প্রতীকী ছবি |
উপক্রমণিকা
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ-বিদেশের
গনমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে- সেনাবাহিনী ক্ষমতা
নেবে, সামরিক আইন জারি হবে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সামরিক আইন জারি করলে
স্বাভাবিকভাবেই সংবিধান স্থগিত করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে সে পথ বন্ধ।
সংবিধান স্থগিত বা বাতিল করলে তার জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি।
বাংলাদেশের সংবিধান একটি গণতান্ত্রিক
ও প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে রচিত। এর মূল লক্ষ্য
জনগণের ভোটাধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ। তবে যখন দেশের নির্বাচিত
সরকার অনুপস্থিত এবং একটি অবৈধ বা অর্নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত
হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে—সংবিধানের আলোকে কী ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য? সংবিধান অনুযায়ী
সেনাবাহিনী কখন হস্তক্ষেপ করতে পারে? রাষ্ট্রপতির অধিকার ও সংকট সমাধানের পথ কি? সংবিধানের
আলোকে তার বিশ্লেষণ করবো এই নিবন্ধে।
সংবিধানের
আলোকে ক্ষমতা দখলের শাস্তি
বাংলাদেশ সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ ঘোষণা করে:
“কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, সংবিধান
স্থগিত, বাতিল বা পরিত্যাগ করিবার অথবা অন্য কোন উপায়ে তাহা অবমাননা করিবার
প্রচেষ্টা করিলে, তাহা রাষ্ট্রদ্রোহ হিসাবে গণ্য হইবে এবং উক্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী
দণ্ডযোগ্য হইবে।”
অতএব, সংবিধান স্থগিত বা ক্ষমতা
জবরদখলের চেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, যার সর্বোচ্চ শাস্তি
মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
রাষ্ট্রপতির
ক্ষমতা ও সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক ভূমিকা
অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পরামর্শপ্রাপ্ত হয়ে
কাজ করবেন, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিজ বিবেচনায় কাজ করতে পারেন, যেমন:
- অনুচ্ছেদ ৬২ ও ৬৩:
রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক
- অনুচ্ছেদ ১৪১(ক):
তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন যদি “যুদ্ধ, বহিরাগত আগ্রাসন বা অভ্যন্তরীণ
বিশৃঙ্খলা” দেখা দেয়।
বর্তমানে যখন একটি অর্নির্বাচিত
অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে এবং এর বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ—তখন
রাষ্ট্রপতির কর্তব্য হতে পারে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্থিতি রক্ষা।
সেনাবাহিনীর
ভূমিকা: স্বাধীন নয়, রাষ্ট্রপতির নির্দেশে
এটা মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে সামরিক বাহিনী কোনও পরিস্থিতিতেই নিজেরাই কাজ করতে পারে না। সশস্ত্র বাহিনীর স্বাধীন হস্তক্ষেপ নিজেই অসাংবিধানিক হবে, যা ধারা ৭ক-এর বিধানের আওতায় পড়বে। কিন্তু যদি সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন আসে, তাহলে দেশের প্রতিটি নাগরিক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য হল সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেওয়া।
তবে, রাষ্ট্রপতির স্পষ্ট সাংবিধানিক আদেশের অধীনে, সামরিক বাহিনী নিম্নলিখিত কাজ করতে পারে:
• জনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার,
• রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা নিশ্চিত করা,
• সাংবিধানিক কাঠামো রক্ষা করা।
সম্ভাব্য
সাংবিধানিক সমাধান
বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে একটি
সাংবিধানিক পথ হতে পারে:
- রাষ্ট্রপতি অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) অনুযায়ী জরুরি অবস্থা
ঘোষণা করা।
- বর্তমান অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙে দেয়া।
- সর্বদলীয় জাতীয় (অন্তর্বর্তী) সরকার গঠন করে নির্বাচনের
প্রস্তুতি নেওয়া।
- সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতির অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়
সহায়তা করা।
- নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
আয়োজনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তাছাড়া, সামরিক বাহিনীর সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণের কোনও সম্ভাবনা নেই। এখন প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্রপতি কি দেশের বর্তমান সংকট সমাধানের জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ নেবেন নাকি অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন?
উপসংহার
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব আজ একটি সংকটময় মুহূর্তে উপনীত। এই সময়ে সংবিধান লঙ্ঘন না করে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। সেনাবাহিনী কখনোই এককভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না, তবে রাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষার্থে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। এই পথেই দেশের আইন, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব।
Post a Comment