পুরুষ কিসে আটকায়!



পুরুষ আটকানোর কিছু অমর কাহিনী 


আনারকলিকে নিয়ে পিতা সম্রাট আকবরের সাথে পুত্র যুবরাজ সেলিমের দ্বন্দ্ব হয়। পিতা-পুত্রের এই দ্বন্দ্বে পৈশাচিকভাবে প্রাণ দিতে হয় এক নারীকে যার নাম 'আনারকলি'। 


আনারকলির ভালো নাম নাদিরা বেগম বা শর্ফুন্নেসা। মনে করা হয় আনারকলির জন্ম পারস্য মানে আধুনিক ইরানে। তারপরে ইস্তাম্বুলের ক্রীতদাস বাজারে বিক্রি হয়ে চলে আসেন তুর্কীর এক অভিজাত পরিবারে। 


সেখান থেকে তাঁকে উপটৌকন হিসেবে পাঠানো হয় তুরস্কের সুলতানের হেরেমে। তুরস্কের সুলতান তাকে মুঘল সম্রাট আকবরের কাছে নজরানা হিসেবে পাঠায়। 


অনিন্দ্যসুন্দর রুপের অধিকারিনী, আনারের মতো রসে টুইটুম্বুর বলেই হয়তো ভালোবেসে সম্রাট আকবর শর্ফুন্নেসা বা নাদিরা বেগমের নতুন নাম দেন 'আনারকলি'। 


এখানেই চল্লিশোর্ধ্ব আনারকলির সাথে ত্রিশোর্ধ্ব শাহজাদা সেলিমের পরিচয় ও অভিসারের খবর জানতে পেরে ক্ষুব্দ হন পিতা সম্রাট আকবর। পিতা-পুত্রের এই দ্বন্দ্বযুদ্ধে পিতা আকবর বাহিনীর কাছে পরাজিত হয় পুত্র সেলিম। সেলিম বাহিনীর ২০০ যোদ্ধাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আকবর। 


নিজ সন্তানেরও মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেছিলেন আকবর। প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান আনারকলি। 


আকবর বন্দী করে হেরেম খানায় নিয়ে যান আনারকলিকে। সেখানে সেলিমের উপস্থিতিতে আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেয়া হয়, যেন আনারকলি তিলে তিলে মারা যায়। 


পরে জানা যায়, সেলিমের অনুরোধে তার দাদী হামিদা অর্থাৎ সম্রাট আকবরের মা আনারকলিকে গোপনে বিষ সরবরাহ করেন, যেন কষ্ট পেয়ে মারা না যেয়ে একেবারে মারা যান। 


পাকিস্তানের লাহোরে রয়েছে আনারকলির সমাধি। পরবর্তীতে সেলিম আনারকলির স্মৃতির উদ্দেশে এক সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন লাহোর নগরীতে। আজো সেটি আছে অমলিন। 


সম্রাট জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম শুধু আনারকলি'র প্রেমিক ছিলেননা। নারী এবং মদ ছিলো তাঁর নিত্যসঙ্গী। হেরেমখানায় অসংখ্য নারীসঙ্গ ছাড়াও তার সর্বমোট ২১ জন স্ত্রীর কথা জানা যায়। 


ক্ষমতার লড়াইয়ে সেলিম নিজপুত্র খসরুকে অন্ধ করে দেন। 


সেলিমের বাদশাহী নাম ছিলো সম্রাট নুরুদ্দীন মহম্মদ জাহাঙ্গীর। তার শৈশবের নাম ছিলো সেলিম। 


সম্রাট জাহাঙ্গীরের আরেক পুত্র খুররম অন্ধ ভাই খসরুকে হত্যা করেন এবং পরবর্তীতে নিজেকে মোগল সম্রাট হিসেবে ঘোষনা করেন। তার বাদশাহী নাম ছিলো সম্রাট শাহাবুদ্দিন মুহম্মদ শাহজাহান। 


উল্লেখ্য, প্রায় এগারোজন বৈধ বেগমের অন্যতম 'মমতাজ মহলে'র স্মৃতিতে সম্রাট শাহজাহান বিশ্ববিখ্যাত 'তাজমহল' নির্মাণ করেন। 'তাজমহল'কে অনেকে প্রেমের সমাধি মনে করে থাকেন। 


সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে মুঘল স্থাপত্যের স্বর্ণযুগ ছিল। তিনি অনেক শোভামণ্ডিত স্থাপনা তৈরী করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আগ্রার তাজমহল যা তার দ্বিতীয়-মতান্তরে তৃতীয়-মতান্তরে চতুর্থ স্ত্রী মমতাজ মহলের সমাধি 'তাজমহল' হিসাবে পরিচিত। (নির্মাণ ১৬৩২-১৬৫৪ সাল)। 


তাজমহল নির্মাণ করতে গিয়ে শাহজাহান রাজকোষ প্রায় শূন্য করে সাম্রাজ্যকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post