ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়ালে সম্ভাব্য যা যা হতে পারে
প্রতীকী ছবি |
পাকিস্তানের মোট আয়তনের ৪২ শতাংশ হচ্ছে বেলুচিস্তান। বেলুচিস্তানের আয়তন হচ্ছে ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ১৯০ বর্গ কিলোমিটার, যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় তিনগুণ। ভারত এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হবে এই এলাকায়। প্রাকৃতিক সম্পদের খনি হচ্ছে বেলুচিস্তান। পাকিস্তানের অর্থনীতির ২০ শতাংশ যোগান আসে বেলুচিস্তান থেকে। এই বেলুচিস্তান কাটঅফ করেই পাকিস্তানকে সবচেয়ে বেশি কোনঠাসা করে ফেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আফগানিস্তানের মাধ্যমে ভারত বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামীদের প্রশিক্ষণ ও উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করলেই বাকী কাজটা তারাই সেরে ফেলবে। বেলুচিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের বিশাল সীমান্ত এই ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে ভারত।
পাকিস্তানের সেনাদের বহনকারী 'জাফর এক্সপ্রেস' হাইজ্যাককারী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিদের গঠনের পেছনে রাশিয়ার কেজিবি এজেন্ট কোড নেম মিশা ও সাশা কাজ করেছিল। রাশিয়া থেকেই এদের তখন ফান্ডিং করা হতো। বর্তমানে হাজার হাজার বালুচ মুসলমান পাকিস্তান থেকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হতে লড়াই করছে। রোজ বেলুচিস্তানের কোথাও না কোথাও বোমা ফুটছে। 'চাচা তু আপনা ঘর সামলা' বলে শুরুটা এখান থেকেই হতে পারে। বালোচ লিবারেশন আর্মি, মাজেদ বিগ্রেড, বেলুচিস্তান রিপাবলিকান গার্ড- সব মিলিয়ে যুদ্ধের আগুন কোথা থেকে যে জ্বলে উঠে তা এই মুহূর্তে বুঝা বেশ মুশকিল।
পাকিস্তানের
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে স্বাধীনতার জন্য স্বশস্ত্র বিদ্রোহ করছে টিটিপি
(তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান)। কিছুদিন আগে এই টিটিপি নিয়ে স্বশস্ত্র যুদ্ধে
জড়িয়েছিলো আফগানিস্তান ও পাকিস্তান।
পাকিস্তানের
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে আবার দাবানল জ্বলে উঠলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে যে দাবানল জ্বলেছে তাতে অল্প একটু ঘি ঢেলে দিলেই
ভারতের অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে। পাকিস্তানের শুধুমাত্র পাঞ্জাব বাদে সিন্ধু, খাইবার
পাখতুনখোয়া ও আজাদ কাশ্মীর সর্বত্র স্বাধীনতার আন্দোলন চলছে। নিজ দেশের
অভ্যন্তরের পরিস্থিতি সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। গতকালও (২৪
এপ্রিল) বেলুচিস্তানে গাড়ি বোমা হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। তিনি পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ রাজনৈতিক দলের প্রধান। পাকিস্তানের রাজনৈতিক এই অস্থিরতার সুযোগ নিতে পারে ভারত। এক্ষেত্রে শাহবাজ শরীফের মতো অযোগ্য কেউ আরও কিছুকাল প্রধানমন্ত্রী থাকলে ভারতের ক্ষতির চেয়ে বরং লাভের পরিমাণটাই বেশি। পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরেকটু উত্তপ্ত হয়ে উঠলে শাহবাজ শরীফরা গদি সামলাবেন না ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন? পাকিস্তানকে ছোট ছোট যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারলেই পাকিস্তানের বাকি অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে এটা নিশ্চিত। যুদ্ধে কৌশল ও শক্তি দুটোই ভারত ব্যবহার করবে এতে কোন সন্দেহই নেই।
জম্মু
কাশ্মীরের সাথেই হচ্ছে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীর। এখানেই পাকিস্তানের অধিকাংশ
জ-ঙ্গী আস্তানা। পাকিস্তানের জঙ্গীরা যেন অদূর ভবিষ্যতে আর কখনোই এই অঞ্চলে ঘাটি
করতে না পারে সেক্ষেত্রে ত্রিমুখী যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়েও ভারত একটা ঝুঁকি নিতে
পারে। পাঁচ লক্ষ সৈন্য দিয়ে যদি কাশ্মীর পাহারা দেওয়া যায় তবে আরও পাঁচ লক্ষ
সৈন্য দিয়ে আজাদ কাশ্মীরও যুক্ত করে নেওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে পরিস্থিতি যাই
হোক, ভারত একটা ঝুঁকি নিবেই। সেটা হোক আজাদ কাশ্মীর, হোক বেলুচিস্তান অথবা খাইবার
পাখতুনখোয়া, ভারত একটা ব্যবস্থা নিবেই।
পাকিস্তান যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহই নেই। পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পারলেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেরুদন্ড ভেঙে যাবে। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি সৃষ্টির পর থেকেই সেই দেশটি রাজনীতিবীদরা চালায় না, চালায় সেই দেশের সেনাবাহিনী। রাজনীতিবীদরা হচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল।
পাকিস্তানের মোট বাজেটের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ব্যয় হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য। পাকিস্তানের মোট ভূখন্ডের ১২ শতাংশ জমির মালিক হচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫০ টি সংস্থা থেকে আয় হয় ২৬৫০ কোটি ডলার ।এই পরিসংখ্যান ভারতের গৌতম আদানি ও মুকেশ আম্বানির চাইতেও বেশী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্পত্তি এক হাজার কোটি পাউন্ড, যা ভারতীয় মুদ্রায় এক লক্ষ কোটি রুপির চাইতেও বেশী। পাকিস্তানে পুরো বছর যা বিনিয়োগ হয় তার চাইতেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অর্থের পরিমাণ কয়েক শতাংশ বেশি। এই অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পারলেই ভারত অর্ধেক যুদ্ধে জিতে যাবে।
ভারতের
সবচেয়ে কৌশলী খেলাটা হতে পারে পাকিস্তানের আমজনতা বনাম পাকিস্তান সেনাবাহিনী। একটা
সেনাবাহিনী কিভাবে পুরো একটি দেশ লুটপাট করে ধ্বংস করে দিতে পারে পৃথিবীতে তার
অন্যতম বড় প্রমাণ হচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের যত জ-ঙ্গী সংগঠন আছে
তাদের পেছনে অর্থায়ন করে এই পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এদের কাছে পাকিস্তান নামক
রাষ্ট্রের জনগণ ও রাজনীতিবীদ সবাই যুগ যুগ ধরে জিম্মি। এদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে
কোনঠাসা করে দেওয়াটাই এখন ভারতের সামনে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। পাকিস্তানের মাটিতে
বোমার পারদ হয়ে থাকা এইসব অস্ত্রের সঠিক প্রয়োগ করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে
খুব বেশি সময় লাগবে না ভারতের।
সত্য
সবসময় সুন্দর।
লুসিড ড্রিম (শুভ)