উত্তম-সুচিত্রা জুটির টুকিটাকি
উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন |
“সুচিত্রা সেন উত্তম কুমারকে বললেন, "তোকে আর একবার বানিয়ে দিই বল"? সেই মুহূর্তে উত্তমকুমার নিজের প্রাণখোলা হাসি আর চাপতে পারলেন না। বললেন "আরে না, তোর সঙ্গে এমনি মজা করছিলাম। তুই কি আজকাল মজা-টজাও বুঝিস না? তোর চায়ে চুমুক দিলেই মন তোফা"।
উত্তমকুমারের
মুখে চায়ের প্রশংসা শুনে সুচিত্রা সেনের মুখে মুক্তঝরা হাসি। মনে হতো সেই হাসিতে
মেকআপ রুমে চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে।
উত্তম-
সুচিত্রা বাংলা চলচ্চিত্রের চিরকালের ব্লক বাস্টার জুটি। উত্তম কুমারের সাথে
সুচিত্রা সেনের 'তুই-তুকারি' সম্পর্ক ।
হয়তো
এমনও হয়েছে, কোনোদিন শ্যুটিং থাকলে তারা মেকআপ রুমে গল্প করছেন। হঠাৎ সুচিত্রা
সেনের চা খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে। উত্তম কুমারের কাছে জানতে চাইলেন, ‘উত্তম তুই চা
খাবি’? উত্তম কুমার সম্মতি জানালেন।
সুচিত্রা
সেন বাইরের চা খেতে একদম পছন্দ করতেন না। সেজন্য গরম জল, চা পাতা, দুধ-চিনি এইসব
রেডি করে রাখা হতো। স্টুডিওতে তাঁর জন্য আলাদা করে চা তৈরি হতো। চায়ের কাপ-প্লেটের
ব্যাপারেও তিনি খুব খুঁতখুঁতে ছিলেন। টি পট, চায়ের কাপ, ডিশ, দুধ, চিনি সুন্দর
করে একটা ট্রেতে নিয়ে আসা হতো।
সুচিত্রা সেন নিজের হাতে চা বানিয়ে উত্তমকুমারকে জিজ্ঞেস করতেন, তাঁর কতোটা দুধ, কতটা চিনি লাগবে। চা তৈরির পরে উত্তমকুমারের দিকে চা এগিয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে প্রশ্ন, খেয়ে দেখতো কেমন হয়েছে?
বলা বাহুল্য, এই মুহূর্তটা মহানায়ক ধরতে জানতেন। তিনি জানতেন, চা টা যদি খারাপ হয়েছে বলেন, তাহলে সুচিত্রা সেনের মুখের অভিব্যক্তি বদলে যাবে। কোনোদিন সত্যি সত্যি রসিকতা করার জন্য চায়ে চুমুক দিয়ে উত্তম কুমার বলতেন, 'ধুস- এ চা মুখে দেওয়া যায় না'। ব্যাস মুহুর্তের মধ্যে সুচিত্রা সেনের মুখ যেন আষাঢ়ের মেঘ।
এইরকম
অজস্র ঘটনার সাক্ষী উত্তমের অনুজ তরুণ কুমার। তাঁর কথায় রমাদির সম্মান, যশ, অর্থ
কোনোকিছুর অভাব ছিলো না। কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মূল্যবোধ তিনি সযত্নে
রক্ষা করতেন।
অভিজাত পরিবারের বউ হিসেবে তাঁর চলাফেরা, কথাবার্তা, আতিথেয়তা সব বিষয়ে তিনি ব্যতিক্রমী একজন নারী।
তরুণ
কুমার বলেছেন, তিনি প্রিয় রমাদি'র বাড়িতে গেলে তাঁকে নিয়ে কি করবেন ভেবে পেতেন
না। শুধু বলতেন, বুড়ো এটা খা, ওটা খা। নিজের বাড়িতে কতোবার তাঁকে চা করে
খাইয়েছেন সুচিত্রা সেন।” - (সংগৃহীত)