![]() |
প্রতীকী ছবি |
সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে সমালোচনা করছেন—সরকার নাকি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় করে ট্রেন ভাড়া দিয়ে ঢাকায় লোক আনছে! আমি এতে দোষের কিছু দেখি না!
এ প্রসঙ্গে বাবার কাছে শোনা আমার একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। ১৯৪৮ সালের ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতার
বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সারাদেশে ট্রেন ফ্রি করে দিয়েছিলো পাকিস্তান সরকার। যে যেখানে
যায়!
আমার বাবা
(যিনি
২০১৪
সালে
মারা
গেছেন)
তার এক বন্ধুর সাথে সেই ফ্রি ট্রেনে নতুন স্বশুর বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ির কাছের স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পড়েন। এই সুযোগে হার্ডিঞ্জ ব্রীজটাও পরিদর্শণ করা যাবে।
কিন্তু বিপাকে পড়লো, বাড়ি থেকে পদ্মা
পাড়
হলেই যেখানে শ্বশুরবাড়ির গ্রাম,
অথচ
ট্রেনপথ অন্যদিকে। শ্বশুরবাড়ি পাবনা
জেলার
সুজানগরের সাতবাড়িয়া গ্রামে—যেখানে আশেপাশে ৬০
কিলোমিটারের মধ্যে
কোনো
রেলস্টেশন নেই!
যাহোক, গিয়ে নামতে হলো হার্ডিঞ্জ ব্রীজের উত্তর প্রান্তে পাকশি রেল স্টেশনে। সেখান থেকে যেতে হবে বাসে। পাবনা থেকে বাস বদলী করে অন্য বাসে যেতে হবে।
সেকালে ওই এলাকায় ঢাকার এককালের মুড়ির টিন নামক বাসের মতো বেডফোর্ড কোম্পানির বাস চলতো। স্থানীয় ভাষায় তাকে বলতো "মটর"। পাকশি থেকে বাসে পাবনা আসতে পারলেও পাবনা থেকে সাতবাড়িয়া যাওয়ার বাস পেলো না তারা। কারণ, আমাদের সময়েই দেখেছি, পাবনা থেকে সাতবাড়িয়া ধুলি-ধুসর কাঁচা রাস্তায় দিনে একবারই বাস চলতো। ১৯৪৮ সালে সেটাও চলতো কিনা জা্না নেই।
ফ্রি ট্রেন ভ্রমণ তো হলো। কিন্তু গন্তব্য তো শ্বশুর বাড়ি। অগত্যা দিতে হলো হাঁটা। প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা। ক্লান্ত দেহে যেতে যেতে গভীর রাতে একস্থানে গিয়ে পড়লো ডাকাতের কবলে। কিভাবে ডাকাতের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলো সে ঘটনা বলতে গেলে কাহিনী বড় হয়ে যাবে, ফলে যে উদ্দেশ্যে এই লেখা শুরু করেছলাম তা আর বলা হবে না। প্রায় ভুলেই গেছিলাম লেখার উদ্দেশ্য! যাইহোক কোনো প্রকারে জান বাঁচিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যখন পৌঁছলো, তখন "সুবহে সাদেক"!
যে উপলক্ষে এই লেখা শুরু করেছিলামঃ
রাজবাড়ি এক আত্মীয়কে ফোন করেছিলাম- রাজবাড়ি থেকে কি কোনো ট্রেন ছাড়ছে, কি পরিমান লোক আসছে? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কিসের লোক? বললাম, ট্রেন ভাড়া করে ঢাকায় যে লোক আনা হচ্ছে? পরে বুঝতে পেরে বললো, "গেলে কি হবে? যাবে ভাষণ শুনে বাড়িতে চলে এলে যা তাই"! শুনে অবাকই লাগলো!
তাই মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, স্বাধীন বাংলাদেশের "দ্বিতিয় স্বাধীনতা" উপলক্ষে যে ট্রেন ভাড়া করে ভাড়াটে লোক আনা হচ্ছে ঢাকায়, তা ট্রেন কি মানিক মিয়া এভিন্যু পর্যন্ত পৌঁছবে? কমলাপুর কিংবা তেজগাঁ নামলে তো আবার ফিরতি ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনের আশে-পাশেই অবস্থান নেবে। কারণ, “আকাশে কালো মেঘ! কখন বৃষ্টি নামে”!
Post a Comment