![]() |
ছবিঃ উইকিপিডিয়া থেকে |
জম্মু ও
কাশ্মীরের পর্যটননগরী পেহেলগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার জেরে দক্ষিণ
এশিয়ায় আবারও বাড়তে থাকে সামরিক উত্তেজনা। টানা ১৯ দিন ধরে ভারত ও পাকিস্তানের
মধ্যে যে তীব্র কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা-ভিত্তিক চাপা প্রতিক্রিয়া চলছিল, তা
আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়ে। যদিও এই মুহূর্তে উভয় পক্ষই উত্তেজনা হ্রাসের দিকে
আগ্রহ দেখিয়েছে, তবুও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক বলা যাচ্ছে না।
এই
প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থান প্রকাশ্যে এসেছে। সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট
জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে ভারতকে সরাসরি হুঁশিয়ার করে বলেছেন— ভারত
যদি অতীতে চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে এবার পাকিস্তানের
জবাব হবে "ভারতের গভীরে, বিশেষ করে পূর্ব দিক থেকে"।
তিনি আরও
যোগ করেন, “পাকিস্তান ভারতের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম—এটা ভারতকে
উপলব্ধি করতে হবে।”
এই বিবৃতি
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবাদমাধ্যম The Economist-এ প্রকাশিত
হয় এবং ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
‘অপারেশন সিঁদুর’:
ইতিহাসের ছায়া
ভারত
পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন নয়। ১৯৪৮ ও ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সমন্বিত অভিযান
পরিচালনা করেছিল। এরপর আরো কয়েকবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং তারই ধারাবাহিকতায়
সম্প্রতি পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার জেরে সংঘটিত হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সাময়িক
যুদ্ধ। এই অপারেশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর সরাসরি শীর্ষভাগে আঘাত
হানা। সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট মনে করিয়ে দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই বার্তা দিল
যে, তারা এবার আগ্রাসন মোকাবেলায় পিছিয়ে থাকবে না।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক উদ্বেগ
ভারত ও
পাকিস্তান—দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে এমন উত্তেজনা বরাবরই বৈশ্বিক
দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জাতিসংঘ, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক রাষ্ট্র ও সংস্থা
এই দুই দেশের মধ্যে আত্মসংযম ও কূটনৈতিক সংলাপের ওপর জোর দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা
বলছেন, পেহেলগামের সাম্প্রতিক হামলা হয়তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কিন্তু দুই দেশের
সীমান্তভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এমন ঘটনার মাধ্যমে বারবার উস্কে
উঠে।
ভারত এই
হামলার জন্য ‘পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদীদের’ দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান তা
অস্বীকার করেছে এবং উল্টো ভারতের "আগ্রাসী মনোভাব" নিয়ে উদ্বেগ
জানিয়েছে।
বিশ্লেষণ: কে কতটা প্রস্তুত?
ভারতের
প্রতিরক্ষা নীতি সম্প্রতি চীন ও পাকিস্তান উভয়ের দিকেই নজর রেখে শক্তিশালীকরণে
ব্যস্ত। অন্যদিকে, পাকিস্তানও তাদের চতুর্মুখী প্রতিরক্ষা কৌশল ঢেলে
সাজিয়েছে—বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরতেই এ
ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।
তবে এও
বলা যায়, এই হুঁশিয়ারি মূলত প্রতিরোধমূলক। কারণ সরাসরি যুদ্ধের পথে না গিয়ে দুই
দেশই দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ‘প্রক্সি কনফ্লিক্ট’ বা মধ্যস্থ লড়াই
চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের আশংকা, পাকিস্তান বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে পূর্বদিক
থেকে আক্রমণের ছক কসছে।
উপসংহার
ভারত-পাকিস্তান
সম্পর্কের ইতিহাসে সামরিক উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। তবে প্রতিটি নতুন ঘটনা যখন পুরনো
ক্ষতের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে, তখন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সংযমের প্রয়োজন আরও বেশি হয়ে
পড়ে।
পেহেলগাম
হামলার পর সেনাপর্যায়ে এমন হুঁশিয়ারি একদিকে পাকিস্তানের কঠোর বার্তা হিসেবে ধরা
হলেও, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তা নতুন করে উদ্বেগের জন্ম
দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই উত্তেজনার রেশ কতদিন স্থায়ী হয় এবং দুই দেশ সংলাপের
টেবিলে ফিরতে আগ্রহ দেখায় কি না।
সূত্রঃ
(১) The Economist, ০৩ আগস্ট
২০২৫
(২) আমার সংবাদ
(https://www.amarsangbad.com/amp/international/news/320554)
Post a Comment