জুলাই আন্দোলনের
তালিকায় জালিয়াতি! ভুয়া আহত ও শহীদদের নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ। ভুয়া মেডিক্যাল কাগজ ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারি তালিকায় নাম
লিখিয়েছেন অনেকে। শহীদের নামেও হয়েছে প্রতারণা। বিশ্লেষণে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কোটা আন্দোলন ধীরে
ধীরে সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে রূপ নেয়- নাম পায় ‘জুলাই আন্দোলন’। সেই আন্দোলনে
আহত ও নিহতদের সরকারি তালিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে
অনেকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে অর্থসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। বিস্তারিত বিশ্লেষণে
উঠে এসেছে ‘শহীদদের’ নামেও জালিয়াতির প্রমাণ।
প্রাথমিক
উদ্বেগ ও অভিযোগ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন জানায়— ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর আহতদের MIS তালিকা “স্বচ্ছ ও
গ্রহণযোগ্য”ভাবে তৈরি হয়নি। ভুয়া মেডিক্যাল ডকুমেন্ট ও রাজনৈতিক প্রভাব দিয়ে অনেকে
তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
তালিকা
তৈরির প্রচলিত প্রক্রিয়া
- আবেদন পদ্ধতি:
জাতীয় পরিচয়পত্ৰ, ঠিকানাসহ হাসপাতালের চিকিৎসা প্রমাণ জমা দিতে হত।
- যাচাই বিভাগ:
জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, বিশেষ সেল যাচাই করতো।
- সময়সীমা:
১৫ জুলাই–৫ আগস্টের ঘটনায় শহীদ বা আহতদের অন্তর্ভুক্তি করার নিয়ম ছিল।
বড় ধরনের ত্রুটি ও জালিয়াতির চিত্র
- আন্দোলনভিত্তিক
না হলেও, অন্য সময়ে দুর্ঘটনায় আহত বা মারা যাওয়া লোকেদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
- রাষ্ট্রীয়
প্রক্রিয়ার বাইরে উপকার পাওয়ার জন্য ভুয়া কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
কিছু
উল্লেখযোগ্য উদাহরণ
- মো. ইলিয়াস হোসেন হিরণ: ৭ আগস্ট পূর্ব শত্রুতায় আহত, কিন্তু জাল ডকুমেন্ট দিয়ে
‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত; দুই লাখ টাকা পেয়েছেন এবং স্বীকারোক্তি
দিয়েছেন
- মো. লিটন:
১৪ জুলাই আহত দাবি করে ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছেন।
- শহীদের
তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভুয়া: যেমন ইমতিয়াজ হোসেন (চাটখিল)—থানা লুট করে
অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় অসাবধানতা বা অজ্ঞতাবশতঃ ‘মিস ফায়ার’ হয়ে আহত ও পরে
নিহত হয়। অথচ তার নাম শহীদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত।
- আবু সাইদ,
বিজয়, আল আমিন—ফৌজদারি বা দুর্ঘটনায় হত, আন্দোলনে নিহত না হলেও শহীদ হিসেবে
নাম লেখানো হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের
পদক্ষেপ
- মোট
~৭০ জন জালিয়াতের ঘটনা শনাক্ত, বেশিরভাগের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চলছে। কেউ
মুচলেকা দিয়ে ছাড় পেয়েছে।
- ১৯
জনের নাম বাতিলের চিঠি জমা দেওয়া হয়েছে।
- ভবিষ্যতে
‘ফ্রড ডিটেকশন টিম’ গঠন ও সরকারি পক্ষের যাচাই ব্যবস্থা দাবি করা হয়েছে।
সরকারি/বিশেষ
সেলের প্রতিক্রিয়া
- ম. মশিউর রহমান
(বিশেষ সেলের যুগ্ম-সচিব): শহীদের তালিকায় কিছু সংখ্যক আপত্তি থাকলেও, আহতদের
তালিকায় বড় ধরনের আপত্তি আছে; অবৈধ নাম পেয়ে পুনঃযাচাই করা হচ্ছে।
বিশ্লেষণ
ও উপসংহার
· তথ্যপ্রক্রিয়ার দুর্বলতা: প্রাথমিক যাচাই না হওয়া এবং চাপের ভিত্তিতে দ্রুত তালিকা প্রণয়ন অনেক অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছে।
· জালিয়াতির আর্থিক উৎসাহ: মৃত/আহতদের অর্থ এবং পুনর্বাসনের সুযোগ মানুষকে ভুয়া দাবিতে প্ররোচিত করেছে।
· দায়ী প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন: ‘ফ্রড ডিটেকশন টিম’ সবার জন্য একদম প্রাথমিকভাবে জরুরি ও অপরিহার্য।
· আইনি ও নৈতিক সংকট: শহীদদের নামের অপব্যবহার রাষ্ট্রীয় প্রতিপত্তি ও সামাজিক মূল্যবোধে বড় আঘাত।
· সরকারি নেতৃত্বের দায়িত্ব: জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও বলবৎ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত না হলে, ভবিষ্যতে জাতীয় আন্দোলনসমূহে ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে।
নাম ভুলভালভাবে অন্তর্ভুক্তির ঘটনা শুধুমাত্র আর্থিক অনিয়ম
নয়—এটি সম্পূর্ণরূপে দূর্নীতি এবং সুজোগের অপব্যবহার। দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া
ভবিষ্যতে এই ধরনের অনিয়ম পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ কার্যকর হবে না।
সূত্রঃ banglanews24.com।
আরো পড়ুন:
https://www.bruchlee.com/2025/05/bangladesh-interim-government-election-awamileague.html
Post a Comment