আমেরিকা বনাম চীন: বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?
প্রতীকী ছবি |
বিশ্ব এখন একটি নতুন ঠান্ডা যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে—এইবার সোভিয়েত
ইউনিয়নের জায়গায় চীন, আর বিপরীতে আমেরিকা। বাণিজ্য, প্রযুক্তি, ভূরাজনীতি ও সামরিক
আধিপত্য—সব দিক থেকেই এই দুই পরাশক্তির টানাপোড়েন এখন স্পষ্ট। এমন প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির একটি দেশের সামনে প্রশ্ন দাঁড়ায়: আমরা কোথায়
দাঁড়িয়ে আছি? কার দিকে ঝুঁকছি, আর কেন?
আমেরিকা বনাম চীন: আধিপত্যের খেলা
- আমেরিকা বিশ্বে
দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে—নেটো, বিশ্বব্যাংক, IMF-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর
মাধ্যমে।
- চীন দ্রুত গতিতে
অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিক শক্তি বাড়িয়ে BRI (Belt and Road
Initiative)-এর মাধ্যমে বহু দেশকে প্রভাবিত করছে।
- দুই দেশের মধ্যে
Indo-Pacific Strategy ও BRICS উদ্যোগ এখন প্রতিযোগিতার বড়
ক্ষেত্র।
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান
বাংলাদেশ এখনো "সমতা ও ভারসাম্যের কূটনীতি" অবলম্বন করছে।
অর্থাৎ, দুই পক্ষের সাথেই ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা চলছে।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক
- চীন বাংলাদেশের
সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার নয়, কিন্তু বৃহত্তম অবকাঠামোগত বিনিয়োগকারী।
- পদ্মা সেতু,
পায়রা বন্দর, রেল প্রকল্প—সবখানেই চীনের অর্থায়ন ও নির্মাণ সহযোগিতা।
- বাংলাদেশ BRI
প্রকল্পে স্বাক্ষরকারী, যদিও কিছু প্রকল্প নিয়ে পশ্চিমা সমালোচনা আছে।
আমেরিকার সঙ্গে
সম্পর্ক
- আমেরিকা
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক রপ্তানি গন্তব্য (বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে)।
- মানবাধিকার,
শ্রম অধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে চাপ দিয়ে থাকে—যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ
রাজনীতিতে স্পর্শকাতর ইস্যু।
- সাম্প্রতিক সময়ে
Indo-Pacific Strategy-এ বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
সুযোগ:
- উভয় পক্ষের কাছ
থেকে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করা সম্ভব।
- কৌশলগত
অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছে উভয় পক্ষ।
চ্যালেঞ্জ:
- যেকোনো একপক্ষ
ক্ষুব্ধ হলে অর্থনৈতিক বা কূটনৈতিক চাপ আসতে পারে।
- দেশের ভূরাজনৈতিক
স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে যদি ভারসাম্য নষ্ট হয়।
- অভ্যন্তরীণ
রাজনীতিতে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা।
সম্ভাব্য নীতি: ভারসাম্য বজায় রেখে
আগানো
বাংলাদেশের উচিত—
- "বন্ধু
সবার, শত্রু কারো না" নীতি মেনে চলা।
- কৌশলগত বিষয়ে
নিজের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া, শুধু আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়।
- আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো—যেমন BIMSTEC, SAARC বা ASEAN-এর সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা।
বাংলাদেশ এখন এক গ্লোবাল পাওয়ার পাজলের মাঝে অবস্থান করছে। চীন ও আমেরিকার
মধ্যকার প্রতিযোগিতা যদি বুদ্ধিমত্তার সাথে সামাল দেওয়া যায়, তবে এটাই হতে পারে বাংলাদেশের
জন্য এক "গোল্ডেন মোমেন্ট"। শর্ত একটাই—অন্যের খেলার সৈনিক
নয়, নিজের কৌশলের নায়ক হতে হবে।