?

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং অপর পক্ষ বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি আরও জটিল হলে অস্থিতিশীলতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে এখন দুটো পথ—চাপের মুখে পদত্যাগ অথবা রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে বিশ্বাসে এনে সময় নিয়ে নির্বাচন আয়োজন। তবে ইতোমধ্যেই তার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না বলে বিভিন্ন মহল দাবি করছেন। কোন পথ তিনি বেছে নেবেন, সেটিই এখন জাতির মূল প্রশ্ন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস -এর প্রতিবেদন (২৩ মে ২৫) অবলম্বনে

Post a Comment

Previous Post Next Post