রাজবাড়ী জেলার কীর্তিমানদের কথা (পর্ব-১) - খোন্দকার আব্দুল হান্নান

 রাজবাড়ী জেলার কীর্তিমানদের কথা (পর্ব-১) 

লেখকঃ খোন্দকার আব্দুল হান্নান 

_________________________________________

কৈফিয়ৎ

“২০১৭ সালে আমার একটি লেখার সূত্র ধরে লেখক রাজবাড়ী জেলার যে দুইজন বিস্মৃতপ্রায় কীর্তিমানের কথা লিখেছিলেন সেই লেখাটি নিচে তুলে ধরা হলো। এতে প্রসঙ্গের বাইরের দুয়েকটি কথা এসে যেতে পারে, সেজন্যে দুখিত! পরবর্তীতে আমার সাধ্যেমত রাজবাড়ী জেলার অন্যান্য কীর্তিমানদের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করবো”।

- বিনীত আতাউর রহমান খান

________________________________


মূল লেখাঃ

“লেখা চলছে আতাউর রহমান খানের 'আমার ইউনিয়ন পরিষদে মহিলা চেয়ারম্যান' শিরোনামে। লেখককে ধন্যবাদ—এমন একটি বিষয়ের সূচনা করার জন্য। প্রসঙ্গক্রমে এসেছে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার (বর্তমানে কালুখালী উপজেলা) বেলগাছি এবং রতনদিয়ার চৌধুরী পরিবার, আলীমুজ্জামান চৌধুরী, রশিদ চৌধুরী, ঘোড়ামারা মামলা, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ, রতনদিয়া রজনীকান্ত স্কুল ইত্যাদি।“

টুকরা টুকরা প্রতিটি বিষয়ই একটি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ উপাখ্যান হতে পারে --সেখানে সবগুলো বিষয়ের ‘পর পূর্ণ তথ্য পরিবেশন একটি অসম্ভব ব্যাপার।

 

আলিমুজ্জামান চৌধুরী


চৌধুরী পরিবারের শ্রেষ্ঠ সন্তান আলিমুজ্জামান চৌধুরী এখন বিস্মৃতপ্রায় ব্যক্তিত্ব। অবিভক্ত ফরিদপুর জিলার তিনিই প্রথম মুসলিম গ্রাজুয়েট। ফরিদপুর জিলা বোর্ডের প্রথম মুসলিম প্রেসিডেন্ট। জিলা বোর্ডের সভাকক্ষ আলিমুজ্জামান হল, শহরমধ্যে বিশাল সেতু আলিমুজ্জামান ব্রিজ এবং বেলগাছি-ফরিদপুর (৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ) আলিমুজ্জান সড়ক আজও তাঁর নাম স্মরণ করিয়ে দেয়।

 

ঢাকার নওয়াবদের অতি-আগ্রহে ১৯০৫ সনে ব্রিটিশ রাজের সিদ্ধান্তে বঙ্গভঙ্গ হয়। রাজধানী কলকাতাসহ বাংলার প্রতিটি জিলায় বঙ্গভঙ্গ রোধের আন্দোলন দাবানলের মতো জ্বলে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখেন 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি'- এখন যেটা আমাদের জাতীয় সংগীত। বঙ্গভঙ্গ-রোধের সেই আন্দোলনে একমাত্র মুসলিম নেতা যিনি যুক্ত ছিলেন তিনি আলিমুজ্জামান চৌধুরী।

 

সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ জনদরদী একজন নেতা ছিলেন আলিমুজ্জামান চৌধুরী। তাঁর অকাল মৃত্যু দেশের জন্য, পশ্চাদপদ মুসলিম সমাজের জন্য এবং আলোচ্য এলাকার জন্য প্রভূত ক্ষতি ঘটালো।


রশিদ চৌধুরী





আলিমুজ্জামান চৌধুরীর পর ওই পরিবারের আর একজন কৃতী পুরুষ রশিদ চৌধুরী। তাঁর শিল্পকর্মের খ্যাতি শুধু দেশ বা উপমহাদেশ জুড়ে নয় বরং পৃথিবী ব্যাপী তাঁর সুনাম আজও ছড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় আমি গণভবনের সভাকক্ষগুলোতে দেওয়ালে-দেওয়ালে তাঁর চিত্রকর্ম দেখেছি।

 

কলকাতার আশুতোষ চিত্র জাদুঘরে কলার নিরীক্ষনে, মাদ্রিদে ভাস্কর্যকলায় এবং প্যারিসে বুনন শিল্পকলায় তিনি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশববিদ্যালয়--প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে তিনি কলা বিদ্যার একজন দুর্লভ শিক্ষকের খ্যাতি অর্জন করেন। দুর্ভাগ্য বশত তিনিও অকাল মৃত্যু বরন করেন।

 

আলিমুজ্জামান চৌধুরী ও রশিদ চৌধুরী - চাচা ও ভাতিজা। রশিদ চৌধুরীর পিতার নাম ইউসুফ হোসেন চৌধুরী। অনেকেই হয়তো তাকে চেনেন না, কারণ বিদেশে শিক্ষা গ্রহন, কর্মব্যাস্ততা ইত্যাদি কারণে তিনি নিজ এলাকায় বেশি অবস্থান করার সুযোগ পাননি। তাই নতুন প্রজন্মের চেনার জন্য পরিচয়টা আরেকটু সহজ করা যেতে পারে; 

রশিদ চৌধুরী ছিলেন কালুখালী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ‘আলিউজ্জামান চৌধুরী (টিটো চৌধুরী)’র পিতা নাজির হোসেন চৌধুরী (নিলু চৌধুরী)'র ৯ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়।

 

রশিদ চৌধুরীর একটি চিত্রকর্ম

যাইহোক, চৌধুরী পরিবারের এই দুই কৃতী মনীষী -দুজনে মিলে প্রায় শতাব্দী জুড়ে অবস্থান। পরিবারের মধ্যে অবস্থান করেও পরিবার থেকে তাঁরা ছিলেন ভিন্ন। দেশের গণমানুষের কাছে একজন ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ পুরুষ আর অন্য জন বিদগ্ধ সমাজের কাছে তাঁর পান্ডিত্যের কারণে নমস্য ব্যক্তি।

 

লেখক পরিচিতিঃ

[বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার আব্দুল হান্নান রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান। পেশায় প্রকৌশলী। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) থেকে পাশ করা রতনদিয়া ইউনিয়নের প্রথম প্রকৌশলী।

মুক্তিযুদ্ধকালিন তিনি প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রবাসে থাকাকালিন “শরনার্থী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী” নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন এবং তার নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে প্রবাস থেকে ফিরে সংগঠনটি “স্মারণিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী” নামধারণ করে এবং ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত সেটি চালু ছিলো।

স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মণির নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির তিনি প্রতিষ্ঠাতা সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭৩ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব উৎসব-১০ এ বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।]

_________________________________________

(স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় মূল লেখার সাথে সামান্য সংযোজন-বিয়োজন করতে হয়েছে)

(চলবে)

 


Post a Comment

أحدث أقدم