হোয়াইট হাউজে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনীর |
হোয়াইট হাউজে পাকিস্তানি
সেনাপ্রধান: নতুন ভূরাজনীতির ইঙ্গিত
পাকিস্তানের
সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের হোয়াইট
হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে লাঞ্চ নজিরবিহীন। এটি কি কেবল
সৌজন্য, নাকি এক গভীর
কূটনৈতিক বার্তা? একটি পর্যালোচনা।
ভূমিকা
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম
মুনিরের হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে লাঞ্চে অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক
কূটনৈতিক অঙ্গনে এক গভীর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিগত দশকগুলোতে এমন দৃশ্য একেবারেই
বিরল, বিশেষ করে যেখানে সামরিক প্রধানের সঙ্গে সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্টের
সাক্ষাৎ ঘটে রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তার অংশ হিসেবে। প্রশ্ন উঠেছে—এই ঘটনাটি কেবল সৌজন্য
সাক্ষাৎ, নাকি এতে লুকিয়ে আছে বৃহৎ ভূরাজনৈতিক সমীকরণ?
নজিরবিহীন
সাক্ষাৎ: কেন তা ব্যতিক্রম?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত
বেসামরিক নেতৃত্বের মাধ্যমেই অন্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে।
সেনাবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক হলেও তা সাধারণত হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা
পেন্টাগনে। কিন্তু একজন পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্টের
সঙ্গে লাঞ্চ—এটা ইঙ্গিত করে একটি ব্যতিক্রমী বার্তা:
· পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর প্রভাবের স্বীকৃতি:
দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে সেনাবাহিনী মুখ্য ভূমিকা
পালন করছে। এই লাঞ্চ হয়তো এই বাস্তবতারই এক কূটনৈতিক স্বীকৃতি।
· আফগানিস্তান-চীন-ভারত ঘিরে নতুন ভারসাম্য খোঁজা:
আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের পুনরুত্থান, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ,
এবং ভারত-চীন উত্তেজনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানকে আবারও 'জিও-স্ট্র্যাটেজিক' অংশীদার
হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
· চীনা প্রভাব মোকাবেলায় পশ্চিমা আগ্রহ:
চীন বর্তমানে পাকিস্তানের বৃহত্তম বিনিয়োগকারী (বিশেষ করে CPEC-এর মাধ্যমে)।
যুক্তরাষ্ট্র চায় না, পাকিস্তান পুরোপুরি চীনের কৌশলগত বলয়ে ঢুকে পড়ুক। এই
কারণে ওয়াশিংটন হয়তো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী।
সেনাবাহিনী
বনাম বেসামরিক সরকার: কার সঙ্গে সম্পর্ক?
এই ঘটনা পাকিস্তানে একটি গুরুত্বপূর্ণ
প্রশ্ন তোলে—আন্তর্জাতিক মিত্ররা আসলে কাকে গুরুত্ব দিচ্ছে? নির্বাচিত বেসামরিক
সরকারকে, নাকি শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে?
এতে একদিকে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের
দুর্বলতাও উন্মোচিত হয়, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বাস্তববাদও ধরা পড়ে।
হোয়াইট হাউজ সম্ভবত জানে, পাকিস্তানে নীতিগত সিদ্ধান্তের অনেকটাই আসে সেনা সদর
দপ্তর রাওয়ালপিন্ডি থেকে, ইসলামাবাদ থেকে নয়।
বার্তাটি
কার জন্য?
· ভারতের জন্য সতর্ক সংকেত:
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও, এই বৈঠক দেখায় যে যুক্তরাষ্ট্র
পাকিস্তানকেও অবহেলা করছে না। এটি ভারসাম্য রক্ষার একটি কৌশল হতে পারে।
· চীনের জন্য বার্তা:
যুক্তরাষ্ট্র বোঝাতে চায়, পাকিস্তান একচেটিয়াভাবে চীনের বলয়ে পড়ে নেই। ওয়াশিংটন
এখনও ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে পারে।
· পাকিস্তানি রাজনীতির জন্য বার্তা:
এই বৈঠক ইঙ্গিত দেয়, সেনাবাহিনী এখনও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের মুখপাত্র।
এটি বেসামরিক রাজনীতিবিদদের জন্য একটি অস্বস্তিকর বার্তা।
উপসংহার
হোয়াইট হাউজে পাকিস্তানি
সেনাপ্রধানের লাঞ্চ নিছক এক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়; বরং এটি বহুমাত্রিক কূটনৈতিক
বার্তা বহন করে। এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা, যুক্তরাষ্ট্রের
কৌশলগত স্বার্থ, এবং দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি-সাম্যচিত্রের একটি নতুন অধ্যায়ের
ইঙ্গিত হতে পারে।
إرسال تعليق