![]() |
ছবিঃ প্রতীকী |
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক শিকড় ও সমর্থক ভিত্তি এতটাই গভীর যে দলটিকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
তবে দলটির নিজের স্বার্থেই প্রয়োজন দূর্নীতিবাজ নেতাদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক সৎ নেতা বাছাই করা, যাদের প্রকৃত জনসম্পৃক্ততা ও সমর্থন আছে। দলকে আরও কঠোর জবাবদিহিতার মধ্যে আনা। সৎ ও যোগ্য- গবেষক, শিক্ষক, আইনজ্ঞ, অবসরপ্রাপ্ত প্রশাসনিক, সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী গবেষণা ও নিরাপত্তা সেল গঠন করা। পড়ুন একটি বিশ্লেষণ:
আওয়ামী
লীগকে কি সত্যিই মুছে ফেলা সম্ভব? বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা
বাংলাদেশের
রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় প্রায়ই একটি প্রশ্ন শোনা যায়—“দেশ থেকে আওয়ামী লীগকে মুছে
ফেলা সম্ভব কি?” সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্ন নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
তবে বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে
আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি—এই দুই প্রধান শক্তির বাইরে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কল্পনা করা
খুব কঠিন। বিশেষত আওয়ামী লীগ, যার জন্ম ইতিহাসের এক বিশেষ ক্রান্তিকালে, যার সঙ্গে
জড়িয়ে আছে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত, তাদের সম্পূর্ণভাবে
দেশ থেকে ‘মুছে ফেলা’ আসলেই সম্ভব কি না, তা ভাবনার বিষয়।
রাজনীতি সর্বত্র: চিন্তায়, কর্মে, প্রতিষ্ঠানে
বাংলাদেশের
সামাজিক বাস্তবতা হলো—রাজনীতি শুধু দলীয় কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং
রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, এমনকি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও এর ছাপ
বিদ্যমান।
- একজন শিক্ষক হয়তো মনের ভেতরে
আওয়ামী লীগপন্থী, আবার আরেকজন খোলাখুলি বিএনপির সমর্থক।
- সরকারি দপ্তর, পুলিশ,
সেনাবাহিনী—এসব জায়গাতেও ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করেন সবাই,
কারণ, সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ না থাকলেও তিনি
একজন ভোটার।
অতএব,
কোনো একটি দলকে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আসলে
রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে প্রবেশ করা রাজনৈতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার সামিল।
আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক শিকড়
আওয়ামী
লীগকে শুধুই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে না দেখে বরং একটি ঐতিহাসিক প্রবাহ হিসেবে
দেখা জরুরি।
- ভাষা আন্দোলন
- ছয় দফা
- মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব
এসবই
আওয়ামী লীগের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত- অর্থাৎ বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথেই আওয়ামীলীগের
নাম জড়িত। তাই এ দলকে হঠাৎ করে ইতিহাস থেকে ছেঁটে ফেলা সম্ভব নয়। যে কেউ এমন
প্রচেষ্টা নিলে সেটি জনগণের একাংশের পরিচয় ও আবেগের ওপর আঘাত হিসেবে প্রতিভাত হবে
এবং তার অস্তিত্বই বিলিন হয়ে যাবে, যার প্রমাণ ইতোপূর্বে রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সমর্থক ভিত্তি
সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ কঠোর সমালোচনার মুখে পড়লেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে
দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী এখনো সরাসরি বা অন্তত মনে মনে দলটির প্রতি সহানুভূতিশীল।
গ্রামগঞ্জের ভোটার থেকে শুরু করে শহুরে মধ্যবিত্ত, সরকারি কর্মকর্তা থেকে সেনা বা পুলিশ
সদস্য—সব জায়গাতেই তাদের সমর্থক আছে। ফলে কেবল রাজনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে বা
প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে এই ভিত্তি মুছে ফেলা অসম্ভব।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ
তবে এটাও
সত্য, দীর্ঘ ক্ষমতাসীন অবস্থায় আওয়ামী লীগের ভেতরে দুর্নীতি, দমননীতি, নেতৃত্বের
একচেটিয়া প্রবণতা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর অবক্ষয় প্রবল হয়েছে। ফলে দলটি তার
ঐতিহাসিক মর্যাদা থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে। নতুন প্রজন্মের একটা অংশ এখন আর
দলটিকে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখে না; বরং কর্তৃত্ববাদী
শাসনের প্রতীক হিসেবে দেখে- যদিও এজন্যে ইতিহাস বিকৃতিই বহুলাংশে দায়ী।
প্রশ্ন
হলো, তাহলে সমাধান কোথায়?
