হালাল সার্টিফিকেট জালিয়াতি: হালাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চার শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

 

গ্রেপ্তারকৃত নকল হালালা সার্টিফিকেট বিক্রেতারা

জীবনে গিয়েছিই মাত্র দু-চারিটি দেশে। প্রসঙ্গক্রমে সেসব দেশের স্মৃতিবিজড়িত দুয়েকটি কথা মনে পড়ে যায়, তাই উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করি।

২০১৮ সালে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে চীনে গিয়েছিলাম। সেদেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে বসলেই সাপ হোক, ব্যাঙ হোক, শৃগালের ঠ্যাঙের স্যুপ হোক- একটা কথাই বলতো, ‘হালাল ফুড’! কারণ, তারা জানে, আমরা ব্যবসায় দুই নম্বরি করলেও খেতে বসলে ‘হালাল ফুড’ খুজি।

 

মূল ঘটনা

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের উত্তর প্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) মুম্বাই-ভিত্তিক 'হালাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া'-র চারজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা কোনো সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন কোম্পানিকে ভুয়া হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করে অর্থ আদায় করছিলেন।

 

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা:

  • মাওলানা হাবিব ইউসুফ প্যাটেল (সভাপতি)
  • মাওলানা মুদাসসির সাপাদিয়া (সহ-সভাপতি)
  • মোহাম্মদ তাহির জাকির হুসেইন চৌহান (সাধারণ সম্পাদক)
  • মোহাম্মদ আনোয়ার (কোষাধ্যক্ষ)

তদন্তে জানা যায়, এই সংস্থা কোনো ধরনের ল্যাব টেস্ট বা উৎপাদন প্রক্রিয়া যাচাই ছাড়াই হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করত। তারা প্রতি সার্টিফিকেটের জন্য প্রায় ১০,০০০ রুপী এবং প্রতিটি পণ্যের জন্য ১,০০০ রুপী করে চার্জ করত। এছাড়া, এই সংস্থা কোনো সরকারি সংস্থা, যেমন ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর সার্টিফিকেশন বডিজ (NABCB) থেকে অনুমোদিত নয়।

 

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছেন যে তারা কোনো পণ্যের নমুনা সংগ্রহ বা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট ইস্যু করতেন। তাদের আর্থিক লেনদেনের হিসাবও অস্পষ্ট। এই সংক্রান্ত আরও তদন্ত চলছে এবং আরও গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

উত্তর প্রদেশে হালাল সার্টিফিকেট সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা:

২০২৩ সালের নভেম্বরে, উত্তর প্রদেশ সরকার রাজ্যে হালাল সার্টিফিকেটযুক্ত খাদ্যপণ্যের উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিতরণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করে। তবে, রপ্তানির জন্য নির্ধারিত পণ্য এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত।

 

আদালতের সিদ্ধান্ত:

২০২৪ সালের মে মাসে, এলাহাবাদ হাইকোর্ট গ্রেপ্তারকৃত চার কর্মকর্তাকে জামিন প্রদান করে। তবে মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলমান।

 

উপসংহার:

এই ঘটনা হালাল সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণা রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এতে আরো প্রমাণিত হয় যে, আসলে একশ্রেণীর মোল্লা-পুরোহিতরা ধর্মকে প্রয়োজনে অবৈধ ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে।

 




Post a Comment

Previous Post Next Post