পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন চলছে। সম্প্রতি সুরাব শহরে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (BLA) কার্যক্রম নতুন করে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এবং পর্যবেক্ষকদের মতে, সুরাব শহরের একাধিক সরকারি স্থাপনা—পুলিশ স্টেশন, সেনা চৌকি এবং প্রশাসনিক কার্যালয়—BLA দখলে নিয়েছে। শহরটির পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তারা নিরাপত্তার অভাবে এলাকা ত্যাগ করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।
BLA মুখপাত্র জয়ন্দ বালুচ এক বিবৃতিতে জানান, “আমাদের যোদ্ধারা সুরাব শহরের প্রধান সরকারি দপ্তরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এছাড়া কোয়েটা ও করাচীর সংযোগকারী মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্টগুলিও এখন আমাদের দখলে।” এই বক্তব্য পরিস্থিতির গুরুত্ব ও বিস্তার নির্দেশ করে।
বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে সুরাব শহরের দূরত্ব মাত্র ১৫০ কিলোমিটার। এই কৌশলগত দূরত্ব যদি BLA-এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে স্বাধীন বেলুচিস্তানের পথ আরও সুগম হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বেলুচিস্তানের আন্দোলন শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ডের মুক্তির দাবি নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের পূর্বাভাস হতে পারে।
বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষ, ছাত্রনেতা, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক কর্মীরা গুম ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো রিপোর্ট করেছে। এর প্রেক্ষিতে BLA ও অন্যান্য স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর আন্দোলন দিন দিন তীব্র হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য বেলুচিস্তানের ঘটনাবলী একটি প্রতীকী গুরুত্ব বহন করতে পারে। আমাদের স্বাধীনতা এসেছে ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। বেলুচিস্তানের মানুষের লড়াই সেই ইতিহাসকেই স্মরণ করিয়ে দেয়—একটি জাতি যখন আত্মপরিচয় ও ন্যায়বিচারের জন্য উঠে দাঁড়ায়, তখন দমনপীড়নের দেয়াল বেশি দিন টেকে না।
আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও সাহসী ও দায়িত্ববান নেতৃত্বের প্রয়োজন। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। ইতিহাসের শিক্ষা হলো: কোনো জাতি চিরদিন দখলদার বা স্বৈরশাসকের শাসনে থাকতে পারে না।
আজ বেলুচিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি বার্তা বহন করছে—সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় একটি স্বাধীন জাতির পরিচয়।
Post a Comment