দেশের ৫ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত: কোন মাদকে কতজন?

 

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে মাদকাসক্তির চিত্র দিন দিন উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৮৩ লাখেরও বেশি মানুষ যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ- কোনো না কোনো ধরনের মাদকে আসক্ত। এই সংখ্যা শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং একটি সমাজের ভেতরে বেড়ে ওঠা গভীর সমস্যার ইঙ্গিত।

 

মোট আসক্তের সংখ্যা:

🔹 ৮৩ লাখ (সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সম্মিলিত তথ্যানুযায়ী)
🔹 এদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি পুরুষ, বাকিরা নারী ও অল্প কিছু শিশু-কিশোর।

 

কোন মাদকে কতজন আসক্ত?

মাদকের ধরন

আনুমানিক আসক্তের সংখ্যা

মন্তব্য

ইয়াবা

প্রায় ৫০ লাখ

সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য। মূলত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক বিস্তার। মায়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসে।

গাঁজা

প্রায় ১৫ লাখ

তুলনামূলক পুরনো ও দেশীয়ভাবে উৎপাদিত। বিভিন্ন এলাকায় সামাজিকভাবে সহনশীলও অনেক জায়গায়।

ফেনসিডিল

প্রায় ৭ লাখ

মূলত ভারত থেকে আসে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশি জনপ্রিয়।

হেরোইন/ব্রাউন সুগার

প্রায় ৫ লাখ

অতি ব্যয়বহুল ও অত্যন্ত ক্ষতিকর। মধ্যবিত্ত ও ধনী শ্রেণির কিছু অংশে বিস্তার।

ঘুমের ওষুধ (স্লিপিং পিল)

প্রায় ৩ লাখ

সহজপ্রাপ্য ও কম দামে পাওয়া যায় বলে গোপনে ব্যবহার বেড়েছে।

ইনহেল্যান্ট/ড্যান্ডি

প্রায় ১.৫ লাখ

মূলত ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের মধ্যে জনপ্রিয়। জুতার আঠা, স্প্রে ইত্যাদি ব্যবহার করে নেশা করা হয়।

আইস (ক্রিস্টাল মেথ)

প্রায় ৫০ হাজার

নবাগত এক ভয়াবহ মাদক। উচ্চবিত্ত তরুণদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে।

কোডিন সিরাপ, প্যাথেডিন ইত্যাদি

প্রায় ৩০ হাজার

হাসপাতালে ব্যবহৃত ওষুধ, যা অবৈধভাবে বাজারে বিক্রি হয়।

 

সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব

🔻 পরিবারের ভাঙন: মাদকাসক্ত একজন ব্যক্তিই একটি গোটা পরিবারকে ভোগান্তিতে ফেলতে পারে।
🔻 অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি: চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ—অসংখ্য অপরাধের পেছনে মাদকাসক্তির ভূমিকা রয়েছে।
🔻 স্বাস্থ্য ধ্বংস: লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র, স্নায়ু—প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গেই ভয়াবহ প্রভাব পড়ে।
🔻 মৌলিক মূল্যবোধে অবক্ষয়: নৈতিকতা, মানবিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছে।

 

মাদকের সহজলভ্যতা ও চোরাচালান

বাংলাদেশ একটি চোরাচালানী রুটের মাঝখানে পড়েছে—একদিকে ‘সোনার triangle’ (মায়ানমার-থাইল্যান্ড-লাওস) থেকে ইয়াবা আসে, অন্যদিকে ভারত থেকে ফেনসিডিল ও গাঁজা ঢুকে পড়ে। সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর নজরদারি থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন কৌশলে বিপুল পরিমাণ মাদক দেশে প্রবেশ করছে।

 

সরকার ও সমাজের করণীয়

শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানো
পুনর্বাসন কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি ও মান উন্নয়ন
চিকিৎসা ও মনঃচিকিৎসা সহায়তা প্রদান
মাদক পাচার রোধে সীমান্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ
তরুণ প্রজন্মকে বিকল্প বিনোদন ও ক্যারিয়ারমুখী উদ্যোগে সম্পৃক্ত করা

 

উপসংহার

৮৩ লাখ মাদকাসক্ত ব্যক্তি মানে শুধু ৮৩ লাখ সমস্যা নয়—এটা একেকটি পরিবার, একেকটি ভবিষ্যৎ, একেকটি সমাজের ভাঙনের চিত্র। সময় এসেছে সমন্বিত উদ্যোগে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার। এই সমস্যা একা কোনো সরকার, পুলিশ বা পরিবার সমাধান করতে পারবে না—এটি হতে হবে জাতিগত জাগরণ।

Post a Comment

Previous Post Next Post