৫টি স্বাস্থ্যকথা যা আমরা যুগ যুগ ধরে ভুল জেনে আসছি!

 
প্রতীকী ছবি

স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আর এই কৌতূহল থেকেই জন্ম নেয় অসংখ্য ভুল ধারণা, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের মনে গেঁথে থাকে। আমরা হয়তো ভাবি এগুলোই সত্য, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই ধারণাগুলো ভিত্তিহীন। চলুন জেনে নিই এমন ৫টি প্রচলিত স্বাস্থ্যকথা যা আমরা যুগ যুগ ধরে ভুল জেনে আসছি!

ভুল ধারণা-১: ডিম শরীরের জন্য খারাপ, কোলেস্টেরল বাড়ায়!

বাস্তবতা: যুগ যুগ ধরে বলা হয়েছে ডিমের কুসুম খেলে নাকি কোলেস্টেরল বাড়ে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এই ভয়ে অনেকেই ডিমের কুসুম ফেলে শুধু সাদা অংশ খান। তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করা কোলেস্টেরল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব সামান্যই প্রভাবিত করে। বরং ডিম হচ্ছে প্রোটিন, ভিটামিন (যেমন ভিটামিন ডি, বি১২) এবং খনিজ পদার্থের (যেমন সেলেনিয়াম) এক চমৎকার উৎস। ডিম খেলে বরং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। দিনে ১-২টি ডিম খাওয়া বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী।

ভুল ধারণা-২: ঠান্ডা লাগলে সর্দি-কাশি হয়!

বাস্তবতা: অনেকেই ভাবেন ঠান্ডা লেগে গেলে বা বৃষ্টির পানিতে ভিজলে সর্দি-কাশি হয়। এটি একটি বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা। সর্দি-কাশি ভাইরাসের কারণে হয়, যেমন রাইনোভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। ঠাণ্ডা আবহাওয়া ভাইরাস ছড়ানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে, কিন্তু ঠাণ্ডা নিজে কোনো ভাইরাস নয় এবং সর্দি-কাশি ঘটাতে পারে না। বরং শীতকালে মানুষ ঘরের ভেতরে বেশি থাকে, যা ভাইরাসের সহজে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়। তাই সর্দি-কাশি থেকে বাঁচতে ভাইরাস থেকে দূরে থাকা জরুরি, শুধু ঠান্ডা এড়ালেই হবে না।

ভুল ধারণা-৩: প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি পান করতেই হবে!

বাস্তবতা: এই কথাটি আমরা সবাই শুনে বড় হয়েছি যে, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি পান করা আবশ্যক। যদিও পর্যাপ্ত পানি পান করা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে ৮ গ্লাসের নির্দিষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আপনার পানির চাহিদা নির্ভর করে আপনার শারীরিক কার্যকলাপ, আবহাওয়া এবং আপনি কী খাচ্ছেন তার ওপর। আপনার শরীর যখন তৃষ্ণার্ত হয় তখন সে আপনাকে সংকেত দেয়। তৃষ্ণা অনুভব করলে পানি পান করুন। শাকসবজি, ফলমূল এবং অন্যান্য পানীয় থেকেও আমরা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পেয়ে থাকি।

ভুল ধারণা-৪: রাতে খেলে মোটা হওয়া যায়!

বাস্তবতা: অনেকে বিশ্বাস করেন, রাতের বেলা খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে। এই ধারণাটি অসম্পূর্ণ। ওজন বৃদ্ধি বা কমার মূল কারণ হলো সারাদিনে আপনি কতটা ক্যালোরি গ্রহণ করছেন এবং কতটা ক্যালোরি খরচ করছেন। আপনি যদি আপনার দৈনন্দিন ক্যালোরি চাহিদার চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করেন, তাহলে আপনার ওজন বাড়বে, তা আপনি দিনের যে কোনো সময়েই খান না কেন। তবে ঘুমানোর ঠিক আগে অতিরিক্ত ভারী খাবার খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে অস্বাস্থ্যকর।

ভুল ধারণা-৫: মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে ক্যানসার হয়!

বাস্তবতা: মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং ক্যানসারের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে বিতর্ক চলছে। অনেকেই মনে করেন, মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন মস্তিষ্কের ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য প্রামাণ্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর ব্যাপক গবেষণায় এখন পর্যন্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের সাথে ক্যানসারের কোনো সরাসরি এবং চূড়ান্ত যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত হয় নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন, যা ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো শক্তিশালী নয়। তবুও সতর্কতার জন্য স্পিকারফোন ব্যবহার করা বা দীর্ঘক্ষণ সরাসরি কানে ফোন না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উপসংহার

স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো আমাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই যখন কোনো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য শুনবেন, তখন তার উৎস যাচাই করা এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। সচেতনতা এবং সঠিক জ্ঞানই আপনাকে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।

সূত্রঃ ইন্টারনেট


Post a Comment

أحدث أقدم