হাড়ের রাস্তা (Road of Bones)

 
Kolyma Highway


এই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জানেনা রাশিয়ায় ২০৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ Road of Bones বা হাড়ের রাস্তা নামে একটি সড়ক আছে। এই মহাসড়কটি কোলিমা হাইওয়ে নামে পরিচিত। এটি মানুষের হাড় ও কঙ্কাল দিয়ে তৈরি করেছে রাশিয়া। শীতের মৌসুমে প্রচন্ড তুষারপাতের কারণে রাস্তাটি বরফে ঢেকে যায় আর তাছাড়া পিচ্ছিল হওয়ায় তা ছিলো বিপজ্জনক। তাই মানুষের হাড়ের সাথে বালু মিশিয়ে এই রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে।

কখনো নিজেকে প্রশ্ন করেছেন মানুষ কিসের তৈরি, মানুষের হাড় কি দিয়ে তৈরি?


এই পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করে মানুষ মাটির তৈরী। কিন্তু যারা “ওয়াজ যুদ্ধে” রত তারা এর বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা রাখেন না। অপরদিকে ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী মানুষ যে পানি থেকেও তৈরি তারও উল্লেখ করেন না তারা। অথচ আজকের বিজ্ঞান আমাদের বলে মানুষের কোষের সাইটোপ্লাজমের ৮০ ভাগই পানি। আধুনিক বিজ্ঞান আরো বলছে আমাদের শরীরের বেশিরভাগ অংশই ৫০%-৯০% পানি দ্বারা গঠিত। অতএব আল্লাহ যথার্থই বলেছেন মানুষ পানি হতে সৃষ্টি।

তবে মানুষের বিশ্বাস ও বিজ্ঞান এক বিষয় নয়। বিশ্বাস হলো, যেটা জানিনা তবে বিশ্বাস করি, আর বিজ্ঞান হলো যার সপক্ষে প্রমাণ আছে।

মানুষের শরীরে ২০৬ টি হাড় ও মস্তিস্কে ২৬ টি হাড়ের তথ্য পৃথিবীর কোনো গ্রন্থে লেখা ছিলোনা। মানুষের হাড় দিয়ে রাস্তা তৈরি সম্ভব এটাও পৃথিবীর কোনো গ্রন্থে লেখা ছিলোনা। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের জোসেফ স্ট্যালিন এই মহাসড়কটি নির্মাণ করেছিলেন।

মহা সড়কটিকে কেউ কেউ স্মারক হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। কারণ, কথিত আছে; আনুমানিক ২৫০,০০০-১,০০০,০০০ বন্দী শ্রমিক, যারা এটি নির্মাণ করার সময় মারা গিয়েছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে, সেসব বন্দী শ্রমিকদের হাড় রাস্তার নীচে বা চারপাশে চাপা পড়েছিলো,- যদিও নথিভুক্ত সূত্রগুলি এখনও এ তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।



মানুষের হাড় হচ্ছে জীবন্ত টিস্যু। হাড় ভাঙলে তা কিন্তু জোড়া লেগে যায়।
একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার সময় ৩০০ হাড় নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও বড় হতে হতে তা ২০৬ খানা হয়ে যায়।

মানুষের দৈনন্দিন কাজ ও বয়সের সাথে সাথে এই হাড় ক্ষয় হতে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় 'রিমডেলিং'। হাড় - প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ক্যালসিয়াম, ফসফেট ও ম্যাগনেশিয়াম দিয়ে তৈরি।
মাটির উপাদান পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যে সকল উপাদান মাটিতে বিদ্যমান সে সকল উপাদান কম অথবা বেশি অনুপাতে মানুষের শরীরেও বিদ্যমান।

একটি জীবন্ত টিস্যু ৯৫% কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রেজন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফারসহ ২৬ ধরনের উপাদান বহন করে। আজকের বিজ্ঞান আমাদের বলছে এই উপাদানগুলো মাটিতে বিদ্যমান।
কোলাজেন নামে এক ধরণের প্রোটিন আছে যা মানবদেহে সিমেন্টের মতো কাজ করে।

