![]() |
লেঃ জেঃ এম হারুন-অর-রশিদ (ছবিঃ সংগৃহীত) |
প্রাক্তন সেনা প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) এম হারুন-উর-রশিদ ০৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। ছট্টগ্রাম ক্লাবের একটি কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি একটি মামলার হাজিরা দিতে ০৩ আগস্ট চট্টগ্রামে এসেছিলেন এবং চট্টগ্রাম ক্লাবের ৩০৮ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তার মৃত্যুর কারণ ও জীবনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
সংক্ষিপ্ত জীবনী পরিচিতি
এম. হারুন‑অর‑রশিদ ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের
হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন।
মিলিটারী
ক্যারিয়ার ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান
হারু-অর-রশিদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন ও কমিশন্ড প্রাপ্তির পর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত
ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে তার সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।
সেনাপ্রধান
নিয়োগ ও পরবর্তী দায়িত্ব
২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান এবং
২০০২ সালের জুনে অবসরে। অবসরের পর তাঁকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ডেসটিনি
গ্রুপ প্রেক্ষাপট
অবসর গ্রহণের পরে তিনি ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও Destiny Multi‑purpose
Cooperative Society-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে গ্রুপের আর্থিক
অনিয়মের মামলায় ২০১২ সালে তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়; পরে জামিনে মুক্তি পান।
মৃত্যু সংবাদ সংক্রান্ত ঘটনাবলি
রোববার (৩
আগস্ট) বিকেলে মামলার হাজিরা দিতে তিনি চট্টগ্রামে আসেন এবং চট্টগ্রাম ক্লাবের ৩০৮ নম্বর কক্ষে ওঠেন।
রবিবার রাত ১০:৪৫‑এ বাইরে থেকে ক্লাবে ফিরে আসেন। পরের দিন দুপুর পর্যন্ত কোনো সাড়া না পেয়ে কর্মীরা জানালে কক্ষের দরজা ভাঙা হয় এবং তাকে অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, চট্টগ্রাম থেকে আসা চিকিৎসক দল তাকে মৃত ঘোষণা করেন এবং প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় হৃদরোগ
বা স্ট্রোক জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম ক্লাব সেক্রেটারি
এবং কোতোয়ালি থানার ওসি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হারুন‑অর‑রশিদ মৃত্যুকালে ৭৭
বছর বয়স্ক ছিলেন।
মৃত্যুর
পরে জানা যায়—তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “সন্ধানী”-তে তার চোখ দানের অঙ্গীকার
করে গেছেন।
এই ঘটনায় সিআইডি,
পুলিশ, সামরিক কর্তৃপক্ষসহ তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনো কোনো তদন্ত প্রতিবেদনে
মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ প্রকাশ করা হয়নি।
বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা
প্রচলিত
তথ্য অনুযায়ী, দৃশ্যত কোনো আঘাত বা খুনের চিহ্ন ছিল না এবং চিকিৎসকদের ধারণা
অনুযায়ী এটি স্বাভাবিক মৃত্যু এবং সম্ভবত হৃদরোগ বা স্ট্রোক জনিত কারণে।
মরদেহ
উদ্ধার ও পরবর্তী কাজগুলো ক্লাব কর্তৃপক্ষ, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাগণ ও পুলিশের
উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ ও প্রশাসনিক পর্যায়ে সংগঠিত হয়েছে।
প্রাথমিক
তথ্যে মৃত্যু রহস্য-জনিত কোনো ঘাতক তত্ত্ব উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে পরবর্তী প্রতিবেদন
ও ফরেনসিক স্টাডি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।
সারাংশ
জীবন ও অবদান
লেঃ জেনারেল
(অব.) এম. হারুন‑অর‑রশিদ ছিলেন মহান মুক্তিযোদ্ধা ও প্রাক্তন সেনাপ্রধান, যিনি
২০০০–২০০২ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী নেতৃত্বে ছিলেন এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত ছিলেন। অবসরের পর রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে যুক্ত
ছিলেন।
মৃত্যু পরিস্থিতি ও রহস্য
চট্টগ্রাম
ক্লাবের কক্ষে নিঃসঙ্গ অবস্থায় প্রাথমিকভাবে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের কারণে তার মৃত্যু হয় বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মৃত্যুর সম্পূর্ণ কারণ জানতে আনুষ্ঠানিক অটোপসি
ও ফরেনসিক রিপোর্ট অপেক্ষা করতে হবে।
হারুন‑অর‑রশিদ একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, সেনাপ্রধান ও
পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূত ও ব্যবসায়ী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর
মৃত্যু দেশের মানুষের কাছে শোকের এবং কিছু মানুষের কাছে সন্দেহজনক হলেও সঠিক কারণ
উদঘাটনের জন্য সময় প্রয়োজন।
সূত্রসমূহঃ The Daily Ittefaq+1bdnews24.com+1Wikipedia+9 Jagonews24+9 documents1.worldbank.org+12 Dhaka Tribune+2
Post a Comment