প্রতীকী ছবি |
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব।
সেনাবাহিনীর নীরবতা কি নিরপেক্ষতা নাকি কৌশলগত প্রভাব? সংবিধান, জনআস্থা ও
আন্তর্জাতিক চাপের প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সবচেয়ে আলোচিত ও রহস্যময়
উপাদান হচ্ছে সেনাবাহিনীর নীরবতা। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের
হঠাৎ পরিবর্তন, অস্থায়ী সরকারের আত্মপ্রকাশ এবং গণতন্ত্রের স্থগিত অবস্থা—সবকিছুর
মাঝে সেনাবাহিনী দৃশ্যত চুপচাপ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে: এই নীরবতা কি বাস্তবেই নিরপেক্ষতা, নাকি এটি একটি
গভীর কৌশল?
বংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি প্রথম পর্ব
সাংবিধানিক অবস্থান বনাম বাস্তব ভূমিকা
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬১ ও ৬২ ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির অধীনে
প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিচালিত হওয়ার কথা। বাস্তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের
কার্যকারিতা প্রায় অকার্যকর এবং অনেক সময় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে
সামরিক সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়ে। কিন্তু বর্তমানে অস্থায়ী সরকারের অধীনে যখন
রাষ্ট্রপতি কার্যত নির্বাহী ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু, তখন সেনাবাহিনীকে ঘিরে বিশেষ প্রত্যাশা ও সন্দেহ—দুটোই বেড়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পেছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা?
- আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতি কি
শুধুই গণআন্দোলনের ফল?
- ড. ইউনুস ঘনিষ্ঠ প্রশাসনের
উত্থানে সেনাবাহিনী কি নিশ্চুপভাবে সায় দিয়েছে?
- সাংবিধানিক ব্যতিক্রম বা
আদালতনির্ভর রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের সম্মতি ছিল কি?
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি।
কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কূটনীতিক বিশ্লেষণে ধারনা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী হয়ত
রাজনৈতিক উত্তেজনা থেকে নিজেকে দূরে রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছে, অথচ
প্রয়োজনমতো ‘ব্যাকডোর কন্ট্রোল’ বজায় রাখছে।
আন্তর্জাতিক চাপ এবং সামরিক ভারসাম্য
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র বারবার নিরপেক্ষ
নির্বাচনের কথা বললেও বাস্তব রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছাড়া তা বাস্তবায়ন
অসম্ভব। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জরুরি অবস্থায় বা নির্বাচনকালীন সরকারে সেনা-ভূমিকা
স্পষ্টভাবে থাকে। বর্তমানে দৃশ্যত সেনারা ব্যারাকে, কিন্তু প্রশাসনিক ও গোয়েন্দা
স্তরে প্রভাব থেকে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জনমনে প্রশ্ন: সেনাবাহিনী কার পক্ষে?
অনেকেই মনে করছেন, সেনাবাহিনী হয়ত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনে
ক্লান্ত, কিন্তু একইসাথে তারা বিকল্প নেতৃত্বের স্থিতিশীলতা নিয়েও সংশয়ে আছে। তাই
তারা এমন একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করতে চাইছে যেখানে সরকার পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্থায়িত্ব বজায় থাকে।
উপসংহার:
সেনাবাহিনীর নিরবতা এখন দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে শক্তিশালী “অদৃশ্য শক্তি” হয়ে
উঠেছে। এটি যদি কৌশল হয়, তবে এর ফলাফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী—অথবা বিপজ্জনকও।
সামনে কোনো গণআন্দোলন বা সহিংসতা দেখা দিলে সেনাবাহিনী কী ভূমিকা নেয়, সেটাই হয়ত
নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশের রাজনীতির পরবর্তী অধ্যায়।
পরবর্তী পর্ব আসছে:
“নিবন্ধনপ্রত্যাশী ১৪৭ দল: গণতন্ত্রের উত্থান না ‘কিংস পার্টি’র খেলা?”
إرسال تعليق