- প্রথমত, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা যেতে পারে,
কিন্তু পুরোপুরি বিলুপ্ত করা সম্ভব নয়।
- দ্বিতীয়ত, দলটির ভেতরে সংস্কার, নতুন নেতৃত্বের উত্থান এবং
গণতন্ত্রমুখী ধারা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটিকে একটি আরও আধুনিক রাজনৈতিক
শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব।
- তৃতীয়ত, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও উচিত নিজেদেরকে বিশ্বাসযোগ্য
বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানো। শুধু আওয়ামী লীগ-বিরোধিতার ওপর রাজনীতি টিকিয়ে
রাখা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর নয়।
উপসংহার
বাংলাদেশের
অর্ধেক জনগোষ্ঠী সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। ইতিহাস, আবেগ ও
সামাজিক বাস্তবতা মিলে এটিকে সহজে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। বরং যেটি সম্ভব, সেটি হলো
রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের দুর্বল করা, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা,
এবং রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা।
অতএব,
“আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলা” কোনো বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক কৌশল নয়; বরং প্রাসঙ্গিক কৌশল
হলো—বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যেখানে ক্ষমতা কোনো একক দলের কাছে
বন্দী থাকবে না। এ কারণে প্রতিটা দলের উচিৎ সঠিক ইতিহাস চর্চা, স্বাধীনতাবিরোধীদের
সঙ্গ ত্যাগ করা।
আওয়ামী
লীগকে কি সত্যিই মুছে ফেলা সম্ভব? বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা
বাংলাদেশের
রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় প্রায়ই একটি প্রশ্ন শোনা যায়—“দেশ থেকে আওয়ামী লীগকে মুছে
ফেলা সম্ভব কি?” সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্ন নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
তবে বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে
আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি—এই দুই প্রধান শক্তির বাইরে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কল্পনা করা
খুব কঠিন। বিশেষত আওয়ামী লীগ, যার জন্ম ইতিহাসের এক বিশেষ ক্রান্তিকালে, যার সঙ্গে
জড়িয়ে আছে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত, তাদের সম্পূর্ণভাবে
দেশ থেকে ‘মুছে ফেলা’ আসলেই সম্ভব কি না, তা ভাবনার বিষয়।
রাজনীতি সর্বত্র: চিন্তায়, কর্মে, প্রতিষ্ঠানে
বাংলাদেশের
সামাজিক বাস্তবতা হলো—রাজনীতি শুধু দলীয় কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং
রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, এমনকি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও এর ছাপ
বিদ্যমান।
- একজন শিক্ষক হয়তো মনের ভেতরে
আওয়ামী লীগপন্থী, আবার আরেকজন খোলাখুলি বিএনপির সমর্থক।
- সরকারি দপ্তর, পুলিশ,
সেনাবাহিনী—এসব জায়গাতেও ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করেন সবাই,
কারণ, সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ না থাকলেও তিনি
একজন ভোটার।
অতএব,
কোনো একটি দলকে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আসলে
রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে প্রবেশ করা রাজনৈতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার সামিল।
আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক শিকড়
আওয়ামী
লীগকে শুধুই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে না দেখে বরং একটি ঐতিহাসিক প্রবাহ হিসেবে
দেখা জরুরি।
- ভাষা আন্দোলন
- ছয় দফা
- মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব
এসবই
আওয়ামী লীগের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত- অর্থাৎ বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথেই আওয়ামীলীগের
নাম জড়িত। তাই এ দলকে হঠাৎ করে ইতিহাস থেকে ছেঁটে ফেলা সম্ভব নয়। যে কেউ এমন
প্রচেষ্টা নিলে সেটি জনগণের একাংশের পরিচয় ও আবেগের ওপর আঘাত হিসেবে প্রতিভাত হবে
এবং তার অস্তিত্বই বিলিন হয়ে যাবে, যার প্রমাণ ইতোপূর্বে রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সমর্থক ভিত্তি
সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ কঠোর সমালোচনার মুখে পড়লেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে
দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী এখনো সরাসরি বা অন্তত মনে মনে দলটির প্রতি সহানুভূতিশীল।
গ্রামগঞ্জের ভোটার থেকে শুরু করে শহুরে মধ্যবিত্ত, সরকারি কর্মকর্তা থেকে সেনা বা পুলিশ
সদস্য—সব জায়গাতেই তাদের সমর্থক আছে। ফলে কেবল রাজনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে বা
প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে এই ভিত্তি মুছে ফেলা অসম্ভব।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ
তবে এটাও
সত্য, দীর্ঘ ক্ষমতাসীন অবস্থায় আওয়ামী লীগের ভেতরে দুর্নীতি, দমননীতি, নেতৃত্বের
একচেটিয়া প্রবণতা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর অবক্ষয় প্রবল হয়েছে। ফলে দলটি তার
ঐতিহাসিক মর্যাদা থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে। নতুন প্রজন্মের একটা অংশ এখন আর
দলটিকে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখে না; বরং কর্তৃত্ববাদী
শাসনের প্রতীক হিসেবে দেখে- যদিও এজন্যে ইতিহাস বিকৃতিই বহুলাংশে দায়ী।
প্রশ্ন
হলো, তাহলে সমাধান কোথায়?
- প্রথমত, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা যেতে পারে,
কিন্তু পুরোপুরি বিলুপ্ত করা সম্ভব নয়।
- দ্বিতীয়ত, দলটির ভেতরে সংস্কার, নতুন নেতৃত্বের উত্থান এবং
গণতন্ত্রমুখী ধারা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটিকে একটি আরও আধুনিক রাজনৈতিক
শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব।
- তৃতীয়ত, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও উচিত নিজেদেরকে বিশ্বাসযোগ্য
বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানো। শুধু আওয়ামী লীগ-বিরোধিতার ওপর রাজনীতি টিকিয়ে
রাখা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর নয়।
উপসংহার
বাংলাদেশের
অর্ধেক জনগোষ্ঠী সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। ইতিহাস, আবেগ ও
সামাজিক বাস্তবতা মিলে এটিকে সহজে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। বরং যেটি সম্ভব, সেটি হলো
রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের দুর্বল করা, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা,
এবং রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা।
অতএব,
“আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলা” কোনো বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক কৌশল নয়; বরং প্রাসঙ্গিক কৌশল
হলো—বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যেখানে ক্ষমতা কোনো একক দলের কাছে
বন্দী থাকবে না। এ কারণে প্রতিটা দলের উচিৎ সঠিক ইতিহাস চর্চা, স্বাধীনতাবিরোধীদের
সঙ্গ ত্যাগ করা।
Post a Comment