সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD) ব্যবহার করে কীভাবে পুরনো বা ধীরগতির ল্যাপটপের গতি কয়েক গুণ বাড়ানো যায়, তা জানুন এই আর্টিকেলে।

 

প্রযুক্তির অগ্রগতিতে হার্ড ড্রাইভের বিবর্তন

আগে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে ডেটা সংরক্ষণের জন্য প্রধানত HDD (Hard Disk Drive) ব্যবহার হতো। কিন্তু এই ড্রাইভগুলো যান্ত্রিক ডিস্ক ও ঘূর্ণনশীল অংশের ওপর নির্ভর করে কাজ করে, যার ফলে ডেটা লোডিং, বুটিং এবং সফটওয়্যার চালু করতে সময় বেশি লাগে। আধুনিক যুগে এই সমস্যা সমাধানে এসেছে SSD (Solid State Drive) – একটি দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং শক্তি সাশ্রয়ী স্টোরেজ প্রযুক্তি।

 

SSD কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

SSD (সলিড স্টেট ড্রাইভ) হলো এক ধরনের স্টোরেজ ডিভাইস যা ফ্ল্যাশ মেমোরির মাধ্যমে ডেটা সংরক্ষণ করে। এতে কোনো ঘূর্ণায়মান ডিস্ক বা যান্ত্রিক অংশ থাকে না। তাই ডেটা পড়া ও লেখা হয় আলোর গতিতে।

 

SSD লাগালে ল্যাপটপের যেসব পরিবর্তন আপনি অনুভব করবেন

1.   দ্রুত বুট টাইম:  HDD ব্যবহার করলে উইন্ডোজ বুট হতে যেখানে ৩০–৪০ সেকেন্ড লাগত, SSD ব্যবহার করলে তা কমে মাত্র ৫–১০ সেকেন্ডে দাঁড়ায়।

 

1.   সফটওয়্যার ও অ্যাপ লোড টাইম কমে যায়:  ব্রাউজার, অফিস অ্যাপস, ফটো/ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার কয়েক গুণ দ্রুত খুলে যায়।

 

2.   মাল্টিটাস্কিং সহজ হয়:  একসাথে একাধিক সফটওয়্যার চালাতে গতি কমে না, কারণ SSD তথ্য দ্রুত পড়তে এবং লিখতে পারে।

 

3.   গেমিং পারফরম্যান্স বৃদ্ধি:  গেম লোডিং টাইম, ম্যাপ ট্রানজিশন এবং টেক্সচার রেন্ডারিং SSD-তে দ্রুত হয়।

 

4.   কম শব্দ এবং কম গরম:  SSD-তে যান্ত্রিক অংশ না থাকায় কোনো শব্দ হয় না এবং এটি তুলনামূলকভাবে কম গরম হয়।

 

5.   ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ে:  SSD বিদ্যুৎ খরচ কম করে, ফলে ল্যাপটপের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী হয়।

 

কোন ধরনের SSD ল্যাপটপে ব্যবহার করবেন?

SSD মূলত তিন ধরনের হয়:

1. SATA SSD – অধিকাংশ পুরনো ল্যাপটপে এটি সহজে ফিট করে। গতি HDD থেকে অনেক বেশি হলেও NVMe SSD’র তুলনায় ধীর।
2. NVMe (M.2) SSD – আধুনিক ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয়। এটি PCIe ইন্টারফেস ব্যবহার করে, যা SATA থেকে প্রায় ৫ গুণ দ্রুত।
3. External SSD – যারা ল্যাপটপের ভিতরে SSD ইনস্টল করতে চান না, তাদের জন্য USB বা Thunderbolt ইন্টারফেসে চলা বাহ্যিক SSD হতে পারে ভালো সমাধান।

 

SSD ইনস্টলেশন কি সহজ?

হ্যাঁ, বেশিরভাগ ল্যাপটপে SSD ইনস্টল করা যায় খুব সহজে। সাধারণত একটি স্ক্রু খুলে পুরনো HDD খুলে সেখানে SSD বসানো যায়। তবে M.2 NVMe ইনস্টল করতে হলে মাদারবোর্ডে স্লট থাকা দরকার। যদি আপনি নিজে না করতে পারেন, কোনো কম্পিউটার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন।

 

পুরনো ল্যাপটপেও কি SSD কাজ করবে?

অবশ্যই! পুরনো ল্যাপটপে SATA SSD লাগানো যায়, যা ল্যাপটপকে নতুন প্রাণ দেয়। অনেক সময় ৭-৮ বছর পুরনো ল্যাপটপ SSD দিয়ে এতটাই দ্রুত হয় যে নতুন কিনতে মন চায় না!

 

মূল্য এবং কনফিগারেশনের দিক

• ২৫৬ জিবি SATA SSD – ~২৫০০–৩০০০ টাকা
• ৫১২ জিবি SATA SSD – ~৪৫০০–৫৫০০ টাকা
• ২৫৬ জিবি NVMe SSD – ~৩৫০০–৪৫০০ টাকা
• ৫১২ জিবি NVMe SSD – ~৬০০০–৭০০০ টাকা

(দাম ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ড ও দোকানে ভিন্ন হতে পারে)

 

উপসংহার

আপনার ল্যাপটপ ধীর গতির? নতুন কেনার কথা ভাবছেন? আগে একটা SSD লাগিয়ে দেখুন। ১৫-২০ মিনিটের ছোট্ট এই আপগ্রেড আপনার ল্যাপটপের গতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি শুধু একটি হার্ডওয়্যার পরিবর্তন নয়, বরং এটি আপনার কাজের অভিজ্ঞতাই বদলে দিতে পারে।

 

অতিরিক্ত টিপস:
যদি বাজেট কম থাকে, তাহলে SSD-এর সাথে পুরনো HDD-ও সেকেন্ডারি স্টোরেজ হিসেবে রাখতে পারেন (যদি ল্যাপটপে সেই সুবিধা থাকে)। এতে গতি ও স্টোরেজ দুইই থাকবে।