প্রতীকী ছবিঃ সৌজন্যে বাংলা ট্রিবিউন |
জাপানিরা বিশ্বের দীর্ঘজীবী জাতিগুলোর
মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘ ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী
জাপানে গড় আয়ু প্রায় ৮৪ বছর, যা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
শুধু দীর্ঘজীবী হওয়া নয়, জাপানিরা বার্ধক্যকেও সুস্থ, সচল ও আনন্দদায়ক করে
তোলার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী। চলুন দেখি কীভাবে তাঁরা তাঁদের জীবনযাপনের মাধ্যমে
বয়সকে কার্যত "ধরে" রাখেন।
হারা হাচি
বু (Hara Hachi Bu): পরিমিত খাওয়া
ওকিনাওয়া অঞ্চলের মানুষের মধ্যে
প্রচলিত এই নীতির মূল বক্তব্য হচ্ছে – যতক্ষণ না পেট সম্পূর্ণ ভরে, ততক্ষণ খাওয়া।
তাঁরা বলেন, "৮০% পেট ভরে খাওয়া উচিত।" এর ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ
এড়ানো যায়, যা শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং কোষের বার্ধক্য হ্রাস করে।
ইকিগাই
(Ikigai): জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজা
ইকিগাই শব্দের অর্থ – জীবনযাত্রার
উদ্দেশ্য বা জীবনের অর্থ। জাপানিরা মনে করেন, সকালের ঘুম ভেঙে ওঠার জন্য যদি একটি
অর্থপূর্ণ কারণ থাকে, তবে তা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমায়
এবং দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের জীবনের
জন্য উদ্দেশ্য খুঁজে পান, তাঁদের মধ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং আত্মহত্যার হার কম।
খাদ্যাভ্যাস:
উদ্ভিজ্জ ও কম প্রক্রিয়াজাত খাবার
জাপানিদের খাবারে প্রাধান্য পায় –
মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, সবজি, তোফু, সয়া, চাল ও সবুজ চা। তাঁরা চর্বিযুক্ত মাংস ও
চিনি কম গ্রহণ করেন। এসব খাদ্য উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ওমেগা-৩ ফ্যাটি
অ্যাসিড ও আঁশসমৃদ্ধ, যা কোষকে সুরক্ষা দেয় ও বার্ধক্য বিলম্বিত করে।
শারীরিক সচলতা: রোজকার হাঁটা ও
ব্যায়াম
জাপানিরা বিশেষভাবে শারীরিকভাবে
সক্রিয়। তাঁরা হেঁটে যাতায়াত করেন, সাইকেল চালান এবং রেডিও তাইসো নামের হালকা
ব্যায়াম করেন, যা প্রায় শতবর্ষ ধরে জনপ্রিয়। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম
হাড়-মাংসপেশি শক্তিশালী রাখে এবং বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা প্রতিরোধ করে।
সামাজিক
সংযুক্তি ও সহমর্মিতা
জাপানি সংস্কৃতিতে পরিবার, প্রতিবেশী
ও সমাজের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব অনেক। এটি মানসিক প্রশান্তি ও
নিরাপত্তা বোধ তৈরি করে, যা বার্ধক্যের মান উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে,
একাকীত্ব বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
গ্রিন টি
ও গরম পানির গোসল (অনসেন)
জাপানিরা নিয়মিত গ্রিন টি পান করেন,
যা ক্যাটেচিন ও পলিফেনলে ভরপুর – এগুলো বার্ধক্য হ্রাসে সহায়ক। এছাড়া অনসেনে বা
প্রাকৃতিক উষ্ণজলস্নানে গোসল তাঁদের সংস্কৃতির অংশ, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, পেশি
শিথিল করে এবং মানসিক চাপ হ্রাস করে।
নিয়মিত
ঘুম ও চাপমুক্ত জীবন
জাপানিরা ঘুমের গুণগত মানে গুরুত্ব
দেন। রাতে নিরবিচারে ঘুম ও দিনে হালকা বিশ্রাম তাঁদের মধ্যে প্রচলিত। তাঁরা
নিয়মিত জীবনযাপন করেন এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য ধ্যান, প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ
ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন।
উপসংহার
জাপানিদের দীর্ঘ ও তরতাজা জীবনযাত্রার
পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত ও সচেতন অভ্যাস। খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক বন্ধন, মানসিক
প্রশান্তি ও শারীরিক সচলতা—এই সমন্বিত পদ্ধতি আমাদেরও অনুপ্রাণিত করতে পারে সুস্থ
বার্ধক্য অর্জনের পথে। তাই শুধু বেঁচে থাকা নয়, ভালোভাবে বেঁচে থাকার কৌশল জানতে
চাইলে, জাপানিদের জীবনদর্শন হতে পারে একটি দিকনির্দেশনা।
إرسال تعليق