Advertise

সৌদি আরবে পরিবর্তনের হাওয়া: নারীর অধিকার থেকে ধর্মীয় পুলিশের পতন

 

প্রতীকী ছবি

মোহাম্মদ বিন সালমান ইসলামের পবিত্র ভূমিক সৌদি আরবকে আধুনিক এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে চান।

মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)—নামটি এখন শুধু সৌদি আরবের নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের এক সংস্কারক প্রতিচ্ছবি। তিনি সৌদি আরবের ইসলামিক পবিত্র ভূমিকে আধুনিক, সহনশীল ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্রে রূপান্তরের যে স্বপ্ন দেখছেন, তার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে সাহসী কিছু পদক্ষেপ দিয়ে।

এই সংস্কার যাত্রার প্রথম অধ্যায় শুরু হয় নারীদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। হাজার হাজার বছর ধরে সৌদি নারীরা ছিল কঠোর ধর্মীয় বিধিনিষেধ ও সামাজিক পর্দার অন্তরালে। পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে নারীরা ছিল প্রায় অদৃশ্য এক অস্তিত্ব।

কিন্তু মোহাম্মদ বিন সালমান প্রথম ধাক্কাটি দেন ধর্মীয় প্রতিরোধের কেন্দ্রেই। নারীদের অধিকার দিতে বাধা হয়ে দাঁড়ানো ৭২ জন প্রভাবশালী মৌলবাদী ধর্মীয় নেতাকে তিনি কারারুদ্ধ করেন। এরপর একে একে তিনি বাস্তবায়ন করেন এমন কিছু সংস্কার, যা এক দশক আগেও সৌদি আরবের সমাজে অকল্পনীয় ছিল।

সৌদি নারীরা এখনঃ

  • বোরকা বা নিকাব পরবেন কিনা, সে সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারেন।
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ও গাড়ি চালাতে পারেন।
  • একাকী ভ্রমণ, দেশজুড়ে চলাফেরা, গান গাওয়া, নাচ করা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় রিল বানানো—সবই এখন আইনত বৈধ।
  • পুরুষদের সমান অধিকারভিত্তিক আইনগত স্বীকৃতি পাচ্ছেন তারা।

এছাড়া, ধর্মীয় পুলিশ বা "মুতাওয়া"—যাদের কাজ ছিল রাস্তাঘাটে নারীদের পর্দা ও আচরণ তদারক করা—তাদের ক্ষমতা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণের নামে নারী নিপীড়নের এই পুরনো যন্ত্রটি আজ সৌদি আরবে আর কার্যকর নয়।

সৌদি আরব যখন অতীতের গোঁড়ামি ভেঙে এক আধুনিক, অধিকারে বিশ্বাসী সমাজ গড়ে তুলছে, তখন দুঃখজনকভাবে বিশ্বের কিছু অংশ—যেমন ভারত, বাংলাদেশ ও কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্রে—ধর্মান্ধতা ও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। ধর্মের নামে নারীর অধিকার হরণ, অসহিষ্ণুতা ও রাজনীতিকরণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

এমবিএস-এর নেতৃত্বে সৌদি আরব দেখিয়ে দিয়েছে—ধর্মকে সম্মান জানানো যায় আধুনিকতা ও মানবাধিকারকে সম্মান দিয়েও।

সৌদি আরবের এই রূপান্তর শুধুমাত্র সামাজিক নয়—এটি এক প্রজন্মান্তরের চেতনা পরিবর্তনের সূচনা। ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে, যুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এই সাহসিকতা যদি অন্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো অনুসরণ করে, তবে মানবাধিকারের নতুন যুগ সূচিত হতে পারে।

 

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url