প্রতীকী ছবি |
ভূমিকা
সুরা আল-আহযাব এর আয়াত নং ৬০ ও ৬১, এই
বিশেষ দুটি আয়াত নিয়ে বিভিন্ন আলেম বিভিন্ন
রকম ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকেন। অনেকে, বিশেষ করে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে
নিয়োজিত কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আয়াত দুটির নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে মানুষ হত্যার
ফতোয়া দিয়ে থাকেন।
এই নিবন্ধে উল্লেখিত আয়াত দুটি সম্পর্কে
বিভিন্ন তাফসিরকারক ও চার মাযহাবের চার ঈমাম কি মতামত দিয়েছেন তা নিয়ে আলোচনা
করবো।
সুরা আল-আহযাব-এর
পরিচিতি
সুরা আল-আহযাব (সুরা নম্বর ৩৩ - আয়াত
সংখ্যা ৭৩) মদীনায় অবতীর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরা। এই সুরায় নবীজি(সাঃ)-এর ব্যক্তিগত,
পারিবারিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের নানা নির্দেশনা রয়েছে। হিজরি ৫ম বর্ষে
খন্দকের যুদ্ধ (গাযওয়ায়ে আহযাব) ও বনি কুরায়যার ঘটনার পর এই সুরাটি নাজিল হয়।
'আহযাব' অর্থ ‘দলবদ্ধ শত্রুগোষ্ঠী’।
এই সুরায় তাদের ষড়যন্ত্র, মুসলিমদের ঈমানের পরীক্ষা, নবীর মর্যাদা, নারীর পর্দা,
এবং মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যমে একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের নৈতিক ও
প্রশাসনিক রূপরেখা উপস্থাপিত হয়েছে।
এই সুরায়:
·
মুসলমানদের
সাহস, ভরসা ও ত্যাগের কথা বলা হয়েছে
·
মুনাফিকদের
কপটতা তুলে ধরা হয়েছে
·
নবী
(সা.)-এর সম্মান, পরিবারের মর্যাদা ও তাঁর সামাজিক ভূমিকার ব্যাখ্যা এসেছে
·
কিছু
ঐতিহাসিক ঘটনা যেমন: জয়নব (রাঃ)–এর সঙ্গে রাসূলের বিয়ে এবং দত্তকপুত্রের (যায়দ
ইবনে হারিসা) সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে
এরই ধারাবাহিকতায় আয়াত ৬০ ও ৬১-তে
রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী তিন শ্রেণির লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে,
যা আজও মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
আলোচনার
মূল বিষয়বস্তুঃ আয়াত ৬০–৬১ প্রসঙ্গে
আয়াত ৬০:
“যদি মুনাফিকরা, যাদের অন্তরে ব্যাধি
আছে এবং যারা মদিনায় গুজব রটায়, তারা যদি বিরত না হয়, তাহলে অবশ্যই আমি আপনাকে
তাদের বিরুদ্ধে উসকে দেব। অতঃপর তারা সেখানে অল্প দিনই আপনার প্রতিবেশী থাকবে।”
আয়াত ৬১:
“তারা থাকবে অভিশপ্ত। তারা যেখানে
পাওয়া যাবে, ধরা হবে ও নির্মমভাবে হত্যা করা হবে।”
অবতরণ-প্রেক্ষিত
(Asbab al-Nuzul)
এই আয়াতদ্বয় তখন নাজিল হয়, যখন মদীনায়
ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা স্থাপনাধীন। তিন শ্রেণির লোক বিশেষভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা
সৃষ্টি করছিল:
- মুনাফিক:
বাহ্যিকভাবে মুসলমান, কিন্তু অন্তরে বিরুদ্ধতা পোষণ করে।
- যাদের অন্তরে ব্যাধি:
নারীকে উত্ত্যক্তকারী ও অশ্লীলতাসেবী।
- মুরজিফ:
সমাজে গুজব ও আতঙ্ক ছড়ায়।
তাদের কার্যকলাপ ইসলামী সমাজের
নৈতিকতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণে আল্লাহ তাদের জন্য কঠোর
শাস্তির ঘোষণা দেন।
তাফসীর
বিশ্লেষণ: তিনজন বিশিষ্ট মুফাসসিরের দৃষ্টিতে
১। ইমাম ইবনে কাসীর (Ibn Kathir)
মূল
ব্যাখ্যা:
- ইমাম ইবনে কাসীর এই আয়াত দুটিকে মুনাফিক ও গুজব
রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কঠিন হুঁশিয়ারি হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
- মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করে তিনি বলেন, তারা বাইরের দিক
থেকে ইসলাম গ্রহণ করলেও অন্তরে শত্রুতায় পূর্ণ ছিল।
- "যাদের অন্তরে ব্যাধি" বলতে তিনি লালসা ও
কামনাসক্ত পুরুষদের বুঝিয়েছেন—যারা নারীদের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকাতো ও
অশালীন কথা বলত।
- "মুরজিফূন" বলতে যারা মদিনায় ভীতি, গুজব ও
অনাস্থা ছড়াত—তাদের বোঝানো হয়েছে।
শাস্তি
সম্পর্কে:
- আল্লাহ যদি নবীকে তাদের বিরুদ্ধে উঠিয়ে দিতেন, তবে:
- তাদের নগর থেকে বের করে দেওয়া হতো,
- তারা হতো অভিশপ্ত, এবং
- নির্মমভাবে হত্যা
করা হতো—এমনকি যেখানে-সেখানে ধরা পড়লে।
ইবনে কাসীর ব্যাখ্যা দেন, এই আয়াত নবী
(সা.)-এর মাধ্যমে সমাজে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও নৈতিকতা রক্ষা করার অধিকার
প্রতিষ্ঠা করে।
২। ইমাম কুরতুবী (Al-Qurtubi)
মূল ব্যাখ্যা:
- কুরতুবী রহ. বলেন, আয়াতগুলো মদিনার সামাজিক ও নৈতিক
অস্থিরতা দমন করার জন্য অবতীর্ণ।
- তিনি বলেন:
- মুনাফিকরা যুদ্ধ বা রাজনীতিতে গোপন ষড়যন্ত্র করত,
- ‘অন্তরে ব্যাধি’ আছে এমনরা সমাজে নৈতিক অবক্ষয়
সৃষ্টি করত, বিশেষত নারীদের উদ্দেশ্যে অশোভন আচরণ করত।
- গুজব রটনাকারীরা যুদ্ধের সময় ভীতিকর খবর ছড়িয়ে
মুসলমানদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করত।
শাস্তির
ধরন:
- কুরতুবী বলেন, “لَنُغْرِيَنَّكَ بِهِمْ” মানে তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবো বা তাদের
বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ব্যবস্থা দেব।
- “تَقْتِيلًا” শব্দের অর্থ তিনি ব্যাখ্যা করেন ‘একটির পর একটি হত্যাকাণ্ড’,
অর্থাৎ তারা যদি সমাজে শান্তি ভঙ্গ করে, তাহলে ধাপে ধাপে নির্মূল করার
বৈধতা আছে।
তার মতে, এটি ছিল আইনগতভাবে
রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে দেওয়া একটি বিধান, যা সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য
প্রযোজ্য।
৩। সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদূদী (Syed Abul A'la
Maududi)
মূল
ব্যাখ্যা (তাফহীমুল কুরআন অনুযায়ী):
- মওদূদী রাহ. বলেন, এই আয়াত দুটি ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় নিরাপত্তা
ও সমাজ রক্ষার জরুরি বিধান প্রকাশ করে।
- তিনি তিন শ্রেণিকে ব্যাখ্যা করেন এভাবে:
- মুনাফিক:
বিশ্বাসঘাতক, যারা ইসলামের শত্রুদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখত।
- অন্তরে রোগ:
যারা লালসায় লিপ্ত হয়ে নারী সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত।
- গুজব রটনাকারী:
যুদ্ধ বা অন্য সঙ্কটময় মুহূর্তে যারা মিথ্যা রটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করত।
রাজনৈতিক
ও সামাজিক বার্তা:
- মওদূদী বলেন, স্বাধীন মতপ্রকাশের নামে কেউ যদি রাষ্ট্রীয়
নিরাপত্তা বা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
নেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের অধিকার।
- তিনি ব্যাখ্যা করেন: “তাদের হত্যা করা হবে নির্মমভাবে”—এর
অর্থ, যদি তারা অনড় থাকে, তবে তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে গণ্য করা হবে।
তিনি সতর্ক করেন, এটি একধরনের ‘শেষ
হুঁশিয়ারি’—শুধু কার্যকর হলে প্রয়োগযোগ্য এবং সংশোধনযোগ্য হলে নাও প্রয়োগ করা
যেতে পারে।
