ট্রাম্প বলছেন ‘যুদ্ধ চাই না’ — কিন্তু তিনি কি আসলেই শান্তিকামী?
ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন তিনি যুদ্ধ চান না। আফগানিস্তান থেকে সেনা ফিরিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কিন্তু এসব কি সত্যিকারের শান্তির চেষ্টা, নাকি অন্যরকম যুদ্ধের কৌশল? বিস্তারিত বিশ্লেষণ পড়ুন এই নিবন্ধে।
ভূমিকা
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্সির
পুরো সময় জুড়ে দাবি করে গেছেন—"আমি যুদ্ধ চাই না। আমি শান্তি চাই।" ট্রাম্প
প্রশাসনের বৈদেশিক নীতিতে যুদ্ধ-বিরোধী বক্তব্য বারবার উঠে এসেছে। নির্বাচনের ক্যাম্পিং-এর
সময়ও এই কথা বলেই জণগন তথা বিশ্ব জনমত আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তিনি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা
প্রত্যাহার শুরু করেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন, এমনকি
ইরান নিয়েও সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই ‘যুদ্ধ-বিরোধী’
অবস্থান কি আদৌ বাস্তবতার প্রতিফলন ছিল, নাকি এর আড়ালে ছিল অন্য কোনো কৌশল?
ট্রাম্পের
"যুদ্ধ চাই না" বক্তব্য: উদ্দেশ্য ও বাস্তবতা
১. জনগণের
মন জয় ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি
ট্রাম্প জানতেন যে যুদ্ধের খরচ
আমেরিকান নাগরিকরা কাঁধে নিতে চায় না। ২০০১ সালের আফগান যুদ্ধ এবং ২০০৩ সালের ইরাক
যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রিতা জনগণকে ক্লান্ত করে তোলে। তাই তিনি "No more endless
wars" স্লোগান দিয়ে সাধারণ আমেরিকানদের কাছে নিজেকে একজন বিচক্ষণ নেতা হিসেবে
তুলে ধরেন, যিনি মার্কিন সৈন্যদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে চান।
২. ইরানকে
লক্ষ্য করে ‘যুদ্ধ নয়, কিন্তু কঠোরতা’
২০১৮ সালে ট্রাম্প ইরান পরমাণু চুক্তি
(JCPOA) থেকে একতরফাভাবে বের হয়ে যান। এরপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
একদিকে তিনি সরাসরি যুদ্ধের পথ পরিহার করেন, অন্যদিকে ইরানের অর্থনীতি দুর্বল করে
ফেলে চাপে ফেলেন।
২০২০ সালে কাসেম সোলেইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করে তিনি একটি সীমিত সামরিক
পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা বড় যুদ্ধ না হলেও স্পষ্টভাবে যুদ্ধপ্রবণ একটি কূটনৈতিক
বার্তা ছিল।
৩. উত্তর
কোরিয়ার সঙ্গে নাটকীয় ‘বন্ধুত্ব’
কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রথমবারের
মতো উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেছেন। কিন্তু সমঝোতা হয়নি, পরমাণু
কর্মসূচি বন্ধ হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল মূলত ট্রাম্পের মিডিয়া-অভিনয় এবং
আংশিক নির্বাচনী কৌশল—যার পেছনে বাস্তব কূটনৈতিক সাফল্য ছিল না।
৪. চীন ও
বাণিজ্য যুদ্ধ
ট্রাম্প চীনের সঙ্গে কোনো সামরিক
সংঘাতে জড়াননি, কিন্তু এক ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু করেন। ট্যারিফ (শুল্ক) বৃদ্ধি,
প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা, হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ—এসব ছিল শীতল
যুদ্ধের নতুন সংস্করণ। একে “Economic Warfare” বলা চলে, যা সরাসরি যুদ্ধ না হলেও
দ্বন্দ্বপূর্ণ এবং আক্রমণাত্মক।
৫.
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার
বুশ ও ওবামা সরকার যেখানে ব্যর্থ
হয়েছেন, ট্রাম্প সেই দীর্ঘ যুদ্ধ থেকে সেনা সরিয়ে আনার সাহস দেখিয়েছেন। তবে, এই
প্রত্যাহার ছিল বিশৃঙ্খল ও প্রস্তুতিহীন। পরবর্তীতে বাইডেন এর বাস্তব রূপ অনুভব
করেন এবং তা আফগানিস্তানের পতনে রূপ নেয়।
আসলে কি ট্রাম্প
যুদ্ধবিরোধী?
ট্রাম্প ‘যুদ্ধবিরোধী’ ছিলেন না, বরং
তিনি ছিলেন 'মিলিটারি কৌশল ছাড়া চাপ প্রয়োগকারী' এক নেতা। তিনি যুদ্ধ
চাননি, কারণ তা ব্যয়বহুল ও রাজনৈতিকভাবে অজনপ্রিয়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তিনি
শান্তিকামী ছিলেন। বরং তিনি এক প্রকার নতুন কূটনৈতিক ঘরানা এনেছেন—যা ছিল হুমকি,
নিষেধাজ্ঞা, এবং চমকপ্রদ ব্যক্তিগত রাজনীতির মিশ্রণ।
উপসংহার
ট্রাম্পের “যুদ্ধ চাই না” নীতি মূলত
একধরনের রাজনৈতিক ব্র্যান্ডিং—যেখানে শান্তি নয়, বরং ক্ষমতা প্রদর্শনই ছিল
মুখ্য। তিনি যুদ্ধকে এড়িয়ে চলেছেন ঠিকই, কিন্তু যুদ্ধের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার
করেছেন অর্থনৈতিক চাপ, ব্যক্তিগত বৈঠক, হুমকি ও মিডিয়া কৌশল। তাই তার বিশ্বনীতি
শান্তির ছিল না—বরং ছিল “শান্তির ছায়ায় কঠোরতা”।
সংক্ষেপে বললে:
ট্রাম্প বলেছিলেন, "আমি যুদ্ধ
চাই না।"
কিন্তু বাস্তবে তার কৌশল হলো, "আমি যুদ্ধ ছাড়াও জিততে পারি।"
إرسال تعليق