![]() |
ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ (১০ জুলাই ১৯২৫) |
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শতবর্ষী ডাঃ মাহাথির মুহাম্মদ বলেছেন, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক টাইগার। আর আজকের বাংলাদেশ ধ্বংসের মুখে। বিস্তারিত বিশ্লেষণ এই নিবন্ধে।
ভূমিকা
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক রদবদল
ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনা তীব্র হয়েছে। মালয়েশিয়ার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক শতবর্ষী ডা. মাহাথির মুহাম্মদের সাম্প্রতিক
মন্তব্যে নতুন করে আলোচনায় এসেছে শেখ হাসিনা, ডঃ ইউনুস ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।
তাঁর বিশ্লেষণ যেমন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছে, তেমনি বর্তমান
পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগও তুলে ধরেছে। এই নিবন্ধে তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি
আমরা বাংলাদেশ পরিস্থিতির সার্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরার চেষ্টা করব।
আরও পড়ুনঃ ২৪ জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশের অস্থিরতা
শেখ হাসিনা:
“Emerging Tiger” এর রূপকার
ডা. মাহাথির মুহাম্মদ তাঁর বক্তব্যে স্পষ্টভাবে
উল্লেখ করেছেন যে, শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগার’
হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তিনি বলেন—
“আপনি শেখ
হাসিনার অনেক সমালোচনা করতে পারবেন, কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে শেখ হাসিনার
বিকল্প আর কাউকে খুঁজে পাবেন না।”
বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক,
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (IMF) সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা গত এক যুগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
উন্নয়নকে প্রশংসিত করেছে। মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, বিদ্যুৎ
উৎপাদন ও অবকাঠামো— প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ অগ্রগামী ছিল।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতুর মতো
বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহস ও কৌশল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের কণ্ঠকে জোরালো
করেছিল। মাহাথির বলেন:
“প্রাকৃতিক
দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে
যে শক্তিশালী অর্থনীতি উপহার দিয়েছিলেন, তা অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব না।”
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়া
“মাহাথির বনাম
ইউনুস” সময়সীমা: ১০ মাসে ধ্বংস?
ডা. মাহাথির মুহাম্মদ বর্তমান অস্থায়ী
শাসনব্যবস্থা তথা ইউনুস ঘনিষ্ঠ প্রশাসনের প্রতি কঠোর সমালোচনা করে বলেন:
“মাত্র দশ
মাসে ইউনুস দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলেছেন।”
যদিও ড. ইউনুস সরাসরি সরকারপ্রধান নন,
তবুও তাঁর নেপথ্য ভূমিকা, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে তাঁর সংশ্লিষ্টতা
নিয়ে মাহাথিরের বক্তব্য ইঙ্গিতপূর্ণ। বর্তমান শাসনের আর্থিক অব্যবস্থাপনা, মুদ্রাস্ফীতি,
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং বিনিয়োগ হ্রাস— সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুনঃ ইউনূস-তারেক লন্ডন বৈঠক
মাহাথিরের ভবিষ্যদ্বাণী আরও ভয়াবহ:
“গত দশ মাসে
ইউনুস সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি করেছেন, তা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের কমপক্ষে
আরো বিশ বছর সময় লাগবে।”
জনগণের আস্থা,
বিদেশ নির্ভরতা ও ষড়যন্ত্রের ছক
ডা. মাহাথির একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে
শুধুই অর্থনীতি নয়, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও জন-মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণেও গভীর কথা বলেছেন।
তিনি বলেন:
“যখন জনগণ
সরকারের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং বিদেশীদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, তখনই ষড়যন্ত্র
বাস্তবায়ন সহজ হয়।”
এই কথা নিছক রূপক নয়। তিনি স্পষ্টতই ইরাক,
লিবিয়া, সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে বলেন— জনগণের বিভ্রান্তি আর বিদেশীদের
নেপথ্য ভূমিকা কিভাবে একটি দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
তিনি আহ্বান জানান:
“যেদিন দেশের
জনতা সঙ্গবদ্ধ হয়ে বিদেশীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে, সেইদিন সেদেশ আন্তর্জাতিক
ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারবে।”
আরও পড়ুনঃ নগদ কেলেঙ্কারি: ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার ভূমিকাকে ইতিহাস কীভাবে দেখবে?
শেখ হাসিনাকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকলেও
ডা. মাহাথির স্পষ্ট করে দিয়েছেন—
“ব্যক্তি শেখ
হাসিনার সমালোচনা করা যায়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করা সম্ভব না।”
রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর দক্ষতা, কূটনৈতিক
ভারসাম্য, উন্নয়ন দর্শন ও আন্তর্জাতিক প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা তাঁকে ব্যতিক্রমী করে
তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করাও
যে সহজ কাজ নয়, তা মাহাথিরের বক্তব্যে উঠে এসেছে।
আরও পড়ুনঃ ১৫ জনের শাসন বনাম ১৮ কোটির অধিকার
উপসংহার
ডা. মাহাথির মুহাম্মদের বক্তব্য আমাদের
একটি বড় বাস্তবতা দেখিয়ে দেয়— রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও সত্যকে অস্বীকার করা যায় না। শেখ
হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। আজ যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক
সংকটের মুখে দেশ, তা কাটিয়ে উঠতে কেবল একজন পরিচিত আন্তর্জাতিক মুখ নয়, প্রয়োজন জনআস্থার,
অভ্যন্তরীণ ঐক্যের এবং একটি দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের।
বাংলাদেশের জনগণের সামনে এখন কঠিন প্রশ্ন:
তারা কি আবার নিজেদের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনবে, নাকি বিদেশি আশ্বাসের ফাঁদে পড়ে দেশের
ভবিষ্যৎকে আরও বিপন্ন করবে?
আরও পড়ুনঃ দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট
إرسال تعليق