উল্লেখ্য, মওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী ভারত উপ-মহাদেশে ইসলাম ভিত্তিক বিশিষ্ট রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামী’র প্রতিষ্ঠাতা।
তুলনামূলক
সারাংশ
মুফাসসির |
তিন শ্রেণির অর্থ |
শাস্তির ব্যাখ্যা |
মূল বার্তা |
ইবনে কাসীর |
মুনাফিক, কামনাসক্ত, গুজব রটনাকারী |
আল্লাহ নবীকে উঠিয়ে দেবেন, ধ্বংস করা হবে |
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষা জরুরি |
কুরতুবী |
নৈতিক দুর্বল, গুজব ছড়ানো |
অভিশপ্ত ও নির্মূল হবে |
সমাজ রক্ষায় শাস্তি বৈধ |
মওদূদী |
রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী |
শাস্তি ন্যায়সঙ্গত ও নীতিভিত্তিক |
রাষ্ট্রের শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে কঠোরতা প্রয়োজন |
চার
মাজহাবের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা
১। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) — হানাফি মাজহাব
ব্যাখ্যা
(ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে):
- ইমাম আবু হানীফা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয়
শাস্তির বিধানকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
- তাঁর মতে, যদি কেউ গোপনে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করে,
ভীতি ছড়ায় বা নারীদের সম্মানহানি ঘটায়—তবে হাকিম (শাসক) তার উপর তাঅযীর
(অ-নির্ধারিত শাস্তি) প্রয়োগ করতে পারেন।
এই আয়াত
থেকে প্রযোজ্য শিক্ষা:
- হানাফি ফিকহ অনুযায়ী, “মুনাফিক” বা “গুজব রটনাকারী” কেউ যদি
মুসলিম সমাজের নিরাপত্তা ব্যাহত করে, তবে তাকে কারাদণ্ড, নির্বাসন বা
প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।
- ‘তাকতীল’ অর্থে নির্বিচারে হত্যা নয়; বরং তা তখনই
প্রযোজ্য যখন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বা রাষ্ট্রীয় বিদ্রোহ হয়।
২। ইমাম মালিক (রহ.) — মালিকি মাজহাব
ব্যাখ্যা:
- ইমাম মালিক রাষ্ট্রের স্বার্বভৌম কর্তৃত্ব ও জনশৃঙ্খলা
রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে কঠোর ছিলেন।
- তিনি বলেন, যারা মুসলিম সমাজে নারী নির্যাতন বা অশ্লীলতা
ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে হাকিম শাস্তির ব্যবস্থা করতে বাধ্য।
এই আয়াত
অনুযায়ী শিক্ষা:
- এই আয়াত মালিকি মাজহাবে ফিতনা ও গুজব ছড়ানোকে
“হিরাবাহ” (সন্ত্রাসমূলক কাজ) হিসেবে গণ্য করার ভিত্তি দেয়।
- এর ফলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফাঁসি, নির্বাসন, বা চরম
শাস্তি দেওয়া শরিয়তসম্মত হয়।
৩। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) — শাফেয়ী মাজহাব
ব্যাখ্যা:
- ইমাম শাফেয়ী বলেন, ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষে জনগণের
নিরাপত্তা রক্ষা করা ফরয। যেসব ব্যক্তি ভয়ভীতি সৃষ্টি করে, মিথ্যা রটায়,
তারা ইসলামি সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে।
- তাঁর মতে, “তাকতীল” শব্দটি হালকাভাবে নেয়া যাবে না; এটি প্রয়োজনে
মৃত্যুদণ্ড পর্যন্তও নির্দেশ করে।
এই আয়াত
অনুযায়ী শিক্ষা:
- শাফেয়ি মাজহাবে, যদি কেউ মুনাফিকের মতো রাষ্ট্রবিরোধী
কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, তবে তাকে তওবা করতে বাধ্য করা হয়, না করলে প্রশাসনিকভাবে
কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
- রাষ্ট্র চাইলেই এমন ব্যক্তিদের নির্বাসন বা জনসম্মুখে