অস্ট্রেলিয়ার নিকটবর্তী দেশ নিউগিনির একদল যোদ্ধা মানুষের হাড় সংরক্ষণ করে তা দিয়ে ড্যাগার বানাতো এবং এই ছুরিগুলো মরণাস্ত্রের মত কাজ করতো।

মানুষের হাড় তার শরীরের ভার বহন করে। শুধু তাই নয়; আপনি জেনে অবাক হবেন, মানুষ ও প্রাণীদের শরীরের হাড়গুলো গ্রানাইট পাথরের মত শক্ত এবং মজবুত।

একটি দে’শলাই বাক্সের সাইজের এক টুকরো হাড়ের চাঁই কংক্রিটের চেয়েও ৪ গুণ শক্তিশালী যা ৯ টন ওজন ধরে রাখতে পারে।
এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি রাস্তা কতটুকু মজবুত।

প্রসংগক্রমেঃ 
নারীকে পুরুষের বাম পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছে।
বাইবেলের 'বুক অব জেনেসিস' হযরত আদম ও হাওয়ার বিষয়ে একই বর্ণনা আছে। এই বর্ণনা কোরআনেও আছে।

ইহুদী, খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের মতো পৃথিবীর অনেক ধর্মই আদম ( আঃ) কে আদি পিতা মানে। পরবর্তীতে খ্রিষ্টান ও মুসলমানরাও একই বর্ণনা প্রচার করেছে। ইহুদীদের হিব্রু বাইবেল, খ্রিষ্টানদের বাইবেল ও মুসলমানদের কোরআন এই তিনটি গ্রন্থ একসাথে পড়লে এমন আরো অসংখ্য বিষয় আপনাদের মাথায় পরিস্কার হয়ে যাবে। তবে মিশরের ইসলামী স্কলার রাশিদ রিদাও 'নারীকে পুরুষের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে' এই তথ্যকে মিথ্যা ও বানোয়াট আখ্যা দিয়েছেন!

'মৃত্যুর পর যদি মানুষ তাদের হাড় দান করতো তবে বহু পঙ্গু মানুষকে সুস্থ করে তোলা যেতো'- এ কথাটি বলে আক্ষেপ করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী মারসিলিও মারকাচি।

মানুষের হাড় ভেঙে গেলে মূলতঃ সিরামিক ও টাইটেনিয়াম দিয়ে বিজ্ঞানীরা সেই হাড় জোড়া লাগানোর চেষ্টা করতেন। অথচ মানুষের হাড় হচ্ছে একটি জীবন্ত টিস্যু। যা সংরক্ষণ করার কোন চিন্তা মানুষের তৈরি হয়নি এখনো।

তাইতো ইতালির বিজ্ঞানীরা উডেন বোনস নামে এমন একটি কৃত্রিম হাড় তৈরি করেছেন যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য রীতিমতো এক বিপ্লব। কাঠ ও হাড়ের মধ্যে এক ধরণের মিল খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কাঠকে পোড়ালে কাঠকয়লা হয়। তারপর তাতে রাসায়নিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে একধরণের পদার্থ পাওয়া যায় যা মানুষের দাঁত ও হাড়গোড়কে শক্ত করার কাজে লাগে।
ধাতু ও সিরামিকের তুলনায় এটি অনেকটা ফাঁকা ও ছিদ্রযুক্ত যার ফলে খুব সহজেই এই ধাতুটি হাড়ের সাথে মিশে যায়।

বিজ্ঞানী আনা তাম্পিয়ারী বলেন, "লাল ওক, রাটান ও বেত জাতীয় কাঠকে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে তার উপর ক্যালসিয়াম ছিটিয়ে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বানানো হয়। তারপর কিছু কার্বন মিশ্রিত করে হাইডক্সিল্যাপাটাইট বানানো হয়”।
এই হাড় সহজেই তার চারপাশে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠতে পারে এবং এর জৈব কাঠামোও অনেক ভালো।


এভাবেই বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে কৃত্রিম হাড় তৈরি করেছেন। কারণ তারা জানেন হাড় কি দিয়ে তৈরি এবং তা কিভাবে বানানো সম্ভব।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য আর্টিকেল




1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post