সুধা কুলকার্নি মূর্তি: এক মানবিকতার প্রতীক

 

সুধা কুলকার্নি মূর্তি

সুধা কুলকার্নি, যিনি পরবর্তীতে পরিচিত হন সুধা মূর্তি নামে, একজন দৃষ্টান্তমূলক নারী, যিনি তার জীবনের প্রতিটি পর্বে উদারতা, শিক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বার্তা ছড়িয়েছেন। একজন ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী এবং জনপ্রিয় লেখিকা—একের ভিতরে এতগুলো পরিচয় নিঃসন্দেহে অনন্য।

সুধা কুলকার্নি মূর্তি ভারতের প্রথম নারী ইঞ্জিনিয়ারদের একজন, যখন এই বিষয়ে কোনো নারী শিক্ষার্থী পড়শুনা করতে সাহস পেতো না। তিনি ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জীবনসঙ্গী।


আরও পড়ুনঃ- কীভাবে ভারতীয় হাসপাতালে একজন 'হিন্দু'র হৃদপিণ্ড এক পাকিস্তানি কিশোরীর জীবন বাঁচিয়েছিল

 

শৈশব ও শিক্ষা

সুধা কুলকার্নি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ সালের ১৯ আগস্ট, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ছোট্ট শহর শিগাঁও-এ। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সার্জন ডাক্তার এবং মা ছিলেন শিক্ষিকা। সংস্কৃতিমনা পরিবারে বড় হওয়ায় সুধা কুলকার্নি ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা ও মূল্যবোধ তাঁর জীবনের অংশ হয়ে ওঠে।

 

তিনি ইলেকট্রনিকস ও ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিগ্রি অর্জন করেন B.V. Bhoomaraddi College থেকে এবং ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রথম নারী ইঞ্জিনিয়ার। পরবর্তীতে TISS থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেন।


আরও পড়ুনঃ- বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন সিলেটের কালী প্রদীপ চৌধুরী

 

কর্মজীবনের সূচনা ও সংগ্রাম

একজন নারী হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং দুনিয়ায় প্রবেশ ছিল চ্যালেঞ্জিং। টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমোটিভ কোম্পানি (TELCO)-তে তিনি ভারতের প্রথম নারী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পান।
এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময়েই পরিচয় হয় এন. আর. নারায়ণ মূর্তির সঙ্গে, যিনি ইনফোসিস প্রতিষ্ঠা করেন ও পরবর্তীতে তাঁর জীবনসঙ্গী হন।

 

ইনফোসিসের পেছনে একজন নীরব কারিগর

১৯৮১ সালে নারায়ণ মূর্তি যখন ইনফোসিস শুরু করতে চান, তখন সুধা তাঁর ব্যক্তিগত সঞ্চয়—১০,০০০ রুপি—দিয়ে স্বামীর স্বপ্নের ভিত্তি তৈরি করেন।
তিনি শর্ত দিয়েছিলেন: “তুমি ব্যবসা করবে, আমি সংসার সামলাবো।” এই আত্মত্যাগ ও সমর্থনের ফলেই ইনফোসিস আজ ভারতের অন্যতম বড় টেক-জায়ান্ট।


আরও পড়ুনঃ- মহাত্মা গান্ধীকে হত্যাকারী নাথুরাম গডসের বিজেপি কানেকশন ও জাতির পিতা সমাচার

 

সমাজসেবা ও সাহিত্য

সুধা মূর্তি Infosys Foundation-এর চেয়ারপার্সন হিসেবে ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামীণ উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন, স্যানিটেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। তাঁর প্রকল্পে আজও উপকৃত হচ্ছেন লাখো মানুষ।

 

একই সঙ্গে তিনি জনপ্রিয় লেখিকা হিসেবে পরিচিত। সহজ ভাষায় মানবিক গল্প বলার দারুণ দক্ষতায় তাঁর বইগুলো শিশু-কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের হৃদয় ছুঁয়েছে।

 

বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • Wise and Otherwise
  • The Day I Stopped Drinking Milk
  • Dollar Bahu
  • How I Taught My Grandmother to Read
  • Three Thousand Stitches

 

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

  • পদ্মশ্রী (২০০৬) – ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান
  • R.K. Narayan Award for Literature
  • Attimabbe Award (কর্ণাটক সরকার)
  • একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি

 

আরও পড়ুনঃ- উত্তম-সুচিত্রা জুটির টুকিটাকি


উপসংহার

সুধা কুলকার্নি মূর্তি আমাদের শেখান—সফলতা কেবল নিজের অর্জন নয়, বরং মানুষের জন্য কিছু করতে পারাই জীবনের প্রকৃত অর্থ। একজন নারী কিভাবে পেশা, পরিবার, সমাজসেবা ও সাহিত্য সবকিছু একসাথে সার্থকভাবে সামলাতে পারেন—সুধা মূর্তির জীবন সেই প্রশ্নের নিখুঁত উত্তর।

Post a Comment

أحدث أقدم