শাস্তি দিতে পারে।
৪। ইমাম আহমদ ইবন হাম্বাল (রহ.) — হাম্বলী মাজহাব
ব্যাখ্যা:
- ইমাম আহমদ ছিলেন সবচেয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণকারী।
তাঁর মতে, যারা ইসলামী সমাজে নৈতিক ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি
করে, তাদের প্রতি রক্তপাতমূলক শাস্তিও জায়েয হতে পারে।
এই আয়াত
অনুযায়ী শিক্ষা:
- “لَا يُجَاوِرُونَكَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلًا... وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا”—এই আয়াতকে তিনি ব্যাখ্যা করেন: একটি নির্দিষ্ট সীমা
অতিক্রম করলে রাষ্ট্র এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে জান-মাল-সম্পদ দিয়ে প্রতিরোধ করতে
পারবে।
- হাম্বলী মাজহাবে এ ধরনের অপরাধকে বড় ফিতনা ও
যুদ্ধসদৃশ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তুলনামূলক
টেবিল:
মাজহাব |
অবস্থান |
শাস্তির ধরণ |
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা |
হানাফি |
শাস্তি প্রয়োজন হলে তাঅযীর |
শাসকের বিবেচনায় কারাদণ্ড বা তওবা |
রাষ্ট্র ফিতনা রোধে পদক্ষেপ নিতে পারে |
মালিকি |
রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার জন্য শাস্তি বাধ্যতামূলক |
ফাঁসি, নির্বাসন সম্ভব |
গুজব ছড়ানো হিরাবাহ হিসেবে গণ্য |
শাফেয়ী |
তওবা না করলে কঠোর ব্যবস্থা |
প্রকাশ্য শাস্তি বা মৃত্যু |
রাষ্ট্র নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে পারে |
হাম্বলী |
সবচেয়ে কঠোর |
নির্মূলমূলক শাস্তি, মৃত্যুদণ্ড সম্ভব |
শত্রুদের মতোই দমনযোগ্য |
সারসংক্ষেপ
সুরা আল-আহযাবের ৬০ ও ৬১ নং আয়াত
রাষ্ট্রবিরোধী ও সমাজবিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে একটি কঠোর রাষ্ট্রীয় বার্তা। এতে
দেখানো হয়েছে যে, নৈতিকতা রক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সামাজিক শৃঙ্খলা
প্রতিষ্ঠায় ইসলাম কোনো আপস করে না।
তিনজন মুফাসসির ও চার মাজহাবের
ব্যাখ্যায় একমত হওয়া যায় যে, রাষ্ট্র এসব অপরাধের ক্ষেত্রে কঠোর হতে পারে—তবে
অবশ্যই যথাযথ প্রমাণ, ন্যায়বিচার এবং ইনসাফের ভিত্তিতে।
উপসংহার
এই আয়াতদ্বয় কেবল নবী যুগের ঐতিহাসিক
দলিল নয়; বরং আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশ।
নারীর মর্যাদা রক্ষা, গুজবমুক্ত সমাজ গঠন এবং নৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম যে
কঠোর ব্যবস্থা অনুমোদন করে, তা এখানে স্পষ্ট।
ইসলাম শান্তির ধর্ম—কিন্তু সেই
শান্তির পথে যারা অন্তরায় সৃষ্টি করে, তাদের প্রতিরোধ করাও ইসলামি রাষ্ট্রের
দায়িত্ব। তাই এই আয়াত শুধু ধর্মীয় নয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজনীতি বিশ্লেষণের
ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে, সকল
তাফসীরকারক ও ঈমামগন অপরাধীর শাস্তি রাষ্ট্রীয় কাঠামো্র আওতায়, রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত
হওয়ার কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বাইরে কোনো, ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে এমন ক্ষমতা
দেয়া হয়েছে এমন কথা কোনো ঈমাম বা তাফসিরকারক বলেননি। কিন্তু আমরা কি করি? আমরা রাষ্ট্রীয়
কাঠামোর বাইরেও ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গুপ্তহত্যার পথ বেছে
নিতে দেখি।
Islam-law-hypocrites-punishment
Post a Comment