পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা ইমরান খান সম্প্রতি ফিল্ড মার্শাল
আসিম মুনিরের বিরুদ্ধে এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। কারাবন্দী অবস্থায় সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যম X-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী বুশরা
বিবির ওপর প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করেছেন আসিম মুনির।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Hindustan
Times-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ইমরান অভিযোগ করেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে
আইএসআই প্রধান পদ থেকে আসিম মুনিরকে সরিয়ে দেন। এরপর থেকেই বুশরা বিবিকে টার্গেট
করেন মুনির। ইমরান খান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি যখন আসিম মুনিরকে অপসারণ
করি, তখন তিনি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আমার স্ত্রী বুশরা বিবির সঙ্গে যোগাযোগ
করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বুশরা বিবি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, তিনি এতে জড়িত নন এবং
তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন না।”
তিনি আরও দাবি করেন, “বুশরা বিবির ১৪
মাসের অন্যায্য কারাবাস এবং কারাগারে তাঁর প্রতি অমানবিক আচরণ—এই সবকিছুর পিছনে
আসিম মুনিরের প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাবই দায়ী।”
বর্তমানে পাকিস্তানের ‘বাস্তবিক
ক্ষমতা’ যে সেনাপ্রধানের হাতে, সে ব্যাপারে দেশ-বিদেশের পর্যবেক্ষকদের মত প্রায়
অভিন্ন। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভা, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও
নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি। অপারেশন সিঁদুর সফলভাবে সম্পন্ন করার পর তাঁকে
ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তবে সেই শরিফকেও ছেড়ে
কথা বলেননি ইমরান। তাঁর অভিযোগ, “গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার সরিয়ে
দুর্নীতিবাজ শরিফ ও জারদারিদের বসানো হয়েছে। আমাকে ও আমার দলকে পরিকল্পনা করে
বন্দি করা হয়েছে।”
২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির জেলে
বন্দি আছেন ইমরান খান। তাঁর দলের একাধিক কর্মসূচিতে সেনা-পুলিশি দমন-পীড়নের অভিযোগ
রয়েছে। সেনা ছাউনিতে হামলার অভিযোগে বহু নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। অন্যদিকে পিটিআই
দাবি করে, এটি ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের সাজানো নাটক।
অদৃশ্য
গণতন্ত্র ও পশ্চিমা নীরবতা
এখানে একটি অপ্রিয় কিন্তু
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে—পাকিস্তান বা বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র কোথায়? যেখানে
নির্বাচিত নেতাদের জেলে পুরে পুতুল সরকার বসানো হয়, সেখানে গণতন্ত্র কি শুধুই
ভোটের দিনে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ?
অথচ এই দুই দেশেই এখন আর
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ কিংবা তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থাগুলো সেই
পুরনো গলায় ‘গণতন্ত্রের ছবক’ দেয় না। কারণ, তাদের প্রয়োজন কেবল ‘অনুগত
সরকার’—নির্বাচন আর মানবাধিকারের মোড়কে। পাকিস্তানে শরিফ-মুনির জোট কিংবা
বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে ‘বিনা ভোটে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার’—দু’জায়গাতেই
পশ্চিমা শক্তির পছন্দসই পাপেট বসে গেছে। তাই আজ মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্রহীনতা,
কিংবা বিচারহীনতা নিয়ে তাদের আর মাথাব্যথা নেই।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের অঞ্চল কি ধীরে
ধীরে গণতান্ত্রিক শূন্যতার এক বিপজ্জনক যুগে প্রবেশ করছে?
Post a Comment