লিখেছেনঃ আফিফা হোসেন অন্তরা
সম্প্রতি ড. ইউনুস লন্ডন সফরে গিয়ে জনাব তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। মিঃ ইউনুসের লন্ডন সফর নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে, তার সফরের স্বপক্ষে কোন যুক্তিই কেউ দিচ্ছেন না। আমি এ পর্যন্ত যতগুলো আলোচনা শুনেছি, যেমন- ইয়াসির ইয়ামিন, শওগাত আলী সাগর, ড. জাহেদ উর রহমান, মাসুদ কামাল, কাজী রুনা, গোলাম মাওলা রনি, কারো আলোচনায়ই ইউনুসের লন্ডন সফরের পক্ষে কোন যুক্তি দিতে শুনিনি।
১২ জুন, ২০২৫, ১৫:২৬ টায় কালের কণ্ঠের অনলাইন ডেস্কে গোলাম মওলা রনির লেখার শিরোনাম “ড. ইউনূসের এই সফরের কোনো যৌক্তিকতা ছিল না”, একইদিন ১৭:২৪ টায় কালের কণ্ঠের অনলাইন ডেস্কে তারই অপর একটি লেখার শিরোনাম “আমি ভেবে পাইনি ড. ইউনূস কেন ইংল্যান্ডে গেলেন”। রনির লেখার শিরোনাম দুটি দেখে আমার মতামতটি প্রকাশের তাগিদ অনুভব করেছি। কারণ রনির ভাবনায় আসে না এমন কোন বিষয় আছে মর্মে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে! তার কথনে মনেহয়, সে সর্ব বিষয়ে ওয়াকিবহাল।
আমার মতামতের শিরোনাম হলো, তারেক রহমানের সাথে ইউনুসের সাক্ষাৎ, মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ঝড়ের পূর্বাভাস! মিঃ ইউনুস দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হলে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ জমে। ১৩ জুন, ২০২৫ লন্ডনে মিঃ ইউনুস ও তারেক রহমানের দেড় ঘন্টা বৈঠকের মধ্যে দিয়ে ঐ আকাশে ঝড় উঁকি দিয়েছে। সেই ঝড় যেকোনো সময়ে আঘাত হানতে পারে এবং বাংলাদেশের রাজনীতি লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে। ক্যানো বলছি?
মিঃ ইউনুসের লন্ডন যাওয়ার মূল কারণই হলো মিঃ তারেকের সাথে সাক্ষাৎ করা। কারণ সেনাবাহিনী প্রধান মিঃ ওয়াকার উজ জামান যেদিন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন, সেদিন থেকেই মিঃ ইউনুসের ভিতরে একটা অস্বস্তি শুরু হয়েছে। সেই অস্বস্তি দূর করতে সেনাপ্রধানকে একঘরে করা হলো তাঁর উদ্দেশ্য। জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে সেনাপ্রধানের সূর এবং বিএনপির সূর একই হবে, সেটি ইউনুস মানতে পারছিলেন না।
এখন প্রশ্ন হলো, ঝড়ের পূর্বাভাস কোথায়?
২০০৬ সালে নির্বাচন প্রশ্নে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশৃঙ্খল অবস্থা হলে ১১ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অপসারণ করে মিঃ ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। তখন সেনাপ্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। ১২ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ০৭ মার্চ, ২০০৭ তারিখে দুর্নীতির মামলায় তারেক রহমানকে তার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্থ মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১৩টি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় ও তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। গ্রেফতারের পর তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়, তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে রাখা হয়। প্রায় আঠারো মাস কারান্তরীণ থাকার পর ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামিনে মুক্তি লাভ করেন। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে বিশেষ কারাগার থেকে বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পুত্র তারেক রহমানকে দেখতে যান। সেদিন রাতেই তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারপর লন্ডনের সাউথ ওয়েলিংটন হসপিটাল ও লন্ডন হসপিটালে তার চিকিৎসা শেষে আর দেশে ফেরেননি, লন্ডনেই বসবাস করছেন।
কথিত আছে, তারেক তাঁর মুক্তি ও চিকিৎসার্থে বিদেশ গমনের জন্য তৎকালীন সেনা কর্মকর্তাদের কাছে ভবিষ্যতে কোনদিন রাজনীতি করবেন না মর্মে একটি মুচলেকা দিয়েছিলেন। তারেক রহমানের নিকট থেকে মুচলেকা নেয়া এবং তাঁকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করণের পিছনে একটি কারণ ছিলো। সেটি হলো, তারেক রহমান সেনাবাহিনীর একজন জেনারেলের সন্তান হলেও এবং সেনানিবাসে বড় হলেও সেনাবাহিনীর প্রতি ছিলো তার তাচ্ছিল্য মনোভাব। কথিত আছে, বিএনপি যখন দেশের ক্ষমতায় তখন প্রচন্ড ক্ষমতাধর তারেক রহমানের কাছে একজন জেনারেল সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে তারেক চরম অপমান করেছিলেন। সেই জেনারেলকে বসতে না বললে তিনি নিজ থেকেই বলেন, আমি কি একটু বসতে পারি? উত্তরে তারেক রহমান বলেছিলেন, আপনি কর্মচারী, আমার সামনে আপনার বসার সাহস হলো কি করে? সেই অপমানের কথা সেই জেনারেল সেনা দপ্তরে এসে সহকর্মীদের বলেছিলেন। সেকারণেই তারেক রহমান শারিরীক নির্যাতনের শিকার হন এবং তাকে রাজনীতি করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছাড়তে হয়। নির্যাতন করা এবং মুচলেকা নেয়ার কারণে সেনাবাহিনীর প্রতি তারেক রহমানের ক্রোধ আছে, সেই সুযোগটা মিঃ ইউনুস কাজে লাগিয়ে নির্বাচন প্রশ্নে সেনাপ্রধানের সূর এবং বিএনপির সূর যেনো একই না হয় সেটি তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।
মিঃ ইউনুস সফল হয়েছেন। এখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো, যারা নির্বাচন করবে, তারা কেউই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না। অতএব ইউনুস মনে করছেন, সেনাপ্রধানের চাওয়াটি হাস্যকর হয়েছে, সেনাপ্রধান হাল্কা হয়েছেন। এখানেই ঝড় দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ তথা দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য সর্বসাধারণের আকাংখার প্রতীক হয়ে উঠেছে সেনাবাহিনী। এমন সময়ে সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা, ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক কর্তৃক সেনাবাহিনীকে দিয়ে কুরবানীর বর্জ্য পরিষ্কার করানোর বক্তব্য দিয়ে সেনাবাহিনীকে অপমানিত করা, বিদেশি নাগরিক খলিলুর রহমানকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বানিয়ে সেনাবাহিনীর সাথে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া বাধানোর কার্যক্রম মোটেই ভালো মনে হচ্ছে না। এটিই একটি ঝড়, যদি ঝড়টি আকাশেই নিমজ্জিত হয়ে যায়, তাহলে ভালো, আর যদি ঝড়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আঘাত হানে, তাহলে খুবই বেদনাদায়ক।
লেখকঃ
@Afifa Hossain Ontora (আফিফা হোসেন অন্তরা)
Post a Comment