🌍 বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৭৫০টিরও বেশি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে
চিত্রঃ গুগল থেকে |
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক সামরিক
ঘাঁটি: আধিপত্য, প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ভূ-রাজনীতি বনাম বৈশ্বিক প্রভাব
বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, বরং একটি সামরিক শক্তির
প্রতিচ্ছবি। এই আধিপত্য কেবল পরমাণু অস্ত্র বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ
নয়, বরং বিশ্বের নানা প্রান্তে বিস্তৃত সামরিক ঘাঁটি নেটওয়ার্ক
যুক্তরাষ্ট্রকে এক অনন্য ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে। এই ঘাঁটিগুলো
কেবল প্রতিরক্ষা নয়, বরং ক্ষমতার প্রদর্শন ও কৌশলগত চাপে ব্যবহৃত হয়।
(১) পৃথিবীতে কতোগুলো আমেরিকান সামরিক
ঘাঁটি আছে?
বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আনুমানিক ৭৫০টিরও
বেশি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যা ৮০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে আছে। একমাত্র
যুক্তরাষ্ট্রই এতো ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘাঁটিগুলোর
মাধ্যমে তারা:
- বিভিন্ন অঞ্চলে
তাত্ক্ষণিক সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে
- কৌশলগত নজরদারি
চালাতে পারে
- বন্ধু
রাষ্ট্রগুলোর সাথে যৌথ সামরিক মহড়া ও অস্ত্র চুক্তি কার্যকর করতে পারে
(২) কোন কোন দেশে এই ঘাঁটিগুলো স্থাপিত?
ক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০টি দেশে ৭৫০টিরও বেশি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। অনেক
ঘাঁটির তথ্য গোপন বা সীমিতভাবে প্রকাশিত হওয়ায় সম্পূর্ণ তালিকা পাওয়া কঠিন।
তবে, বিভিন্ন উন্মুক্ত সূত্রের ভিত্তিতে নিচে একটি তালিকা (আংশিক) উপস্থাপন করা
হলো:
🌍 যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি
থাকা দেশের তালিকা (আংশিক)
🔹 এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলঃ (১) জাপান, (২) দক্ষিণ কোরিয়া, (৩) ফিলিপাইন, (৪) থাইল্যান্ড, (৫) সিঙ্গাপুর, (৬) অস্ট্রেলিয়া, (৭) পাপুয়া নিউ গিনি, (৮) গুয়াম, (৯) মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, (১০) মাইক্রোনেশিয়া, (১১) নিউ ক্যালেডোনিয়া, (১২) সামোয়া, (১৩) সোলোমন দ্বীপপুঞ্জ, (১৪) তাইওয়ান (প্রশিক্ষণ ও নজরদারি), (১৫) ভারত (সামরিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ)
🔹 মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়াঃ (১) বাহরাইন, (২) কুয়েত, (৩) কাতার, (৪) সৌদি আরব, (৫) সংযুক্ত আরব আমিরাত, (৬) ইরাক, (৭) সিরিয়া, (৮) ইসরায়েল (রাডার ও প্রতিরক্ষা), (৯) জর্ডান, (১০) তুরস্ক, (১১) ওমান, (১২) আফগানিস্তান (সীমিত উপস্থিতি)
🔹 ইউরোপঃ (১) জার্মানি, (২) ইতালি, (৩) যুক্তরাজ্য, (৪) পোল্যান্ড, (৫) রোমানিয়া, (৬) বুলগেরিয়া, (৭) লাটভিয়া, (৮) লিথুয়ানিয়া, (৯) এস্তোনিয়া, (১০) নেদারল্যান্ডস, (১১) বেলজিয়াম, (১২) স্পেন, (১৩) পর্তুগাল, (১৪) গ্রিস, (১৫) আলবেনিয়া, (১৬) কসোভো, (১৭) আইসল্যান্ড, (১৮) নরওয়ে, (১৯) স্লোভাকিয়া (প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা)
🔹 আফ্রিকাঃ (১) জিবুতি, (২) কেনিয়া, (৩) নাইজার, (৪) ক্যামেরুন, (৫) সোমালিয়া, (৬) সেশেলস, (৭) লিবিয়া (গোপন ঘাঁটি), (৮) মরক্কো, (৯) মালি (প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা), (১০) ঘানা (প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা)
🔹 ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানঃ (১) কোলোম্বিয়া, (২) হন্ডুরাস, (৩) পানামা, (৪) পেরু (প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা), (৫) গুয়ান্তানামো বে (কিউবা), (৬) পুয়ের্তো রিকো, (৭) ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র (প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা)
🔹 অন্যান্য অঞ্চল
- ডিয়েগো
গার্সিয়া (ব্রিটিশ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল)
- আলাস্কা
(যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হলেও কৌশলগত ঘাঁটি)
- হাওয়াই
(যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হলেও কৌশলগত ঘাঁটি)
(৩) কোন কোন দেশ নিজেদের স্বাধীনতা ও
স্বকীয়তা ধরে রেখেছে?
