বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন সিলেটের কালী প্রদীপ চৌধুরী

 
ড. কালী প্রদীপ চৌধুরী

আট ডলার নিয়ে আমেরিকায় এসেছিলেন। আজ বিশ্বের ৮টি দেশে ২৫ ধরণের ব্যবসা করছে কালী প্রদীপ চৌধুরী-র কোম্পানি---

বাবা ছিলেন জমিদার। কিন্তু ছেলে ভাবতেন নতুন কিছু করবেন। নতুন কিছু করার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন আমেরিকায়। সম্বল বলতে পকেটে মাত্র আট ডলার। আমেরিকার একটি হাসপাতালে তিনি প্রথম কাজের জন্য যান। কিন্তু সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফিরিয়ে দেয়। জেদ চাপল ছেলেটির। ঠিক করলেন, ওই হাসপাতালেই চাকরি করবেন।

দীর্ঘ এগারোমাস প্রচেষ্টার পর তিনি ঐ হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ পেলেন। কয়েকমাস পর তিনি অ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। বললেন, এই হাসপাতাল তিনি একদিন কিনে নেবেন। অ্যাডমিনিস্ট্রেটর তাঁর কথা শুনে প্রচণ্ড হেসেছিলেন। মাঝেমধ্যেই তার এই কথাটি নিয়ে বিভিন্ন উপহাসও করতেন। অবশ্য করারই কথা- সদ্য আমেরিকায় এসে কোনোক্রমে একটা চাকরি জোগাড় করা বাঙালি এক ছেলের মুখে এসব শুনে।

তিনি আর কী বা করতে পারেন। তবে ১৩ বছর পরেই পাল্টে গেল সব। সেই অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অবাক হয়ে দেখলেন ছেলেটি সত্যি সত্যি কিনে নিয়েছে সেই হাসপাতলটি। জন্ম হল কেপিসি গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের। একটি দুটি করে ২০২০ সালে এসে কেপিসি গ্রুপের হাসপাতালের সংখ্যা এখন ৭০ টি।

বর্তমানে আমেরিকার মতো জায়গায় সাত হাজার একর জমির মালিক কেপিসি গ্রুপ। আছে ৩০ লাখ বর্গফুটের বিশাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। প্রায় ২০ হাজার মানুষ কর্মরত আছেন এসব প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও বিশ্বের প্রায় ৮ টি দেশে তাদের রয়েছে ২৫ ধরনের ব্যবসা। ভারতে আছে ১৬ টি চা বাগান। যার মধ্যে একটি প্রায় ৫০ হাজার একর আয়তনের।

কে এই যুবক?

তিনি কালী প্রদীপ চৌধুরী। জন্ম সিলেটের ঢাকা দক্ষিণ এলাকার দত্তরাইল গ্রামে। জমিদার কালীপদ দত্ত চৌধুরীর সন্তান কালী প্রদীপের ছেলেবেলা কেটেছে সিলেটেই। তারপর তিনি পাড়ি দেন আমেরিকা। প্রতিষ্ঠা করেন কেপিসি গ্রুপ। 

সরকারি ওয়েবসাইটে সিলেট জেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের চিত্র

বর্তমানে কালী প্রদীপ চৌধুরীর ক্যালিফোর্নিয়ায় আছে সাড়ে ৩ কি.মি. আয়তনের বিশাল বাড়ি। তার সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসে রয়েছে কেপিসি রোড নামে ৫৫ কিলোমিটার সড়ক। এছাড়াও তার কোম্পানির নামে লস এঞ্জেলসেই রয়েছে একটি শহর- যার নাম কেপিসি সিটি। ইউক্রেনে আছে তাঁর নিজস্ব নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট।

বিশ্বসেরা ব্যক্তিদের একজন হয়েও নিজের দেশকে ভুলে যাননি কালী প্রদীপ চৌধুরী। বারবার এখানে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে। নিজ গ্রামে পৈতৃক সম্পত্তির উপর নির্মাণ করতে চান বিশ্বমানের একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কালী প্রদীপ চৌধুরী ঢাকার পূর্বাঞ্চলে তৈরি করতে চান ১৪২ তলার একটি আইকনিক টাওয়ার, যা হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উঁচু ভবন। ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩২,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে এই ভবনটি।

বাঙালি ব্যবসা করতে পারে না- কথাটা আমরা প্রায়ই শুনি। কিন্তু এটা যে সর্বৈব সত্য নয়, তার প্রমাণ কালী প্রদীপ চৌধুরী।

 (সংগৃহীত)

 








Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url