জেনেভায় মানবাধিকার পোস্টার প্রদর্শনী: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে উদ্বেগ বাড়ছে

 

৩০ জুন থেকে ২ জুলাই ২৫ পর্যন্ত জাতিসংঘের জেনেভা দপ্তরে ৫৯তম মানবাধিকার কমিশনের নিয়মিত অধিবেশনের সময় অনুষ্ঠিত হয় এই পোস্টার প্রদর্শনী।

বাংলাদেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন, সংখ্যালঘু নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর সর্বশেষ প্রমাণ পাওয়া গেল জেনেভায় আয়োজিত এক ব্যতিক্রমী পোস্টার প্রদর্শনীতে, যেখানে উঠে এসেছে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের গত দশ মাসের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র।

 

জেনেভায় তিনদিনব্যাপী মানবাধিকার প্রদর্শনী

২০২৫ সালের ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত জাতিসংঘের জেনেভা দপ্তরে ৫৯তম মানবাধিকার কমিশনের নিয়মিত অধিবেশনের সময় অনুষ্ঠিত হয় এই পোস্টার প্রদর্শনী। এতে আয়োজক হিসেবে ছিলো জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেকুলার বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মাইনরিটি অ্যালায়েন্স (সুইজারল্যান্ড চ্যাপ্টার) এবং তুমুকু ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল ইউনিয়ন

 

প্রদর্শনীতে মোট ৩০টি পোস্টার প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রদর্শিত হয়। প্রতিটি পোস্টারে ফুটে উঠেছে ড. ইউনুস সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপরাধ।

 

প্রদর্শনীর মূল বিষয়বস্তু

আয়োজক মানবাধিকারকর্মী রহমান খলিলুর মামুন জানান, পাঁচটি মূল শ্রেণিতে বিভক্ত করে পোস্টারগুলো সাজানো হয়। বিষয়গুলো হলো:

  1. বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নিপীড়ন
  2. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ও সাংবাদিক নিপীড়ন
  3. শ্রী চিন্ময় দাস প্রভুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি
  4. জনতার নামে সন্ত্রাস ও নারী-শিশু নিপীড়ন
  5. "শেখ হাসিনা, বিশ্ব বিবেক – মানবতার জননী"

 

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: চোখ খুলে দেয়া বক্তব্য

প্রদর্শনী দেখতে আসা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, এনজিওকর্মী ও মানবাধিকার সংগঠকরা ছবিগুলো দেখে গভীরভাবে আলোড়িত হন।

 

পশতুন মানবাধিকার নেতা ফজলুর রহমান আফ্রিদি নারীদের উপর ধর্ষণের ভয়াবহ ছবিগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এ ধরনের বর্বর, নরকীয় নির্যাতন বাংলাদেশে আবার ঘটছে দেখে মর্মাহত। ড. ইউনুস নোবেল শান্তি পুরস্কারকে কলঙ্কিত করেছেন।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই নৃশংস মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠন জরুরি।”

 

সুইস সোশালিস্ট পার্টির জেনেভা শাখার সাধারণ সম্পাদক সিলভেইন থেভো দ্বিতীয় দিন প্রদর্শনীতে এসে বলেন, “মব ভায়োলেন্সে যারা আক্রান্ত, তাদের প্রতি আমার সহানুভূতি আছে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আমি আমার দলের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করব।”

 

জার্মান মানবাধিকার সংগঠক ক্লাউডিয়া ওয়াডলিচ, যিনি ২ জুলাই সমাপনী দিনে আসেন, বলেন, “গত ১১ মাস ধরে আমি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখানে মব ভায়োলেন্স, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নিরীহ রাজনৈতিক বন্দীদের নিপীড়ন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ—সব চলছে। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।”

 

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মন্তব্য

এই তিনদিনের প্রদর্শনীতে আরও যাঁরা মন্তব্য করেছেন:

  • এলিনা প্রিন্সেস (মানবাধিকারকর্মী, জেনেভা)
  • ড. রাভুরি বালারাজু, ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল
  • নিকোলা শেয়ার্ড (মানবাধিকার এনজিও)
  • আসলাম আনসারি (প্যারিস ভিত্তিক মানবাধিকার রক্ষক)
  • ড. রোহিনি, জেনেভা-ভিত্তিক মানবাধিকার রক্ষক

তাঁরা সকলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিপীড়ন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের বিষয়টি অত্যন্ত গভীর উদ্বেগের সঙ্গে তুলে ধরেন।

 

"আমরা আগের সময়েই ভালো ছিলাম" — সাধারণ মানুষের কণ্ঠে প্রতিবাদ

অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ইউনুস সরকারের সময় বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।” সামাজিক মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ বলছেন—“আমরা আগেই ভালো ছিলাম”, অর্থাৎ তারা মনে করছেন, নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ই ছিল দেশের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও স্থিতিশীল।

 

উপসংহার:
জেনেভার এই মানবাধিকার প্রদর্শনী বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে প্রবল উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং রাজনীতিকদের স্পষ্ট বার্তা—বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এখন সময় এসেছে, বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসে এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার।

Post a Comment

Previous Post Next Post