কাশ্মীরের ইতিহাস, কাশ্মীর যুদ্ধের আদ্যোপান্ত ও পাকিস্তান কর্তৃক বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলমান নিধনের পরিসংখ্যান

 
কাশ্মীরের মানচিত্র

১৯৪৭ সালের ২২ শে অক্টোবর থেকে ১৯৪৮ সালের ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত ১ বছর ১০ সপ্তাহের প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধে পাকিস্তান কাশ্মীরের দুই তৃতীয়াংশ জায়গা ‘জুম্মু কাশ্মীর’ হারিয়ে ফেলে। এতে ভারতের সাত হাজার সামরিক হতাহতের বিপরীতে পাকিস্তানের ২০ হাজার নিহত হয়।

১৯৬৫ সালের দ্বিতীয় কাশ্মীর যুদ্ধে ভারতের ১,১১২ সৈন্য নিহত হওয়ার বিপরীতে পাকিস্তানের ৭,৫০০ সৈন্য নিহত ও প্রায় দশ হাজার সৈন্য আহত হয়।

১৯৭১ সালের পাক ভারত যুদ্ধে ভারতের ৩,৮৪৩ সৈন্য নিহত হওয়ার বিপরীতে পাকিস্তানের ৯ হাজার সৈন্য নিহত, ২৫ হাজার আহত ও ৯৩ হাজার আত্মসমর্পণ করে। এবং পাকিস্তান তার ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ভূখণ্ড হারায়। তাছাড়াও ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছিল।

১৯৮৪ সালের সিয়াচেন যুদ্ধে ভারত জয়লাভ করে। পাকিস্তান তাদের 'কায়েদ ' নামক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ভারতের কাছে হারিয়ে ফেলে।

১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ অমিমাংসিত ভাবে শেষ হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গত ২৫ বছর তেমন বড় ধরণের কোন যুদ্ধ সংগঠিত হয়নি।

ইতিহাস বলে, যখনই পাকিস্তান ভারতের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান তার ভূখণ্ড হারিয়েছে। যে কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের এত দ্বন্দ্ব, সেই কাশ্মীরের মোট আয়তন হচ্ছে ২,২২,২৩৬ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের অধীনে রয়েছে ১,০০৫,৬৯ বর্গ কিলোমিটার, পাকিস্তানের ৭৮ হাজার, চীনের রয়েছে ৪২ হাজার বর্গকিলোমিটার। হিসেব করলে কাশ্মীরের আয়তন ছিল প্রায় বাংলাদেশের দ্বিগুণ। কাশ্মীর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হতে পারেনি পাকিস্তানের লোভের কারণে।

পঞ্চম শতাব্দীর আগে ২ লক্ষ ২২ হাজার ২২৬ বর্গ কিলোমিটারের কাশ্মীর ছিল হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের একটি অঞ্চল। সে সময়ে এই অঞ্চলে কোন মুসলমান ছিলো না। তার প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাব্দী পর তথা ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীতে কাশ্মীরে ইসলামের আগমন ঘটে। ১৩৩৯ সালে শাহ মীর কাশ্মীর দখল করে ১৩৪২ শাল পর্যন্ত কাশ্মীর শাসন করেন। পাকিস্তানের শাসক শাহ মীরের মাধ্যমে কাশ্মীরে মুসলিম শাসনের সুচনা হয়। এরপর ১৫৮৬ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর শাসন করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা মোঘল শাসকরা। ১৭৫১ সাল থেকে ১৮২০ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর আফগান দুররানি সম্রাজ্যর অংশ ছিল। ১৮২০ সালেই কাশ্মীর রঞ্জিত সিঙের নেতৃত্বে শিখরা দখল করে নেয়।

১৮৪৬ সালে ইংরেজ ও শিখদের যুদ্ধে শিখরা পরাজিত হলে জুম্মুর রাজা গুলাব সিং অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের থেকে কাশ্মীর ক্রয় করে কাশ্মীরের শাসক হন। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান ভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত গুলাব সিং এর সন্তানরা কাশ্মীর শাসন করেছেন। গুলাব সিং ৭৫ লক্ষ রুপি ও বার্ষিক চাঁদার বিনিময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে কাশ্মীর ক্রয় করেছিলেন।

১৯২৫ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাশ্মীরের রাজা ছিলেন রণবীর সিং এর নাতি হরি সিং। ১৯৪৭ সালের ২২ শে অক্টোবর পাকিস্তান কাশ্মীর আক্রমণ করে আজাদ কাশ্মীর দখল করে নিলে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ১৯৪৭ সালের ২৬ শে অক্টোবর গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সাহায্য চাইলেন। এরপর মাউন্টব্যাটেন এর সহযোগিতায় হরিণাথ সিং ভারত সরকারের সাথে চুক্তি করলে ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং পাকিস্তানকে হটিয়ে জুম্মু কাশ্মীর এলাকা নিজেদের দখলে নেয়। এর আগ পর্যন্ত ভারত কাশ্মীরের এক ইঞ্চিও জায়গা দখল করেনি।

