Advertise

রাজনীতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা: সম্ভাবনা, সংকট ও বাস্তবতা

 

প্রতীকী ছবি


একবিংশ শতাব্দীর রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের নাম সোশ্যাল মিডিয়া। আগের দিনে রাজনীতি ছিল মঞ্চকেন্দ্রিক—সভা-সমাবেশ আর পত্রিকার পাতা। আজ তা সরাসরি পৌঁছে গেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। ফেসবুক, টুইটার (বর্তমানে এক্স), ইউটিউব, টিকটক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ—এসব প্ল্যাটফর্ম এখন রাজনৈতিক লড়াইয়ের নতুন রণক্ষেত্র।


রাজনীতির ডিজিটাল রূপান্তর: একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র

সোশ্যাল মিডিয়া এখন কেবল রাজনৈতিক প্রচারের মাধ্যম নয়, এটি জনমত গঠনের হাতিয়ার, দ্রুত প্রতিক্রিয়ার প্ল্যাটফর্ম, এবং অনেক ক্ষেত্রেই সংঘাত বা বিভ্রান্তি তৈরির মাধ্যম।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় ফেসবুকের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ—প্রচারণা থেকে শুরু করে বিভ্রান্তি ছড়ানো পর্যন্ত।


সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক দিকগুলো

১. সরাসরি যোগাযোগ ও স্বচ্ছতা
রাজনীতিবিদরা এখন সরাসরি জনগণের সঙ্গে কথা বলেন। কেউ চাইলে একটি পোস্ট বা ভিডিওর মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে নিজের বক্তব্য পৌঁছে দিতে পারেন।

২. তরুণদের সম্পৃক্ততা
তরুণ প্রজন্ম যারা প্রচলিত গণমাধ্যম দেখে না, তাদের কাছে রাজনীতি পৌঁছে দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম এখন সোশ্যাল মিডিয়া।

৩. দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও জনমত যাচাই
কোন ইস্যুতে জনগণ কী ভাবছে, সেটা এখন রাজনৈতিক দল বা সরকার দ্রুত বুঝতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখে।


নেতিবাচক প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

১. ভুয়া খবর ও প্রোপাগান্ডা
অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়ানো হয় বিভ্রান্তি তৈরির জন্য। এটি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে।

২. সাইবার যুদ্ধ ও ট্রল বাহিনী
রাজনৈতিক পক্ষগুলোর "ট্রল আর্মি" তৈরি হচ্ছে যারা বিরোধীদের চরিত্র হননের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকে।

৩. ভয়ভীতি ও সেন্সরশিপ
বিরোধী মত বা সমালোচনার বিরুদ্ধে কখনও কখনও ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়, যা বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকি।


বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাস্তবতা

নেতিবাচক প্রচার: অনেক রাজনৈতিক দলের পেইজ বা ইউটিউব চ্যানেল শুধু প্রতিপক্ষকে গালি দেওয়ার কাজে ব্যস্ত।

আইন ও নিয়ন্ত্রণের অভাব/অতিরিক্ততা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনেকসময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

জনগণের পক্ষ থেকে সচেতনতার অভাব: অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার খবর যাচাই না করেই বিশ্বাস করেন ও ছড়ান।


সম্ভাবনা ও করণীয়

১. ডিজিটাল শিক্ষা ও সচেতনতা
ভুয়া খবর চিনতে শেখানো এবং যাচাই করার প্রবণতা তৈরি করা।

২. নিয়ন্ত্রিত নয়, দায়িত্বশীল সোশ্যাল মিডিয়া
আইনি কাঠামো থাকা উচিত যাতে অপব্যবহার রোধ হয়, তবে স্বাধীন মতপ্রকাশও রক্ষা পায়।

৩. স্বচ্ছ রাজনৈতিক ডিজিটাল ক্যাম্পেইন
নেতিবাচক প্রচারের বদলে নীতিনির্ভর রাজনৈতিক বার্তা ছড়ানো হোক।


উপসংহার

সোশ্যাল মিডিয়া একদিকে রাজনীতিকে গণমুখী করেছে, অন্যদিকে তৈরি করেছে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ। এটি যেমন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে পারে, তেমনি ভুল ব্যবহারে সমাজকেই বিভক্ত করতে পারে। সুতরাং, দরকার সচেতন ব্যবহার, তথ্য যাচাই এবং নৈতিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url