বয়স অনুযায়ী দিনে কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত

ছবিঃ উইকিপিডিয়া থেকে



ভাত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, বিশেষ করে বাংলাদেশি খাবারের তালিকায়। কিন্তু অনেকেই জানেন না, বয়স, ওজন, কাজের ধরন, ও শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ভাত খাওয়ার পরিমাণ ভিন্ন হওয়া উচিত। অতিরিক্ত ভাত খাওয়া যেমন ওজন বাড়াতে পারে, তেমনি কম খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির অভাব দেখা দিতে পারে।

এই নিবন্ধে আমরা জানবো বয়স অনুযায়ী দিনে কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত এবং কীভাবে ভাতকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাদ্য তালিকায় রাখা যায়।

 

ভাত খাওয়ার পুষ্টিগুণ

১ কাপ রান্না করা সাদা ভাতে (প্রায় ১৫০–১৬০ গ্রাম) থাকে:

  • কার্বোহাইড্রেট: ৪৫ গ্রাম
  • ক্যালোরি: প্রায় ২০০
  • প্রোটিন: ৪ গ্রাম
  • ফাইবার: ০.৫ গ্রাম
  • চর্বি: প্রায় ০.৪ গ্রাম

সাদা ভাত মূলত শক্তির প্রধান উৎস, কিন্তু এতে ফাইবার ও ভিটামিনের পরিমাণ কম থাকে। তাই ভাতের সঙ্গে অন্যান্য খাবার যুক্ত করা জরুরি।


বয়স অনুযায়ী প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাবেন?

বয়স

গড় চাহিদা (রান্না করা ভাত)

পরামর্শ

১–৩ বছর

১/৩ – ১/২ কাপ, ২–৩ বেলা

খিচুড়ি বা নরম ভাত দিন

৪–৮ বছর

১/২ – ১ কাপ, ৩ বেলা

সঙ্গে ডাল, সবজি দিন

৯–১৩ বছর

১ – ১.৫ কাপ, ২–৩ বেলা

শারীরিক বৃদ্ধির সময়

১৪–১৮ বছর

১.৫ – ২ কাপ, ২–৩ বেলা

কিশোর/কিশোরীদের জন্য

১৯–৫০ বছর (নারী)

১ – ১.৫ কাপ, ২ বেলা

হালকা কাজের ক্ষেত্রে

১৯–৫০ বছর (পুরুষ)

১.৫ – ২.৫ কাপ, ২ বেলা

পরিশ্রম অনুযায়ী বাড়ানো যায়

৫০+ বছর

১ – ১.৫ কাপ, ১–২ বেলা

হজমের ক্ষমতা বিবেচনায় কম রাখুন

 

টিপস:
১ কাপ রান্না করা ভাতে প্রায় ২০০ ক্যালোরি থাকে। এটি আপনার দৈনিক শক্তির ১০–১৫% হতে পারে।

 

কারা সাবধানে ভাত খাবেন?

ডায়াবেটিক রোগীরা:

ভাতে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) থাকে, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিক রোগীরা ভাত কম খেয়ে রুটি, ব্রাউন রাইস বা শাকসবজি খাওয়ার দিকে ঝুঁকতে পারেন।

 

ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে:

ভাতের পরিবর্তে আঁশযুক্ত খাবার, যেমন লাল চাল, ব্রাউন রাইস বা ওটস খাওয়া ভালো। ভাত খেলে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

 

বয়স্করা:

বয়স বাড়ার সঙ্গে হজমের ক্ষমতা কমে যায়, তাই বেশি ভাত খাওয়া বমি ভাব, গ্যাস্ট্রিক বা দুর্বলতার কারণ হতে পারে।

 

ভাত খাওয়ার স্বাস্থ্যকর উপায়

  • ভাতের সঙ্গে অবশ্যই ডাল, শাকসবজি, মাছ/ডিম/মাংস খেতে হবে।
  • হলুদ চাল বা ব্রাউন রাইস ব্যবহার করলে ফাইবার ও মিনারেল বেশি পাওয়া যায়।
  • রাতে হালকা খাবার যেমন অল্প ভাত বা রুটি খাওয়া উচিত।
  • ভাজাপোড়া বা অতিরিক্ত ঘি/তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • যারা ওজন কমাতে চান, তারা দিনে একবেলা ভাত ও অন্য বেলায় আটার রুটি খেতে পারেন।

 

উপসংহার

ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ নয়, বরং এটি শক্তির অন্যতম উৎস। তবে বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। শুধু ভাত নয়, পুরো খাদ্যতালিকায় সুষম পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখাই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

 



Post a Comment

أحدث أقدم