✅ জাপান: ওকিনাওয়ায় ব্যাপক
জনবিরোধিতা থাকলেও জাপান তার কৃষ্টি ও রাজনৈতিক কাঠামো বজায় রাখতে পেরেছে।
✅ জার্মানি: দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন ঘাঁটি থাকা সত্ত্বেও জার্মানি ইউরোপীয় রাজনীতিতে
নেতৃত্বদানে সফল।
✅ দক্ষিণ কোরিয়া: উত্তর কোরিয়ার হুমকি
মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সামরিক নির্ভরতা থাকলেও, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তারা
স্বাধীন।
(৪) কোন কোন দেশে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে?
⚠️ বাহরাইন, কুয়েত: রাজনৈতিক মতপ্রকাশে
বাধা, শ্রমিক নির্যাতন ও গণতন্ত্র সংকুচিত।
⚠️ ওকিনাওয়া, জাপান: মার্কিন সেনাদের
বিরুদ্ধে অপরাধ, দূষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার অভিযোগ বহুবার উঠেছে।
⚠️ ফিলিপাইন: মার্কিন ঘাঁটিগুলোর
আশেপাশে দারিদ্র্য, যৌনশিল্প ও সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।
⚠️ আফ্রিকার ঘাঁটি: গোপন ড্রোন ঘাঁটি ও
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে অসংখ্য বেসামরিক প্রাণহানি।
(৫) বর্তমানে কোন কোন দেশে ঘাঁটি
স্থাপনের প্রচেষ্টা চলছে?
ফিলিপাইন
৪টি নতুন ঘাঁটি: (১) পালাওয়ান, (২) ইসাবেলা,
(৩) কাগায়ান ও (৪) সাবিক বে
→ চীনের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক অবস্থান জোরদার
অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনিঃ ডারউইন ও প্রশান্ত
দ্বীপাঞ্চলে ঘাঁটি সম্প্রসারণ
→ ২০২৫ সালে প্রথম যৌথ
মহড়া পাপুয়া নিউ গিনিতে
জাপান
→ War-fighting
headquarters” তৈরির ঘোষণা (চীন প্রতিরোধে)
লাতভিয়া
→ ২৫,০০০ হেক্টর এলাকায় আন্তর্জাতিক সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকা নির্মাণ (২০২৫)
রোমানিয়া
→ ১০,০০০+ ন্যাটো সদস্যের জন্য নতুন অবকাঠামো (২০২৭ পর্যন্ত নির্মাণ)
পোল্যান্ড
→ Aegis Ashore ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঘাঁটি চালু (২০২৪)
ইকুয়েডর
→ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বিদেশি ঘাঁটি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা
কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তান (রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী)
→ মার্কিন ঘাঁটি স্থাপনের গোপন পরিকল্পনার অভিযোগ
গ্রিনল্যান্ড
→ ট্রাম্পের সামরিক নিয়ন্ত্রণ দাবি ভবিষ্যতের উত্তেজনার ইঙ্গিত
(৬) ঘাঁটিগুলোর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক
প্রভাব
- স্থানীয়
সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ
- প্রতিবাদ দমন ও
নজরদারি
- অপরাধ ও দূষণ
বৃদ্ধি
- সার্বভৌমত্বে
অবক্ষয়
🔍 মানচিত্র ও
ভিজ্যুয়াল রিসোর্স
📍 ইন্টারেক্টিভ মানচিত্র:
👉 Bases Around the World – Today's Military
📅 টাইমলাইন (১৯৫০–বর্তমান):
👉 Timeline of US Military Operations – Wikipedia
✍️ উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলো যেমন একদিকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের
হাতিয়ার, তেমনি এসব ঘাঁটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিঘাত নিয়ে সংশ্লিষ্ট
দেশগুলোতে উত্তেজনা, অসন্তোষ ও প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। বিশ্ব রাজনীতির এই দৃশ্যপটে
প্রশ্ন থেকে যায়—এই সামরিক বিস্তার আসলেই বিশ্ব শান্তির পক্ষে কাজ করছে, নাকি এক
নতুন উপনিবেশবাদের রূপ?
🔗 তথ্যসূত্র
- Al Jazeera
Infographic on US Military Presence
- Visual
Capitalist: Mapped US Military Bases
- Wikipedia: List of countries with
overseas military bases
ইন্টারনেট অবলম্বনে