Advertise

আরাকান আর্মি ও রাখাইন রাজ্যের ভবিষ্যৎ: বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের আলোকে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

 

ছবি: গুগল থেকে

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (AA) সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য সামরিক সাফল্য অর্জন করেছে। তবে এই সাফল্য তাদের দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা দেয় না। বাংলাদেশের ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, একটি টেকসই রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য জনসমর্থন, রাজনৈতিক কৌশল এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অপরিহার্য।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। তারা ১৩টি টাউনশিপ এবং ৯টি প্রধান শহর দখল করে, যার মধ্যে রয়েছে ম্রাউক-উ, কিয়াউকটাউ, মিনবিয়া এবং পলেটওয়া। তবে সিত্তে ও কিয়াউকপিউ শহর এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই সাফল্য তাদের স্বশাসনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

যদিও আরাকান আর্মি সামরিকভাবে সফল, তবে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সামনে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

জনসমর্থনের অভাব: তাদের
আন্দোলন মূলত জাতিগত এবং সামরিক ভিত্তিক, যা সাধারণ জনগণের ব্যাপক সমর্থন পায়নি।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাব: তাদের সরকার বা প্রশাসনিক কাঠামো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক: রোহিঙ্গা জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক জটিল, বরং রোহিঙ্গার সামরিক সংগঠন ' আরসা ' র  সাথে তাদের এখনো থেকে থেকে যুদ্ধ হচ্ছে; যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন:
বাংলাদেশে ২০২৪ সালে ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি গণআন্দোলন শুরু হয়, যা মাত্র পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের দিকে নিয়ে যায়। এই আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল:

বিস্তৃত জনসমর্থন: যেভাবেই হোক, ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ জনগণ, পেশাজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ যুক্ত হয়েছিলো।

অহিংস প্রতিরোধ: আন্দোলনটি গোড়ার দিকে শান্তিপূর্ণ ছিল, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতি অর্জনে সহায়ক হয়।

রাজনৈতিক কৌশল: আন্দোলনকারীরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সমর্থ হয়, যার নেতৃত্বে নোবেল বিজয়ী ড: মুহাম্মদ ইউনুস।

তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
*আরাকান আর্মির আন্দোলনের ধরন সামরিক।
*বাংলাদেশের ধরন ছিলো গণআন্দোলন।

*আরাকান আর্মির জনসমর্থন নেই বললেই চলে।
*বাংলাদেশের আন্দোলনকারীরা একটি জনসমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়েছিল।

*আরাকান আর্মির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই।
*বাংলাদেশের আন্দোলনের গোড়ার দিকে মোটামুটি আন্তর্জাতিক সমর্থন ছিলো, যা তাদের সফলতার দিকে নিয়ে যায়।

*আরাকান আর্মির রাজনৈতিক কাঠামো অনুপস্থিত বা অপ্রকাশ্য।
*বাংলাদেশের আন্দোলনের অন্তরালে ছিলো একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।

*বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরাকান আর্মির সফলতার সম্ভাবনা
অনিশ্চিত।
*বাংলাদেশের আন্দোলন সফলতায় রূপ নেয় এবং তারা একটি সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন) গঠনে সক্ষম হয়।

উপসংহার:
আরাকান আর্মি সামরিকভাবে সফল হলেও, রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ধীরে ধীরে জনসমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলো, যা পরে একটি গণআন্দোলনে রূপ নেয়। জনসমর্থন এবং রাজনৈতিক কৌশল মিলেই একটি পরিবর্তন সম্ভব হয়েছিলো। তাই শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা সামরিক শক্তি দিয়ে একটি সরকার পতন বা রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জনগণের সমর্থন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং সুসংগঠিত রাজনৈতিক কাঠামো। কোনো বৈশ্বিক শক্তির প্রভাবে যদি হয় তা হবে অতিরিক্ত যুদ্ধের কারণ, যা এই অঞ্চলে একটি অশান্তির কারণ হবে এবং যা কোনক্রমেই সাধারণ জনগণের কাম্য হতে পারে না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url