মুক্তিযূদ্ধের লোগো |
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল স্বাধীনতার জন্য একটি সুসংগঠিত, গণভিত্তিক ও সুদীর্ঘ
রাজনৈতিক সংরাম এবং সবশেষে জণগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি নেতৃত্বাধীন একটি সশস্ত্র
সংগ্রাম। সেই ইতিহাসকে ধারণ করেই গঠিত হয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়’। কিন্তু
সম্প্রতি জানা গেছে, এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে “জুলাই গণঅভ্যুত্থান
অধিদপ্তর” নামে একটি অধিদপ্তর খোলা হয়েছে। বিষয়টি শুধু বিতর্কিত নয়, বরং
জাতির ইতিহাস ও রাষ্ট্রীয় চেতনাকে বিভ্রান্ত করার আশঙ্কা জাগায়।
জুলাই ২৪ আন্দোলন কী?
এটি এমন একটি রাজনৈতিক ধারা, যারা অভ্যুত্থান ঘটিয়েই স্বাধীনতার স্থপতি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা জাতির
জনকের ভাস্কর্যকে অসম্মান করে, ভেঙে ফেলে। স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্নগুলো একে একে ধংস
করতে থাকে এবং এখনও করছে। তাদের মধ্যে কেউ আবার মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভাইয়ে-ভাইয়ে ঝগড়া’র
সাথে তুলনা করে। মনে করে, মুক্তিযুদ্ধ কোনো নির্দিষ্ট নেতৃত্বের মাধ্যমে হয়নি, এমনি
এমনি হয়ে গেছে। তাই তারা নতুন করে দেশ স্বাধীন করেছে, পুরনো সবকিছু ‘রিসেট’ বাটন
চেপে মুছে দিয়েছে।
এসব বক্তব্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত ৬
দফা, উনসত্তরের গণ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর সাতই ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধকালীন
অস্থায়ী সরকার, ভারতের সহায়তা, মুজিবনগর সরকার—সব কিছুই প্রমাণ করে যে মুক্তিযুদ্ধ
ছিল একটি পরিকল্পিত ও নেতৃত্বাধীন আন্দোলন, যাতে জণগনের সতস্ফুর্ত অংশগ্রহন ছিলো।
মুক্তযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মূল দর্শন
এই মন্ত্রণালয়ের কাজ:
- মুক্তিযোদ্ধাদের
স্বীকৃতি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা
- শহীদ পরিবারের
মর্যাদা রক্ষা করা
- মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাসকে সংরক্ষণ ও প্রচার করা
- জাতির জনকের
নেতৃত্বকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা
এখন প্রশ্ন হলো, যে আন্দোলন সেই ইতিহাসের মূল স্তম্ভকেই অস্বীকার করে, তাকে
একই মন্ত্রণালয়ে অধিদপ্তর করা হলো কেনো?
নীতিগত ও প্রশাসনিক অসঙ্গতি
এই সিদ্ধান্ত নানাবিধ সমস্যার জন্ম দিতে পারেঃ
- নৈতিক
দ্বিচারিতা: রাষ্ট্র নিজেই একদিকে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, আরেকদিকে
তাঁর বিরোধী মতবাদকে সমর্থন করছে।
- প্রশাসনিক
দ্বন্দ্ব: একই মন্ত্রণালয়ে বিপরীত বয়ান স্থান পাওয়ায় ভবিষ্যতে সংঘাত সৃষ্টি
হতে পারে।
- রাজনৈতিক
বিভ্রান্তি: জনগণের কাছে রাষ্ট্রের ইতিহাস বিষয়ক অবস্থান অস্পষ্ট হয়ে যায়।
বিকল্প যা হতে পারতো
সরকার যদি গবেষণার নামে এ আন্দোলনের উপস্থাপন জরুরি মনে করে, তবে সেটিকে
শিক্ষা বা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাখা যেত। ইতিহাস বিকৃতি নয়, বরং
ঐতিহাসিক আলোচনার জন্য উপযুক্ত পরিসর তৈরি করাই হতো সঠিক পন্থা।
পরিশেষেঃ
একই ছাদের নিচে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী ব্যাখ্যা—এটি শুধু
প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অসতর্কতার পরিচায়ক। একটি জাতির
আত্মপরিচয়ের ভিত্তিকে দুর্বল করার যেকোনো উদ্যোগই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাসকে
প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ইতিহাস বিকৃতি রুখতে সচেতন থাকা উচিৎ।
পাঠকগনকে মতামত দিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
যথার্থ লিখেছেন! সবাই আসলে রাজনীতিতে তার একটা আদর্শ রেখে রাজনীতি করছে তা স্পষ্ট। যেমন: আওয়ামিলীগ বা বিএনপির পুঁজি মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু আর জিয়া!!
ردحذفতাই এরাও সস্তা হলেও পুঁজিই খুঁজে বেড়াচ্ছে। এজন্যই রাষ্ট্রের সব অঙ্গ নিয়েই ছেলেখেলা চলছে।।
অথচ জনগণের কল্যাণে দূর্নীতিমুক্ত, সুস্থ সমাজ ব্যবস্থাই পুঁজি হতে পারতো।।
إرسال تعليق