বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি সিরিজের চতুর্থ পর্ব। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরবর্তী নেতৃত্ব সংকটে বাংলাদেশ নতুন রাজনৈতিক বিকল্প খুঁজছে। বিশ্লেষণ থাকছে এই পর্বে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত তিন দশক ধরে দুই প্রধান শক্তি—আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে, জনগণের আস্থা,
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিলিয়ে আজ এই দুই দলই সংকটের মুখে।
নতুন প্রজন্মের অনেকেই প্রশ্ন তুলছে: এই দুই দল ছাড়া কি রাজনীতি সম্ভব? যদি হ্যাঁ হয়, তবে সেই নেতৃত্ব কে দেবে? কোথা থেকে
আসবে নতুন নেতৃত্ব? এই লেখায় আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করব ‘আওয়ামী
লীগ–বিএনপি–উত্তর রাজনীতি’র সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি (পর্ব-৩)
দুই প্রধান দলের বর্তমান অবস্থা
আওয়ামী লীগ: দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি গড়েছে, কিন্তু বর্তমানে
জনআস্থা ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির চ্যালেঞ্জে পড়েছে। শেখ হাসিনার অবর্তমানে নেতৃত্ব
নিয়ে প্রশ্ন জোরালো।
বিএনপি: নেতৃত্ব সংকট, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং ধারাবাহিক আন্দোলনে ব্যর্থতার
কারণে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। খালেদা জিয়া কার্যত অক্ষম, তারেক রহমান প্রবাসে—দলীয়
দিকনির্দেশনায় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
নতুন নেতৃত্ব আসবে কোথা থেকে?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন তিনটি সম্ভাব্য উৎসে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠতে
পারে:
নতুন রাজনৈতিক দল বা জোট: নাগরিক সমাজ, তরুণ নেতৃত্ব, সাবেক আমলাতন্ত্র,
এমনকি কিছু ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠী—সবাই এখন বিকল্প তৈরির চেষ্টা করছে। তবে
গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে তাদেরকে জনপ্রিয়, নীতিগতভাবে শক্ত ও গণমুখী হতে হবে।
সাবেক রাজনৈতিক নেতাদের পুনরুত্থান: কিছু এলিট/নতুন প্রজন্মের নেতারা আগের দলের ছায়া
থেকে বেরিয়ে স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম গড়তে পারেন।
রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য থেকে উদয়: অস্থায়ী সরকার বা সামরিকপন্থী নিরপেক্ষ নেতৃত্বও
একপ্রকার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে, যদি রাজনৈতিক শূন্যতা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
নেতৃত্বের মানদণ্ড কী হওয়া উচিত?
নতুন নেতৃত্বের জন্য শুধু জনপ্রিয়তা যথেষ্ট নয়। লাগবে –
- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ,
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি একনিষ্ঠতা
- নীতিনিষ্ঠতা ও
দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তি
- গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস
- আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা
- দুর্বল দলগুলোকে একত্রিত করে
প্ল্যাটফর্ম গঠনের ক্ষমতা
জনগণের মনোভাব ও ভবিষ্যৎ চাওয়া
একটি বড় অংশের তরুণ এখন “Not AL, Not BNP” মনোভাব পোষণ করে। তারা চায়
একটি নতুন ধারা, যেখানে রাজনীতি মানে হবে রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা ও
জবাবদিহিতা—not শুধুই ক্ষমতা দখলের খেলা।
উপসংহার
আভ্যন্তরিণ পারিপার্শিকতা ও দেশি-বিদেশি ভূ-রাজনীতির চাল যদি অনুকূলে না আসে, আওয়ামী
লীগ ও বিএনপির যুগ একরকম অবসানের পথে। কিন্তু শূন্যস্থান পূরণ না হলে রাজনীতিতে
অরাজকতা বা নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের ঝুঁকি তৈরি হবে। তাই প্রয়োজন সচেতন, সংগঠিত ও গ্রহণযোগ্য বিকল্প নেতৃত্বের। ইতিহাস বলে, শূন্যতা কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়
না—প্রশ্ন হলো, তা কে পূরণ করবে এবং কোন পথে?
পরবর্তী পর্ব আসছে:
“আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক কৌশল: বাংলাদেশ রাজনীতিতে বৈদেশিক প্রভাব”
Post a Comment