১৯৫০ সালে তিব্বতের সাথে জিনজিয়াং প্রদেশকে যুক্ত করার জন্য চীন একটি সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করে এবং এতে ভারত বাধা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে চীন ১৯৬২ সালে ভারতের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এবং কাশ্মীরের আকসাই অংশ তথা ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার অংশ দখল করে আকসাই চীন নামকরণ করে। চীনের দখলকৃত আকসাই চীন, পাকিস্তানের দখলকৃত আজাদ কাশ্মীর, গিলগিট বালতিস্তান ও ভারতের সাথে হরি সিং এর চুক্তিতে থাকা জুম্মু কাশ্মীর মিলে ছিল স্বাধীন কাশ্মীর। যার রাজা ছিলেন রণবীর সিং এর নাতি হরি সিং। খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, পাকিস্তান ভারতের দখলে থাকা জুম্মু কাশ্মীরের কথা বারবার বললেও চীনের দখলে থাকা আকসাই চীন নিয়ে টু শব্দটিও করে না। কাশ্মীর দখলের জন্য ভারতকে ইসলামের শত্রু সাজিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিলেও কাশ্মীরের আরেকটি অঞ্চল আকসাই চীন দখলের জন্য ' উহ ' শব্দটি পর্যন্ত করে না।

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এত বিরোধ থাকার পরও ভারত কখনোই পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান দখল করার কথা একটিবারও ভাবেনি। ইচ্ছে করলেই ভারত তখন যেকোন মুহূর্তে পাকিস্তানকে ভারতের উপর দিয়ে আটকে দিয়ে এবং সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারতো। কিন্তু ভারত তা করেনি। এমনকি ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধের সময় ১৯৬৫ সালের ৫ ই সেপ্টেম্বর যখন পাকিস্তানের সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানকে একদম অরক্ষিত রেখে পাকিস্তান চলে যায় তখন ইচ্ছে করলেই ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ ঢুকে বাংলাদেশ চিরদিনের জন্য দখল করে নিতে পারতো। ভারত তাও করেনি।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে যখন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয় তখনও ভারতীয় সৈন্য স্বশরীরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু যখনই অতি উৎসাহী হয়ে ১৯৭১ সালের ৩ রা ডিসেম্বর পাকিস্তান আচমকা ভারতের ১১ টি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে বসে তখন ভারতীয় সেনাবাহিনী সরাসরি বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ফলাফল হিসেবে পাকিস্তান ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটারের বাংলাদেশ হারায় এবং তাদের ৯৩ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। এরপরও যদি ভারত চাইতো ভারত বাংলাদেশ দখলে রাখতে পারতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর সহযোগিতায় মাত্র ৮৬ দিনে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়।

ভারতকে ইসলামের শত্রু সাজিয়ে যে পাকিস্তান গত ৭৮ বছর ধরে চীনের ইশারায়, কখনো আমেরিকার ইশারায় নাচছে, তারাই এই দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মুসলমান হত্যা করেছে। বাংলাদেশে তারা ২৫ লক্ষ মুসলমান হত্যা করেছে, আফগানিস্তানে ৪ লক্ষ মুসলমান হত্যা করেছে, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ২ লক্ষ মুসলমান হত্যা করেছে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক জর্ডানের বাদশাহ হুসেইন এর সাথে মিলে ব্লাক সেপ্টেম্বর এর নাম করে ১০ হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনকে হত্যা করেন এবং এছাড়াও পাকিস্তান তার অধিকৃত খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ, সিন্ধু ও আজাদ কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ধরে গণহত্যা চালিয়ে আসছে।স

পৃথিবীর ইতিহাসে যত মুসলমান এই পাকিস্তানীরা হত্যা করেছে তা আর কোন জাতি, কোন রাষ্ট্র করেনি। ইসলামের শত্রু ভারত ও চীন নয়, ইসলামের শত্রু হচ্ছে পাকিস্তান। শুধুমাত্র গদি ও অর্থের জন্য এরা কখনো আমেরিকার, কখনো চীনের গোলাম। ১৯৪৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত তারা প্রায় ৪০ লক্ষ মুসলমানকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হত্যা করেছে।

ইতিহাস জানুন এবং পাকিস্তানকে ঘৃণা করুন।

সত্য সবসময় সুন্দর।

লুসিড ড্রিম (শুভ)

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫

 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url