যুদ্ধে হেরেও পাকিস্তান সেনাপ্রধানের ফিল্ড মার্শাল উপাধি: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নাকি রাজনৈতিক নাটক?
জেনারেল অসিম মুনির |
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান যুদ্ধ ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার
পরও পেলেন 'ফিল্ড মার্শাল' উপাধি। ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এই সম্মান কেন বিতর্কিত?
জানুন বিশ্লেষণে।
সম্প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান আসিম মুনির—কে ‘ফিল্ড মার্শাল’
উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় ঘটনা।
প্রথমবার এই উপাধি পেয়েছিলেন জেনারেল মোহাম্মদ আইউব খান, যিনি ১৯৫৮ সালে সামরিক
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন।
কিন্তু এই পদোন্নতি কি সত্যিই প্রাপ্য ছিল, নাকি এটি রাজনৈতিক পুরস্কার? এই
প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পাকিস্তান এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মহলে।
ফিল্ড মার্শাল—একটি সামরিক সম্মান নাকি
রাজনৈতিক হাতিয়ার?
সাধারণভাবে ‘ফিল্ড মার্শাল’ উপাধি বিশ্বের বহু দেশে প্রদান করা হয় অসামান্য
সামরিক অর্জনের জন্য—বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ের স্বীকৃতি হিসেবে। কিন্তু
পাকিস্তানে এই উপাধি দেওয়া হয়েছে এমন এক সময়, যখন দেশটি সামরিক, রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুতে কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি,
আফগানিস্তান সীমান্তে অস্থিরতা রয়েছে এবং দেশের ভেতরে জঙ্গি হামলার পুনরুত্থান
দেখা যাচ্ছে।
আইউব খানের ছায়া কি ফিরে এলো?
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ফলাফল ছিল অমীমাংসিত। কিন্তু যুদ্ধের পর
আইউব খান নিজেকে ফিল্ড মার্শাল ঘোষণা করেন। ঐতিহাসিকভাবে অনেকেই মনে করেন, সেটি
ছিল তার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রস্তুতি। এখনকার পরিস্থিতিও অনেকটা
সাদৃশ্যপূর্ণ: সামরিক ব্যর্থতা ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা থাকলেও উপাধি প্রদান যেন হয়ে
উঠছে সেনাবাহিনীর ভেতরে একটি ‘পাওয়ার সিম্বল’।
বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের বেসামরিক সমাজ, প্রগতিশীল সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক
পর্যবেক্ষকদের অনেকেই এই পদোন্নতিকে প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে দেখছেন। অনেকে মনে করেন,
এটি মূলত বেসামরিক সরকারের দুর্বলতা ও সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত প্রভাবেরই প্রতিফলন।
বলা হয়ে থাকে, এই উপাধি তার কর্মকালের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত—যেমন রাজনৈতিক
নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সাংবাদিক দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন—থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর একটি
কৌশল মাত্র।
উপসংহার: ইতিহাস নাকি হাইব্রিড
বাস্তবতা?
যুদ্ধ না জিতে, জনগণের আস্থা না পেয়ে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলে
কাউকে ফিল্ড মার্শাল ঘোষণা করা হলে, সে উপাধির মর্যাদা কোথায় থাকে? পাকিস্তানে এই
সিদ্ধান্ত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি মাত্র নয়, বরং দেশটির গণতন্ত্র ও সামরিক
ভারসাম্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি উদ্বেগজনক বার্তা বহন করে।
إرسال تعليق