![]() |
ঢাকায় সত্যিজিৎ রায়'র পৈত্রিক বাড়ি |
ঢাকায় সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা ভাঙা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ঢাকা, ১৬ জুলাই:
ঢাকার হরিকিশোর রায় চৌধুরী রোডে
অবস্থিত উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর শতাব্দী
প্রাচীন বাসভবন—যা ভারতীয় কিংবদন্তি
চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা হিসেবেও পরিচিত—তা ভেঙে ফেলার
ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর
উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি একে ‘বাঙালি
সংস্কৃতির অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মঙ্গলবার এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে মমতা বলেন, “এই খবরটি অত্যন্ত দুঃখজনক। রায় পরিবার বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ধারক ও বাহক। উপেন্দ্র কিশোর বাংলার নবজাগরণের অন্যতম স্তম্ভ। আমি বিশ্বাস করি, এই বাড়িটি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত।”
আরও পড়ুনঃ নেতাজির দেহরক্ষী মোহাম্মদ নিজামুদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রণাম
তিনি
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং দেশটির সকল
সচেতন নাগরিকের প্রতি ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাটি রক্ষা
করার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ভারত সরকারের প্রতিও
বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশের
শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি
স্টার-এর প্রতিবেদনে জানা
যায়, ঐতিহাসিক এই ভবনটি দীর্ঘদিন
ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। এটি
একসময় ময়মনসিংহ
শিশু একাডেমি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, বছরের পর বছর অবহেলায়
সেটি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে
একটি আধা-কংক্রিট ভবন
নির্মাণের জন্য সেটি ভেঙে
ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
ঢাকার শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী জামান জানান, “বাড়িটি ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। শিশু একাডেমির কার্যক্রম একটি ভাড়া করা ভবন থেকে পরিচালিত হচ্ছে।” নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে ভাঙার কাজ চলছে বলে তিনি দাবি করেন।
আরও পড়ুনঃ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের দেহে ক্যামেরা
কেন
এই ভবনটি সংরক্ষণ না করে ভেঙে
ফেলা হচ্ছে—এই প্রশ্নের জবাবে
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, পুরনো ভবনটি শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে
উঠেছিল। শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় এই ধরনের সিদ্ধান্ত
অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন।
ইতিহাসবিদ ও সংস্কৃতি অনুরাগীরা
বলছেন, উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর মতো
ব্যক্তিত্বের স্মৃতিবাহী ভবন সংরক্ষণে রাষ্ট্রের
অঙ্গীকার থাকা উচিত ছিল।
তার চেয়ে বড় কথা, সত্যজিৎ
রায়ের মতো বিশ্ববন্দিত শিল্পীর
পৈতৃক ভিটা হিসেবে এই
ভবনের আন্তর্জাতিক গুরুত্বও অনস্বীকার্য।
এই
ঘটনায় বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে বাঙালি
সমাজে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা
দিয়েছে। কেউ কেউ ভবনটি
সংরক্ষণের দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে আওয়াজ তুলছেন, আবার কেউ কেউ
সরকারের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন।
সংস্কৃতির প্রতীক না অবহেলিত কাঠামো?
এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে
দুই বাংলার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। উপেন্দ্র কিশোরের হাতে গড়া, সত্যজিৎ
রায়ের শেকড়ের স্মারক হয়ে থাকা এই
বাড়ির ভবিষ্যৎ কী—তা এখন
সময়ই বলে দেবে। তবে
এখনই জোরালো নাগরিক দাবি না উঠলে
হয়তো এক বিস্মৃতির গর্ভেই
হারিয়ে যাবে বাংলা সংস্কৃতির
এই ইতিহাসবাহী নিদর্শন।
সূত্রঃ এনডিটিভি
আরও পড়ুনঃ ভারতের ব্যাংগালুরুর শ্রী সত্য সাই হাসপাতাল: চিকিৎসা যেখানে এক পয়সাও লাগে না
মন্তব্যঃ বাড়িটি কি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে না এখনো আছে, এ খবর জানা যায়নি।
Post a Comment