Advertise

দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধের ছায়া: ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ও পরাশক্তির ভূমিকায় গোপন খেলা

 

যুদ্ধের ছায়ায় দক্ষিণ এশিয়া: ভারতের কৌশল, পরাশক্তির খেলা ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ

— লুসিড ড্রিম


প্রতীকী ছবি

যুদ্ধ কখনো একক জাতির বিষয় নয়, বরং এটি একের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক শক্তির খেলা। ভারত ও পাকিস্তান যদি সরাসরি লড়াইয়ে নামে, তাহলে পর্দার আড়ালে ছায়া ফেলে তিনটি প্রধান পরাশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। পাকিস্তান ঐতিহাসিকভাবে আমেরিকার কৌশলগত মিত্র, আবার ভারতও এখন আমেরিকার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দ্বৈত অবস্থান আমেরিকাকে এমন এক নীতিতে নিয়ে গেছে, যেখানে তারা হয়তো তুরস্কের মাধ্যমে এই অঞ্চলে প্রক্সি খেলা চালিয়ে যেতে চায়।

রাশিয়া বরাবরই ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যুদ্ধ পরিস্থিতি তীব্র হলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আসন্ন ভারত সফর অনেক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। আর চীন? ১৯৬২ সালের ভারত আর বর্তমান ভারতের পার্থক্য চীন ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তাই এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো পক্ষ নেয়নি তারা।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারসাম্য তৈরি করতে ভারত নিজের কৌশলগত চালগুলি অত্যন্ত সচেতনভাবে চালাচ্ছে। পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতি ভারতীয় কৌশলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। পাকিস্তানকে আর্থিকভাবে দুর্বল করে তোলার অর্থ হলো—এই অঞ্চলে আমেরিকা ও চীনের প্রভাব হ্রাস পাওয়া।

রাশিয়া এখানে ভারতের জন্য একটি পরীক্ষিত মিত্র হতে পারে। ভারতের নতুন সামরিক প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষা ভবিষ্যতে দেশটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ছয়টি রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে—জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও গুজরাট। অপরদিকে, পাকিস্তানের তিনটি প্রদেশ—পাঞ্জাব, সিন্ধু ও আজাদ কাশ্মীর ভারতের সীমান্তবর্তী। যদি এই সংঘাতে ভারত আজাদ কাশ্মীর ও হাজি পীর গিরিপথ দখল করতে সক্ষম হয়, তাহলে তা হবে ভারতের একটি ঐতিহাসিক সাফল্য। সেই সঙ্গে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কাঠামো যতটা ধ্বংস হবে, ভারতের ততটা লাভ।

আর যদি এই সংঘাতের পরিণতিতে পাকিস্তানের ভেতরে বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়া ও সিন্ধুর মতো নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে, তাহলে তা হবে ভারতের জন্য কৌশলগত দিক থেকে এক মহাসাফল্য। এক্ষেত্রে আফগানিস্তানকেও নজরদারিতে রাখতে হবে—পাকিস্তানে সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কী প্রতিক্রিয়া আনবে, তা নির্ধারণ করতে পারে নতুন বাস্তবতা।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখনো স্পষ্ট নয়। তারা যদি শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়, তবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার আশঙ্কাও থেকে যায়। অন্যদিকে, রাশিয়া ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ালেও চীনের অবস্থান অনিশ্চিত। চীন যদি পাকিস্তানকে খোলামেলাভাবে সহায়তা করে, তাহলে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হবে; আর না করলে চীনের প্রভাবও প্রশ্নের মুখে পড়বে।

এই যুদ্ধ ভারতকে অনেকদিক থেকেই উপকারে আনতে পারে। এটি একধরনের সতর্কবার্তা—ভারতের প্রতিপক্ষদের জন্য। এখন ‘ফগ অফ ওয়ার’-এর স্তর থেকে যদি এই সংঘাত একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেয়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রে নতুন রঙ ছড়িয়ে পড়বে—যার ফলাফল দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ভূমিকার কথা স্বাভাবিকভাবেই আসবে, কিন্তু এই খেলায় ‘লাফালাফি’ করার সুযোগ তাদের থাকছে না বললেই চলে।

আমি যদিও ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধের বিপক্ষে, তবুও চাই পাকিস্তানের মতো বিভাজিত, সন্ত্রাসে নিমজ্জিত রাষ্ট্র ভেঙে পড়ে বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়া ও সিন্ধু নামে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিক। এটাই হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের পথ।

সত্য সবসময়ই সুন্দর।

(সম্পাদিত)

#IndiaPakistan #Geopolitics #SouthAsia #WarAnalysis #LucidDream


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url