বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি (পর্ব-৩): নিবন্ধনপ্রত্যাশী ১৪৭ দল – গণতন্ত্রের উত্থান না ‘কিংস পার্টি’র খেলা?

 

প্রতীকী ছবি


বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি সিরিজের তৃতীয় পর্ব। হঠাৎ ১৪৭টি রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব গণতন্ত্রের চিহ্ন না 'কিংস পার্টি'র কৌশল? বিশ্লেষণ থাকছে এই পর্বে।

 

২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে হঠাৎ করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ১৪৭টি রাজনৈতিক দল দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে। এদের অধিকাংশের নাম, নেতৃবৃন্দ কিংবা জনভিত্তি অজানা। অথচ নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে এসব দলের আবেদন জমা পড়েছে পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে।

 

এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কিংস পার্টি’ শব্দটি ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে গেছে। রাজনীতির পাঠক ও বিশ্লেষকেরা প্রশ্ন তুলছেন: এগুলো কি আদৌ রাজনৈতিক দল, নাকি নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের নাটকে নির্ধারিত চরিত্র?

 

গণতন্ত্রের বহুমাত্রিকতা না পরিকল্পিত বিভাজন?

গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বহুমতের উপস্থিতিতে। কিন্তু যখন হঠাৎ ১৪৭টি অজানা নামের দল একযোগে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে, তখন এটিকে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রবণতা বলা কঠিন। বরং এর পেছনে রাজনৈতিক কৌশল, বিভাজন ও নিয়ন্ত্রণ কাজ করছে কি না, সেই সন্দেহ প্রবল হয়ে ওঠে। অনেকে বর্তমান অপ্রচলিত সরকারের প্রতি সমর্থনে দলের সংখ্যাধিক্য বহিঃবিশ্বের কাছে প্রমাণের কৌশল হিসেবেও মনে করছে।


আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি (প্রথম পর্ব)

 

এই দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না। বরং বিদ্যমান বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করতে ভিন্নমতের ভোট ছিনিয়ে নেয়ার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করবে—এমনটাই আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

 

‘কিংস পার্টি’ ধারণা কোথা থেকে?

বাংলাদেশে পূর্বেও একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সরকারপন্থী বা নিয়ন্ত্রিত শক্তির সমর্থনে নতুন দল তৈরি করা হয়েছে শুধু নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করার জন্য। এবার যেহেতু সরকারি দল আগের অবস্থানে নেই, তাই প্রশ্ন উঠছে—নতুন কোন “রাজনৈতিক প্রকল্প” কি প্রস্তুত হচ্ছে?

 

‘কিংস পার্টি’ বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন একটি বা একাধিক দল যারা অপ্রকাশ্য শক্তির আশীর্বাদে তৈরি হয়েছে এবং গণতন্ত্রের আড়ালে নিয়ন্ত্রণমূলক রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের সহায়ক হবে।

 

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা

একযোগে ১৪৭টি দলের আবেদন গ্রহণ, যাচাই-বাছাই না করেই প্রাথমিক গৃহীত হিসেবে দেখানো এবং বিদ্যমান দলগুলোর নিবন্ধন অগ্রাহ্য করে এগুলোর প্রতি অগ্রগণ্যতা জনমনে প্রশ্ন তুলছে। নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে এর প্রভাব পড়বে দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক ধারায়।


আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি (পর্ব-২)

 

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং জনআস্থা

আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানালেও, এরকম বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক পরিবেশে জনগণের আস্থা টিকিয়ে রাখা কঠিন। গণতন্ত্র যেন আবারও কাগজে-কলমে বন্দি হয়ে না পড়ে, সেই আশঙ্কা অনেকেই প্রকাশ করছেন।

 

উপসংহার
১৪৭টি নিবন্ধনপ্রত্যাশী দল গণতন্ত্রের বহুমাত্রিকতার নিদর্শন হতে পারতো, যদি এর পেছনে স্বচ্ছতা ও সত্যিকারের জনপ্রিয়তা থাঅতো। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এটিকে রাজনৈতিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অংশ বলেই মনে হচ্ছে। আগামী দিনগুলোয় এই দলগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক চেতনা ও জনসচেতনতায়।


পরবর্তী পর্ব আসছে:
“আওয়ামী লীগ ও বিএনপি–উত্তর রাজনীতি: নতুন নেতৃত্বের খোঁজে বাংলাদেশ”

Post a Comment

Previous Post Next Post