![]() |
নেতাজির দেহরক্ষী কাম ড্রাইভার নিজামুদ্দিনকে প্রণাম করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী |
যেখানে ধর্ম নয়, শ্রদ্ধা মুখ্য হয়—সেখানে ইতিহাস মাথা নত করে
স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের বিপ্লবীদের অবদান যেমন বিশাল, তেমনি উপেক্ষিতও ছিল বহু বছর। এই ভুল শুধরানোর এক উজ্জ্বল নিদর্শন হলেন এক নামহীন অথচ বীর সৈনিক—মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন। তিনি ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ও গাড়িচালক। অথচ স্বাধীনতার পরে তাঁকে একেবারে ভুলে গিয়েছিল রাষ্ট্র।
নিঃশব্দে কেটেছে জীবনের অধিকাংশ সময়
১৯৪৭-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের ইতিহাসে নেতাজিকে যতটা স্মরণ করা হয়েছে, তাঁর সহযোগীদের অনেকেই হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অন্ধকারে। মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন তাঁদেরই একজন—একজন মুসলিম ভারতীয়, যিনি হিন্দু নেতাজির জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সাত দশকের বেশি সময় রাষ্ট্রের কোনো স্বীকৃতি পাননি। ছিলেন অভাবী, নিঃশব্দ, তবু আত্মমর্যাদাশীল।
🇮🇳“আজাদি কা অমৃত মহোৎসব” – ঘুম ভাঙে রাষ্ট্রযন্ত্রের
৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারত যখন "আজাদি কা অমৃত মহোৎসব" পালন করছে, তখন রাষ্ট্রযন্ত্রের দৃষ্টি পড়ে মোহাম্মদ নিজামুদ্দিনের দিকে। অবশেষে তাঁকে স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্বীকৃতি, ভাতা এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হয়। তবে যা ইতিহাসে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে, তা হলো—ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজ হাতে তাঁর পায়ে মাথা নত করে প্রণাম করা।
🙏প্রোটোকলের ঊর্ধ্বে উঠে মোদীর প্রণাম — এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত
রাজনীতির কড়াকড়ি প্রোটোকল পেরিয়ে যখন একজন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের এক প্রান্তে থাকা এক মুসলিম বৃদ্ধকে মাথা নত করে শ্রদ্ধা জানান, তখন তা শুধু আবেগ নয়—একটি ন্যায়বিচারের পুনরুদ্ধার। মোদীর সেই প্রণাম জানান দেয়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম কেবল হিন্দুদের নয়, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, সকল ধর্মের মানুষের সম্মিলিত লড়াই।
> এই দৃশ্য যদি বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে হতো—কী আমরা ভাবতে পারি, কোনো প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিরোধী ধর্মাবলম্বী বা অন্য মতাদর্শের এক উপেক্ষিত সংগ্রামীকে এইভাবে মাথা নত করে সম্মান জানাতেন?
এসব দেশে যেখানে ধর্মীয় পরিচয়ই মানুষের পরিচিতির একমাত্র মানদণ্ড, সেখানে মোদীর এই কাজ আসলে ভারতীয় গণতন্ত্র ও সেক্যুলার ইতিহাস চেতনার এক জীবন্ত প্রতীক।
মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন — একজন মুসলমান, একজন দেশপ্রেমিক, একজন ইতিহাসের নীরব রক্ষক
তাঁর ধর্ম ইসলাম, কিন্তু তাঁর বিশ্বাস ছিল ভারতবর্ষের মুক্তিতে। তিনি নেতাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন বৃটিশদের বিরুদ্ধে। আজ যখন কেউ “দেশভক্তি মানেই একটা বিশেষ ধর্মের একচেটিয়া সম্পদ”—এই ধরণের বয়ান তুলে ধরেন, তখন মোহাম্মদ নিজামুদ্দিনের জীবন তাদের ভুল প্রমাণ করে।
ইতিহাসের ছবিতে মানবতা ও শ্রদ্ধা
যে ছবিতে মোদী মাথা নত করে রয়েছেন নিজামুদ্দিনের সামনে, সেই ছবির ভাষা রাজনৈতিক নয়—সামাজিক, নৈতিক এবং ইতিহাসের ভাষা। এটি বোঝায়, ভারত সত্যিই এক বৃহত্তর সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আরো মনে করিয়ে দেয়, ভুল স্বীকার করে যে মাথা নত করে এবং ভুল শুধরে নেয় সেই মহান।
সারাংশ:
মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য ও নেতাজির দেহরক্ষী।
৭৫ বছরের উপেক্ষার পর সরকার তাঁকে খুঁজে বের করে সম্মানিত করে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজ হাতে তাঁকে প্রণাম করেন, যা ইতিহাসে বিরল।
এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক নিদর্শন—যেখানে ধর্ম নয়, অবদানের মূল্য দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে এমন ঘটনা বিরল, সেখানে প্রাধান্য পায় ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পক্ষ বা মতাদর্শ।
এই ঘটনার তাৎপর্য আমাদের শেখায়:
> "দেশপ্রেম কোনো ধর্মের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়। মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন—'বীর' হওয়ার জন্য জাত, ধর্ম, নাম কিছুই বাধা নয়। শুধু দরকার হয় নিষ্কলুষ আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম।"
আরও পড়ুন: (১) ভারতের ব্যাঙ্গালোরে শ্রী সত্য সাই হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা
(২) ভারত - বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের দেহে ভিডিও ক্যামেরা
Post a Comment