মানব দেহের নিগুঢ় রহস্য
প্রতীকী ছবি |
মানব শরীরের ৬০ ভাগ হচ্ছে হাইড্রোজেন। শুধু তাই নয়, এই মহাবিশ্বের ৯০ শতাংশই হাইড্রোজেন দিয়ে তৈরি। প্রায় সব জীবিত প্রাণীর মধ্যে এর উপস্থিতি আছে, এমনকি নক্ষত্র ও সূর্যেও হাইড্রোজেন আছে। এই হাইড্রোজেন দিয়েই মানুষ আবার হাইড্রোজেন বোমা বানিয়েছে।
হাইড্রোজেন বর্ণহীন, গন্ধহীন এবং স্বাদহীন গ্যাস। এই গ্যাস মানুষ খালি চোখে দেখতে পারেনা। ১৫ শতকে সুইডিশ বিজ্ঞানী থিওফ্রাসটাস প্যারাসেলসাস সর্বপ্রথম হাইড্রোজেন আবিষ্কার করেন। তিনি বলেন, 'এটি দমকা হাওয়ায় মত বাতাস বের হয়ে আসে।' এর প্রায় দুইশো বছর পর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হেনরি ক্যাভেন্ডিস হাইড্রোজেনকে স্বতন্ত্র মৌল হিসেবে আবিস্কার করেন।
হাইড্রোজেন রকেটের জ্বালানিতে ব্যাবহৃত হয়। ১৭৮৩ সালে ফরাসি রসায়নবিদ অ্যান্টোনি ল্যাভয়সিয়ে হাইড্রোজেন নামকরণ করেন। ১৮০৬ সালে ব্রিটিশ রসায়নবিদ হামফ্রে ডেভি বিশুদ্ধ পানির মধ্যে শক্তিশালী বিদ্যুৎ প্রবাহ চালিয়ে পানির মধ্যে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের উপস্থিতি আবিস্কার করেন।
যে গ্যাসকে আপনি খালি চোখে দেখতে পাননা সেই গ্যাস আমেরিকা প্রতি বছর ৩০০ কোটি ঘনফুট হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর মহাবিশ্বের বিস্ফোরণে যে তিনটি মৌলিক উপাদান ছিল তার অন্যতম ছিল হাইড্রোজেন এবং বাকি দুটি হচ্ছে হিলিয়াম ও লিথিয়াম। সাধারণ মানুষের পক্ষে যেটা অসাধ্য বিজ্ঞান তার সমাধান করেছে।
মানুষের শরীরের নব্বই ভাগ মাত্র তিনটি উপাদান দিয়ে তৈরি। তার মধ্যে হাইড্রোজেন ৬০ ভাগ, অক্সিজেন ২০ ভাগ, কার্বন ১০ ভাগ। শরীর থেকে জলীয় বাষ্প বের করে নিলে আশি শতাংশ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ছাড়া তেমন আর কিছুই থাকবেনা।
মানুষের চুল ক্যারোটিন নামক একটি পদার্থ দিয়ে তৈরি। এসব বিজ্ঞান গবেষণা করে আবিষ্কার করেছে। মানুষের চোখের ক্ষমতা ক্যামেরার হিসেবে ৫৭৬ মেগা পিক্সেল আর মানুষের মস্তিস্কে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন হয় তা দিয়ে একটি দশ ওয়াটের বাল্ব জ্বালানো সম্ভব। এসব কোন মুখস্থ বিদ্যা নয়।
একজন মানুষের মস্তিস্কের ৭০ ভাগ হচ্ছে পানি, আমাদের শরীরে যত মাসল আছে তার ৭৫ ভাগ হচ্ছে পানি, হাড়ের ৩০ ভাগ পানি, ফুসফুসের ৮০ ভাগ পানি, চামড়ার ৬০ ভাগও পানি।
এই পৃথিবী ৯২ টি উপাদান দিয়ে গঠিত, যার ৬১ টি উপাদান মানব শরীরে আছে। আমাদের শরীরের ৯৯ ভাগ মাত্র ছয়টি মৌলিক উপাদান দিয়ে গঠিত; কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। শরীরের ওজনের ৮% হাড়, শরীরের ওজনের ১০% থাকে ছর্বি। মানুষের শরীরের ৬০ ভাগ জল আর ৪০ ভাগ মৌলিক উপাদান দিয়ে তৈরি।।
এই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এখনো জানেনা মানুষ কি দিয়ে তৈরি। বিজ্ঞানীরা এসব জানেন বলেই তারা মানুষের মাথার মধ্যে অক্সিজেনের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে তাকে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে সহজেই মেরে ফেলতে পারেন। আবার সেই অক্সিজেন দিয়ে প্রায় মৃত মানুষকেও বাঁচিয়ে তুলতে পারেন।
মানুষ যে গ্যাসগুলোকে চোখে দেখতে পায়না বিজ্ঞানীরা সে গ্যাস দিয়ে প্লাস্টিক তৈরি করছেন। মানুষের শরীরে ব্যাবহৃত ইনজেকশন তৈরি করছেন। জুরিখে একটি সুইস প্লান্ট বসানো হয়েছে, যা স্পঞ্জের মতো ফিল্টার দিয়ে কার্বন শুষে নেয় এবং অক্সিজেন অবমুক্ত করে দেয়। এতে বাতাস কার্বনমুক্ত হয়। এটা পৃথিবীর মানুষের জন্য একটা বিশাল সুসংবাদ।।
বিজ্ঞানীরাও দেখতে মানুষের মত। অন্ধ বিশ্বাসের স্থান তাদের কাছে নেই। পৃথিবীর যে সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই বিজ্ঞানীরা সেই সৌন্দর্যের রহস্য খুঁজে বের করেন এবং তা মানব কল্যাণে কাজে লাগান। একটিবার ভাবুন তো, ‘আপনার অপারেশন করা হচ্ছে এবং আপনাকে অচেতন করার জন্য যে গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে তা আর আপনার শরীরে কাজ করছেনা। আপনি হঠাৎ করে জেগে উঠলেন তখন আপনি না মারা গেলেই সম্ভবত আমি অবাক হবো’।
আপনার শরীরে কি উপাদান আছে এবং কোন উপাদান আপনার শরীরে ঢুকিয়ে দিলে আপনার কি পরিবর্তন হবে তা এই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেই প্রমাণ করেছেন। আর তাই ধর্মান্ধতা একটি জাতির জন্য যেখানে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে সেখানে বিজ্ঞান মানব জাতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
প্রতিটি মানুষের শরীরকে একটি হাইড্রোজেন বোমা বললে কি ভূল বলা হবে? এই পৃথিবীর মানুষগুলো গ্যাসের উপর ঘুমোচ্ছে। কিন্তু চিৎ হয়ে শুতে পারে এর জন্য নিজেকে শ্রেষ্ঠ না ভেবে কাজে শ্রেষ্ঠ হতে হবে, তবেই তা হবে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।
আমি মানুষ, এটাই হোক
আপনার আমার তথা আমাদের পরিচয়।
০৭ এপ্রিল ২০২৩