বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি (পর্ব ৬): নির্বাচনের ভবিষ্যৎ – অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র না নিয়ন্ত্রিত রেজিম?

 

প্রতীকী ছবি


বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি সিরিজের ষষ্ঠ পর্ব। অংশগ্রহণহীন নির্বাচন ও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের ঝুঁকি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ। আগামী নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থাকছে এই পর্বে।

আগের পর্বঃ  বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি (পর্ব ৫)

 

মূল নিবন্ধ

নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের হৃদস্পন্দন। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই যেন শঙ্কা, অবিশ্বাস, বর্জন আর সংঘাতের সমার্থক। ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচন ও তৎপরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এখন প্রশ্ন উঠে—বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনের চেহারা কেমন হবে?

 

গণতন্ত্রের নামে একদলীয় প্রার্থীর বিজয়, অংশগ্রহণহীন ভোট, অথবা অদৃশ্য শক্তির ‘সক্রিয় নিরপেক্ষতা’—এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য কতোটা স্বাস্থ্যকর? এই লেখায় আমরা খুঁজে দেখব বাংলাদেশের আগামী দিনের নির্বাচনব্যবস্থা কোন পথে এগোচ্ছে।

 

নির্বাচন কি হারাচ্ছে তার অর্থবহতা?

গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি, ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। জনগণের এক বড় অংশ এখন আর ভোট দিতে আগ্রহী নয়। নির্বাচন যেন জনগণের কাছে অনর্থক হয়ে উঠছে। সাংবাদিক মাসুদ কামাল তার KOTHA নামক ইউটিউব চ্যানেলে এক জরিপে দেখিয়েছেন, যাতে ৬৯ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে অনাগ্রহী।


অতএব, নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন আসবে—এই ধারণা ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য এক ভয়াবহ সংকেত।

 

নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের লক্ষণ

  • নির্বাচনের আগে ভিন্নমত দমন
  • ভোটের দিন প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
  • নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার অভাব
  • ভোটের ফল আগেই নির্ধারিত থাকার গুঞ্জন
  • “বিকল্প” হিসেবে তৈরি কিছু দলের অংশগ্রহণ

 

এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই আশঙ্কা করছেন—বাংলাদেশ একটি “কন্ট্রোলড ডেমোক্রেসি” মডেলের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে নির্বাচন হবে, কিন্তু পরিবর্তন হবে না।

 

আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

পশ্চিমা বিশ্ব বারবার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বললেও বাস্তব রাজনীতিতে তারা কখনোই কঠোর অবস্থান নেয়নি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও বিবৃতির বাইরে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে কার্যকর চাপ বরাবরই সীমিত থেকেছে।

 

আশার আলো কোথায়?

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বা অর্থবহ নির্বাচনের জন্য দরকার:

  • একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা
  • সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ
  • জনগণের আস্থায় ফেরার উদ্যোগ
  • নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালী, স্বাধীন ভূমিকা
  • স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর ভোট ব্যবস্থা

এছাড়া নাগরিক সমাজ, শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম এবং মিডিয়ার সক্রিয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

উপসংহার:
নির্বাচন একটি প্রক্রিয়া নয়, এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। সেই প্রতিফলন যদি নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতিকে আবার অর্থবহ নির্বাচনের পথে ফেরাতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে—না হলে গণতন্ত্র একটি "প্রদর্শনীর আইটেম" হয়েই থেকে যাবে।


🔜 পরবর্তী (সম্ভাব্য) পর্ব:
“গণআন্দোলন, জনঅসন্তোষ ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সংকট: কি অপেক্ষা করছে?”

Post a Comment

أحدث أقدم