বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৮ পূর্ববর্তী ন্যাক্কারজনক কয়েকটি নির্বাচনের ইতিহাস

 

বিচারপতি আব্দুর রউফ


ভোট নিয়ে কম বেশি কারচুপি এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। এই উপমহাদেশে তো বটেই উন্নত বিশ্বেও ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগের কথা শুনতে পাই। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এর সর্বগ্রাসী রূপ লাভ করে নব্বই দশকের প্রথম দিকে মাগুরা উপ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। 


নির্বাচনের ফলাফল নিজের পক্ষের টানতে চেষ্টা করে সবাই। কেউ ক্ষমতায় বসে, কেউ ক্ষমতার বাইরে থাকলেও - যে যেভাবে সুযোগ পায়। কিন্তু তার মধ্যেও কিছু কারচুপি থাকে সীমাহীন, যা খুবই লজ্জাজনক, যা দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে।


কথাগুলো আসতো না। কিন্তু সম্প্রতি আওয়ামীলীগ সরকারের সময়কার ৩ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নামে মামলা এবং প্রাক্তন সিইসি কে এম নুরুল হুদাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অনেকেই নড়েচড়ে বসেছে - তাই পূর্বের কয়েকটি নির্বাচনের অভূতপূর্ব কারচুপির কথা নতুন প্রজন্মকে জানাতে এবং পুরোনোদের স্মরণ করিয়ে দিতে এই নিবন্ধ।

চলুন জেনে নেই মাগুরা ও পরবর্তী কয়েকটি নির্বাচন কেমন ছিল:


১. নির্বাচনে কারচুপির রোল মডেল ১৯৯৪ এর মাগুরা উপ নির্বাচন। প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়া হয়, নিজেরা ব‍্যালটে সিল দিয়ে প্রার্থীকে জয়ী করে আনা হয়। এতে দেশব‍্যাপী ব‍্যাপক আন্দোলন সৃষ্টি হয়, ফলশ্রুতিতে দেশে প্রথমবারের মতো কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে পর পর তিন বছরের জন্য নির্বাচন পরিচালনা করার বিধান করে আইন করা হয়।
সিইসি ছিলেন সফেদ শশ্রুমন্ডিত ছবির এই ভদ্রলোক বিচারপতি আব্দুর রউফ। তিনি নির্বাচনে দিন মাগুরায় ছিলেন, তার কাছে বার বার অভিযোগ দিয়ে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের, নির্বাচন কমিশনের নয় বলে তিনি তড়িঘড়ি মাগুরা ত‍্যাগ করেন।


২. ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ এর নির্বাচন। যে নির্বাচনে সংসদ টিকে ছিল দেড়মাস। 

সিইসি ছিলেন বিচারপতি সাদেক। লোকেরা তাকে "ছাদে-কালী" বলে বিদ্রুপ করতো।


৩. ২০০৪ সালে ঢাকা ১০ এর নির্বাচন, যে নির্বাচনে কারচুপি করে ফালুকে জেতানো হয়। ৫% ভোটার উপস্থিত না হলেও ফালুর প্রাপ্ত ভোট টোটাল ভোটের ৮০% দেখানো হয়।

সিইসি ছিলেন আবু সাঈদ। 


৪. ২০০৭ এর জানুয়ারি মাসের মিছামিছি নির্বাচন (তাতে তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে সেই নির্বাচনে সংসদের খাতায় কারো নাম ওঠেনি, কারণ সেটা নির্বাচন বলে গণ্য হয়নি)। 

সিইসি ছিলেন বিচারপতি আজিজ। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শ্লোগানের উৎপত্তি করেছিলেন "আইজ্জ্য তুই বাইত যা"।


এরপর আওয়ামীলীগ প্রায় ষোলো বছর দেশ চালিয়েছে। পূর্বের কোনো সিইসির বিরুদ্ধে কি কোনো মামলা হয়েছে বা কে এম নুরুল হুদার মতো কাউকে অপমান করা হয়েছে?


এখন যে নজির সৃষ্টি হলো, ইতিহাসের কুখ্যাত সেসব নির্বাচনে যারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করবেন? মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে প্রাথমিক বিচার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন?


নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তার জবাবদিহিতা একমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে। নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক ক্ষমতাও থাকে নির্বাচন কমিশনের হাতে। পিঠটান করে দাঁড়ালে কোনো সরকার তার উপর ছড়ি ঘোরাতে পারে না। ইতোপূর্বে এমন অনেকবার দেখা গেছে। তবুও পারিপার্শ্বিকতা অনুকূল না প্রতিকূল তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। 


এখন যেমন অনেক উপরস্থের কথা অধীনস্থরা শুনছেন না বা পালন করতে পারছেন না, কারণ, প্রোপার চ্যানেলের বাইরে থেকেও কিছু নির্দেশ যায়। সেই অজুহাত দেখিয়ে অনেক নির্দেশ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগও নেয় হয়তো অনেকে। তাই সবাইকে সংযত হতে অনুরোধ করছি।

Post a Comment

Previous Post Next Post