প্রতীকী ছবি |
“বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি” সিরিজের সপ্তম ও শেষ
পর্ব। জনঅসন্তোষ, নেতৃত্বহীনতা ও রাজনৈতিক শূন্যতা থেকে কি নতুন গণআন্দোলনের জন্ম হতে
যাচ্ছে? বিশ্লেষণ থাকছে এই পর্বে।
রাজনৈতিক ইতিহাসে কখনো কখনো একটি ছোট্ট অনিয়ম বা নিপীড়নের ঘটনাও বড়
বিস্ফোরণের সূত্র হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ আজ ঠিক এমন এক উদ্বেগজনক মোড়ের দিকে এগিয়ে
চলেছে। জনঅসন্তোষ বাড়ছে,
রাজনৈতিক শূন্যতা গভীর হচ্ছে, আর বৈধ নেতৃত্বের অভাবে ‘সিস্টেম’-এর প্রতি জনগণের
আস্থা ভেঙে পড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—বাংলাদেশ কি একটি গণআন্দোলনের দিকে
এগোচ্ছে? না কি আসন্ন কোনো বড় সংকট অপেক্ষা করছে?
জনঅসন্তোষের সম্ভাব্য কারণসমূহ
- বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি: তরুণ সমাজ ক্রমেই হতাশ। শিক্ষাক্ষেত্রে বেহাল অবস্থা।
শিক্ষালয়ে বিশৃংখলা বাড়ছে। ছাত্ররা দলে দলে বিভক্ত। শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায়
ভেঙ্গে পড়েছে। যাও আছে, চাকরি নেই। জীবনধারণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
- রাজনৈতিক শূন্যতা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, বিএনপি দুর্বল, নতুন নেতৃত্ব
অনুপস্থিত। সাধারণ মানুষ 'কার পেছনে যাবো'—তা বুঝে উঠতে পারছে না।
- সামাজিক মাধ্যম ও তথ্য বিস্ফোরণ: গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হলেও ফেসবুক, ইউটিউব ও একাধিক অনলাইন
প্ল্যাটফর্মে তথ্য প্রবাহ বাড়ছে—যা সরকার বা কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ
জাগাচ্ছে।
- বিচারহীনতা ও নিপীড়নের ইতিহাস: অতীতে বহু আন্দোলনের বিচার হয়নি, বরং দমন করা হয়েছে। এর
ফলে জমে থাকা ক্ষোভ ধীরে ধীরে বিস্ফোরণের দিকে যাচ্ছে। আইনের শাসন অনুপস্থিৎ,
ফলে বিচার বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ দ্বিধাদ্বন্দে- কি করবে দিশা পাচ্ছে না।
বাংলাদেশে আন্দোলনের ইতিহাস
বাংলাদেশে অতীত অভিজ্ঞতা বলে—যখন গণতন্ত্র স্থবির, অর্থনীতি দুর্বল
এবং নেতৃত্বহীনতা বাড়ে, তখন বিক্ষিপ্ত
থেকে সংগঠিত আন্দোলনের উদ্ভব হয়। এগুলো হয়তো
শুরু হয় ছাত্রদের মধ্যে, পেশাজীবীদের মাধ্যমে বা নির্দিষ্ট ঘটনার প্রতিবাদে।
কিন্তু একবার আগুন ধরলে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
নতুন ডিজিটাল আন্দোলনের ধারা এবং তরুণ প্রজন্মের অপ্রথাগত
চিন্তাভাবনা এই আন্দোলনকে আরো জটিল ও পূর্বাভাসহীন করে তুলছে।
আন্দোলনের সম্ভাব্য সংকট কী?
- সহিংসতা ও রক্তপাত: যদি রাষ্ট্র কঠোর হয়, আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠতে পারে। এতে
রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হবে।
- রাষ্ট্রীয় দমন ও সেনা হস্তক্ষেপ: বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সেনাবাহিনী আবার সক্রিয়
ভূমিকায় আসতে পারে—যা গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি।
- অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও বিভাজন: ধর্মীয়, সামাজিক বা আদর্শিক ভিত্তিতে সমাজ বিভক্ত হয়ে
গেলে তা গৃহবিপ্লবের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
সম্ভাবনার দিকও আছে
এই আন্দোলন যদি গঠনমূলক হয়, তবে তা হতে পারে একটি নতুন রাজনৈতিক পুনর্জাগরণের সূচনা। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন নেতৃত্ব, সহনশীলতা, দূরদৃষ্টি
এবং ঐক্য। ইতিহাস বলছে, প্রত্যেক সংকটই এক সম্ভাবনার জন্ম দেয়। প্রশ্ন হলো, আমরা
কি সেই সম্ভাবনাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত?
উপসংহার
বাংলাদেশ এখন দাঁড়িয়ে আছে এক দ্বিধার মোড়ে। সামনে
হয়তো আসছে আন্দোলন, হয়তো সংঘাত, আবার হয়তো একটি নতুন সূচনা। এই মুহূর্তে সবচেয়ে
জরুরি বিষয় হলো—জনগণের কণ্ঠ যেন শোনা যায়, নেতৃত্ব যেন সৎ হয়, আর রাষ্ট্র যেন
জনগণের পাশে দাঁড়ায়।
🔚 সিরিজ শেষ
Post a Comment