ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে তাঁর সর্বমুখী ক্ষমতা বিপ্লবী গার্ডের অন্তর্গত ‘সুপ্রিম হাউস’-এর হাতে হস্তান্তর করেছেন। এটি শুধু একটি প্রশাসনিক রদবদল নয়, বরং ইরানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও রাজনৈতিক কৌশলে এক বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
এটি কোনো প্রথাগত বা সীমিত প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়—বরং পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘটনা। এর অর্থ, এখন থেকে ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC) পারমাণবিক হামলার মতো কৌশলগত সিদ্ধান্তও নিতে পারবে সর্বোচ্চ নেতার অনুমোদন বা ধর্মীয় ফতোয়া ছাড়াই। এটি ইরানি ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে আরেক ধাপে এগিয়ে দেয়।
এই সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে ভবিষ্যতের 'খামেনি-পরবর্তী' বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে। যদি হঠাৎ তাঁর মৃত্যু, শারীরিক অক্ষমতা বা হত্যার মতো কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে যেন ইরানে প্রশাসনিক অচলাবস্থা বা অরাজকতা সৃষ্টি না হয়। নতুন সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বিপ্লবী গার্ড সাময়িকভাবে রাষ্ট্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ইরান এখন একরকম “আধ্যাত্মিক সমর্থিত সামরিক শাসন”-এ প্রবেশ করছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে এই পরিবর্তন আরও তাৎপর্যপূর্ণ। বিপ্লবী গার্ড এখন আর কেবল একটি নিরাপত্তা বাহিনী নয়, বরং শাসনব্যবস্থার মূল নিয়ামক শক্তি। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নমনীয়তা কমে যাবে এবং জবাবদিহিতার পরিসর আরও সংকীর্ণ হবে।
এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে একটি স্পষ্ট ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে। খামেনির জীবনের প্রতি হুমকি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তিনি অতিমাত্রায় সতর্ক। পাশাপাশি, এটি হতে পারে দেশের ‘সংস্কারপন্থীদের’ সম্ভাব্য উত্থান রুখে দেওয়ারও একটি কৌশল, যারা মূলত পশ্চিমা সহানুভূতিসম্পন্ন।
এই সিদ্ধান্ত বিশ্বের বিশেষত আমেরিকা ও ইসরায়েলের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে: “গাইড” বা সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করলেও ইরানের কাঠামো ভেঙে পড়বে না, বরং আরও র্যাডিকাল শক্তির হাতে ক্ষমতা চলে যাবে। এ এক কৌশলগত জবাব এবং প্রতিরোধের বার্তা।
বর্তমানে ইরানের সামরিক পদক্ষেপগুলো আর শুধু প্রতিক্রিয়াশীল নয়, বরং সুপরিকল্পিত ও আগ্রাসী হবে। বিপ্লবী গার্ড সরাসরি সিদ্ধান্ত নেবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নে সক্ষম হবে, যা ভবিষ্যতে পারমাণবিক কর্মসূচি বা আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এই মুহূর্তে ইরানের ক্ষমতার প্রতীক হয়ে উঠেছে খাকি পোশাকধারী সামরিক শাসকগোষ্ঠী, আবায়া পরিহিত ধর্মীয় নেতা নয়। যদিও ধর্মীয় নৈতিকতা ও আদর্শ এখনো বাহ্যিক কাঠামোর অংশ, কিন্তু মূল নিয়ন্ত্রণ এখন সম্পূর্ণরূপে এক সামরিক নেতৃত্বাধীন ‘গভীর রাষ্ট্র’-এর হাতে।
---
ইরান যেন ঝড়ের পূর্ব মুহূর্তে নিজেকে পুনর্গঠন করছে। ভবিষ্যতের যেকোনো অনিশ্চয়তা বা হুমকির মুখে প্রস্তুত থাকতে এ এক কৌশলগত চাল। আঞ্চলিক দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক মহলকে এর তাৎপর্য গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। কারণ, এই ক্ষমতা হস্তান্তর কেবল একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়—এর প্রভাব পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিতে পড়তে চলেছে।
Post a Comment