Advertise

দেশপ্রেম বনাম দলপ্রেম: নাগরিক দায়বদ্ধতার পরীক্ষা

 

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজকাল এক অদ্ভুত বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে—দেশপ্রেম যেন দলপ্রেমে রূপ নিয়েছে। কেউ যদি এক দলের সমালোচনা করে, সঙ্গে সঙ্গে তার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অথচ প্রকৃত দেশপ্রেম মানে হচ্ছে রাষ্ট্র ও জনগণের সার্বিক মঙ্গল চাওয়া, কোনো বিশেষ দলের নয়। এই বিভ্রান্তির মাঝেই আজ বাংলাদেশি নাগরিকদের সামনে দাঁড়িয়েছে এক কঠিন পরীক্ষা—তারা কীভাবে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও নৈতিক দায়িত্ব নির্ধারণ করবে?

দলপ্রেম কীভাবে দেশপ্রেমের জায়গা নিচ্ছে

  • অন্ধ সমর্থন: অনেকেই দলীয় ব্যর্থতাকে আড়াল করে, শুধুমাত্র দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে চলেন।
  • সমালোচনা মানেই শত্রুতা: কারো দল সমালোচনা করলেই তাকে “দেশদ্রোহী” বা “বিদেশি এজেন্ট” বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়।
  • পক্ষাবলম্বন মানেই পরিচয়: একজন নাগরিকের পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়—সে ‘এই দলের’, ‘ঐ দলের’, কিন্তু “বাংলাদেশের” নয়।

নাগরিক দায়বদ্ধতা মানে কী?

একজন প্রকৃত নাগরিকের দায়িত্ব:

  1. ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো, দলের নয়।
  2. রাষ্ট্রের উন্নয়নের প্রশ্নে দলীয় বিভাজনকে অতিক্রম করা
  3. স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার চর্চা ও রক্ষা করা।
  4. গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ—এসব নিয়ে সচেতন ও সোচ্চার থাকা

দেশপ্রেম বনাম দলপ্রেম: মূল পার্থক্য

1.   বৈশিষ্টঃ নাগরিক অংশগ্রহণ

2.   দেশপ্রেমঃ তথ্য ও যুক্তির ভিত্তিতে সচেতন অংশগ্রহণ, দেশের কল্যানোকে অগ্রাধিকার দেয়া।

3.   দলপ্রেমঃ দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য, নেতিবাচক দিক উপেক্ষা করে কেবল সমর্থন করা।

বাংলাদেশে এর বিপরীত। শুধু স্বার্থের প্রয়োজন যেদিকে মেটে, নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সেদিকেই সমর্থন।

দলপ্রেমের ঝুঁকি কী?

  • গণতান্ত্রিক অবক্ষয়: বিরোধীদলের প্রতি শত্রুতা জন্মায়, রাজনীতি হয় সহিংস।
  • দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা: নিজের দলের দুর্নীতি আড়াল করতে গিয়ে অপরাধকে বৈধতা দেওয়া হয়।
  • বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্ব: যুক্তিবাদী আলোচনা হারিয়ে যায়, আবেগ ও প্রচারণা জায়গা নেয়।

সমাধান: দেশকে ভালোবাসা মানে দলকে জবাবদিহি করাও

  • দলের প্রতি আনুগত্য মানেই সমর্থনের নামে সব কিছু মেনে নেওয়া নয়।
  • দেশের ভবিষ্যৎ সবার আগে—এটা দল বা ব্যক্তির চেয়ে বড়।
  • ন্যায় ও সত্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করাটাই একজন নাগরিকের সবচেয়ে বড় দেশপ্রেম।

আজকের বাংলাদেশে দেশপ্রেমের সংজ্ঞা পুনর্গঠন দরকার। কারণ, দেশের প্রতি ভালোবাসা মানে হলো—সত্যের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, আর সবার আগে “বাংলাদেশ” কথাটাকে গুরুত্ব দেওয়া। দল বদলাতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থ বদলায় না।

এখন প্রশ্ন হলো—আপনি কী একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক, না একজন দলভক্ত কর্মী?

 

#বাংলাদেশ, #রাজনীতি, #নীতি-আদর্শ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url