প্রতীকী ছবি |
বাংলা গ্রীষ্মের কথা উঠলেই প্রথম যে ফলটির কথা মনে আসে, তা হলো আম। একে শুধু ফল বললে ভুল হবে—আম বাঙালির সংস্কৃতি, আবেগ ও খাদ্যরুচির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কবি থেকে কৃষক, শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার মনেই আম নিয়ে একধরনের আলাদা উন্মাদনা কাজ করে।
আমের ইতিহাস ও উৎপত্তি
আমের উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশে, প্রায় ৪,০০০ বছর আগে। সংস্কৃত ভাষায় একে বলা হতো "আম্র", যার উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও সাহিত্যে। মোগল আমলে আমের বিভিন্ন জাতের চাষ শুরু হয় এবং এর নানা বৈচিত্র্য দেখা যায়। আজ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মিলে শত শত জাতের আম উৎপন্ন হয়।
আমের জাত ও স্বাদবৈচিত্র্য
বাংলাদেশে প্রচলিত কয়েকটি বিখ্যাত আমের জাত হলো:
-
হিমসাগর: সুগন্ধি ও রসালো, সাধারণত মে মাসে পাওয়া যায়।
-
ল্যাংড়া: একটু আঁশযুক্ত কিন্তু অত্যন্ত মিষ্টি।
-
ফজলি: আকারে বড় ও দেরিতে পাকে, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ব্যবহৃত হয় বেশি।
-
আম্রপালি ও গোপালভোগ: রসে ভরপুর এবং দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
আম কেবল স্বাদে নয়, পুষ্টিতেও অনন্য। এতে আছে:
-
ভিটামিন A, C, E এবং K
-
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
-
ফাইবার ও প্রাকৃতিক চিনি
এই উপাদানগুলো চোখের জন্য ভালো, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সহায়তা করে।
আমের অর্থনীতি ও রপ্তানি
বাংলাদেশে আম একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে ব্যাপক আমচাষ হয়। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আম মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপেও রপ্তানি হয়।
আম সংস্কৃতিতে
আম নিয়ে কবিতা, গান, গল্প রচিত হয়েছে বহু আগে থেকেই। নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের লেখায় আম ও আম্রপল্লীর রোমান্টিকতা খুঁজে পাওয়া যায়। গ্রামীণ বাংলায় আমচুরি, আম পাড়া, আম কাঁটার মতো বিষয়গুলো শিশুর মনে একধরনের আনন্দের জন্ম দেয়।
উপসংহার
আম শুধুমাত্র একটি ফল নয়—এটি একটি ঋতু, একটি স্মৃতি, একটি আবেগ। গ্রীষ্মকালের সূর্য যেমন আমাদের জীবনে আলো ছড়ায়, তেমনি আম তার স্বাদে ও ঘ্রাণে আমাদের মন ভরিয়ে তোলে। তাই বলা যায়, "গ্রীষ্ম মানেই আম, আর আম মানেই গ্রীষ্ম।"
Post a Comment